ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণ বিতরণের সময় ক্ষুধার্ত শতাধিক মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ১৩০ জন নিহত হয়েছেন।
উপত্যকাটির সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, পাশাপাশি এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরা।
জিএইচএফ নামক সংগঠনটি ইসরায়েল সমর্থিত একটি প্রতিষ্ঠান, যা মে মাসের শেষের দিকে গাজায় ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। তবে তাদের ত্রাণ গ্রহণ করতে গিয়ে স্থানীয় ক্ষুধার্ত ও দুর্ভিক্ষগ্রস্ত মানুষদের ওপর গুলি চালানো হয়। ত্রাণ বিতরণের স্থানগুলোতে সংঘটিত এই হামলায় প্রাণ হারানোদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, জিএইচএফ কখনো মানবতার পক্ষে ছিল না। বরং এটি বেসামরিক জনগণের ওপর চাপ, অনাহার এবং হত্যার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারা বিশ্ববাসীকে এই সংগঠনের মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর কর্মকাণ্ড থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।
এছাড়া, তারা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজার মানুষদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য জোর দাবি তুলেছে।
অন্যদিকে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার জন্য ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহে নিয়োজিত ফিলিস্তিনি-সমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) খাদ্যবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ ইসরায়েলি নৌবাহিনী দ্বারা আটকানো হয়েছে। জাহাজটির ১২ জন ক্রু সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ দেশে নিয়ে গেছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং ফ্রান্সের পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসানও রয়েছেন।
রিমা হাসান এক্স (টুইটার)-এ এক পোস্টে জানিয়েছেন, রোববার (০৮ জুন) স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি নৌবাহিনী তাদের আটক করে। পরে জাহাজ এবং ক্রুদের ইসরায়েলের উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা নিরাপদে তাদের হেফাজতে আছেন এবং তাদেরকে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এই ঘটনা ‘নাটক’ এবং পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গাজার সাধারণ জনগণের ওপর চলমান এই সহিংসতা এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ ও মানবিক সাহায্য আটকে রাখার ঘটনাগুলো সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মত বিশ্লেষকদের।
মন্তব্য করুন