দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মাত্র দুই সপ্তাহ পর সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে পাকিস্তানি এক নাগরিককে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। খবর এএফপি।
শনিবার (২৪ মে) বিএসএফের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার (২৩ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ভারতের গুজরাট রাজ্যের বানাসকাঁঠা জেলার সীমান্ত এলাকায় এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কাঁটাতারের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়।
দায়িত্বরত বিএসএফ সদস্যরা তাকে বারবার সতর্ক করেন এবং থামতে বলেন। কিন্তু নির্দেশ উপেক্ষা করে তিনি ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েন। পরে বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হন এবং ঘটনাস্থলেই ওই ব্যক্তি মারা যান।
ঘটনার পর বিএসএফ নিহত ব্যক্তির একটি ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায়- এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। তার মাথার চুল আংশিকভাবে সাদা হয়ে আছে।
বিএসএফ দাবি করেছে, সীমান্তে দায়িত্বরত সেনারা দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং তাদের নির্দেশ অমান্য করায় তারা গুলি ছোড়েন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, বিএসএফ এই ঘটনাকে ‘অনুপ্রবেশ রোধের বৈধ প্রতিরক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এই হত্যাকাণ্ড এমন এক সময়ে ঘটল, যখন চলতি মাসের শুরুতে সংঘটিত ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষের রেশ এখনো কাটেনি। সেই সংঘর্ষে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবর্ষণে দুই দেশের মধ্যে অন্তত ৭০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই হিন্দু পর্যটক ছিলেন। এই হামলার জন্য পাকিস্তানের ওপর দায় চাপায় ভারত।
এর জবাবে নয়াদিল্লি ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদ পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেয়। এতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, স্থল সীমান্ত এবং ভিসা কার্যক্রমও স্থগিত হয়ে যায়।
পাকিস্তান হামলার দায় অস্বীকার করলেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং দুই দেশ কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র সামরিক উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
কিন্তু সীমান্তে সর্বশেষ এই গুলিবর্ষণের ঘটনায় যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সামান্য উসকানিতেও আবার বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে পরমাণু শক্তিধর এ দুই দেশ।
মন্তব্য করুন