কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
মধ্যপ্রাচ্যকে অঙ্গীকার

যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো দেশের রাষ্ট্রগঠনে নাক গলাবে না : ট্রাম্প

মধ্যপ্রাচ্য সফরে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্য সফরে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের এক জমকালো বলরুমে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে আর কোনো দেশের রাষ্ট্রগঠনে হস্তক্ষেপ করবে না।

তিনি বলেন, বিশ্বকে ‘কীভাবে জীবনযাপন করতে হবে’ তা শেখানোও যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়। তার এই ঘোষণায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের গণ্যমান্য অতিথিরা করতালিতে ফেটে পড়েন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৩ মে) রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে দেওয়া এ ভাষণে ট্রাম্প কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির বিপরীতে অবস্থান নেন। মরক্কো থেকে ওমান পর্যন্ত বহু আলোচিত এ বার্তা মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ ও প্রত্যাশার প্রতিধ্বনি বলেই বিবেচিত হচ্ছে।

ট্রাম্প বলেন, যারা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছেন, তারা অনেক ক্ষেত্রেই দেশ গড়ার চেয়ে বেশি দেশ ধ্বংস করেছেন। তারা এমন সমাজে হস্তক্ষেপ করেছেন, যেগুলো তারা বুঝতেই পারেননি। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের জনগণকে আহ্বান জানান নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করতে।

এই বক্তব্যের পটভূমিতে রয়েছে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক আগ্রাসন, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং ইয়েমেনের চলমান যুদ্ধ। ট্রাম্পের ভাষণের পর এসব প্রসঙ্গ নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

সৌদি শিক্ষাবিদ সুলতান আলআমের বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য যেন ঔপনিবেশিকবিরোধী চিন্তাবিদ ফ্রাঞ্জ ফাঁনোর লেখার প্রতিধ্বনি। সিরিয়ার ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণায় দেশটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়- কেউ কেউ উল্লাস প্রকাশ করে, কেউবা ট্রাম্পের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে।

ইয়েমেনের রাজধানী সানার এক রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ট্রাম্প কে? তিনি কাকে ক্ষমা করবেন, কোন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবেন- এসব ঠিক করার তিনি কে?” এরপর নিজেই যোগ করেন, তবে দুনিয়াটা এভাবেই চলে।

চার দিনের উপসাগরীয় সফরের শুরুতেই এ ভাষণ দেন ট্রাম্প। সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ব্যবসায়িক আলোচনা এবং প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি উঠে এসেছে আলোচনায়।

তবে ভাষণে কূটনৈতিক বার্তাও ছিল সুস্পষ্ট। ট্রাম্প সৌদি আরবকে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান, যদিও সৌদি কর্মকর্তারা জানান, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া তারা এমন পদক্ষেপ বিবেচনায় নেবেন না।

ট্রাম্প বলেন, তিনি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে আগ্রহী এবং ‘চিরশত্রু’ শব্দে বিশ্বাস করেন না। সফরের এক পর্যায়ে তিনি সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই ছবি মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।

ট্রাম্পের তুলনায় বাইডেন প্রশাসনের মন্থর ও মানবাধিকারমুখী কূটনীতি এখানে ভিন্নভাবে প্রতিভাত হয়েছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে ট্রাম্প তাকে ‘অসাধারণ একজন মানুষ’ বলে আখ্যায়িত করেন।

তবে সমালোচনার কথাও উঠে এসেছে। সৌদি আরবে বন্দি একজন আলেমের ছেলে আবদুল্লাহ আলাওধ বলেন, যখন ট্রাম্প বলছিলেন ‘মধ্যপ্রাচ্য গড়েছে এখানকার মানুষ’, তখন তার চারপাশে ছিল বিদেশি ধনকুবের আর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক স্বৈরশাসক- তাতে তার বক্তব্যকে বিদ্রুপ মনে হয়েছে।

রিয়াদের ভাষণ শেষে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান একে ‘অংশীদারত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের দৃষ্টিভঙ্গি’ বলে আখ্যা দেন।

নিউ লাইনস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো আলআমের বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্যে কিছু বিষয় উঠে এসেছে যা সাধারণত বামপন্থি ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চিন্তাবিদদের আলোচনায় দেখা যায়। নতুন রক্ষণশীল জনতাবাদী আন্দোলনগুলো সেসব দৃষ্টিভঙ্গিকে ব্যবহার করছে নিজের মতো করে।

প্রখ্যাত মিসরীয় মানবাধিকার আইনজীবী নেগাদ আল-বোরাই বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য নতুন কিছু নয়, বরং যা মার্কিন প্রশাসন বহুদিন ধরেই করে আসছে- শুধু এবার তা সরাসরি ও খোলাখুলি বলা হয়েছে।

সূত্র : দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সময়ের ভুল মূল্যায়নেই কি হাতছাড়া হলো বাংলাদেশের জয়?

ইরানের পক্ষে লন্ডনে বিশাল বিক্ষোভ

‘জোর যার মুল্লুক তার’ এ রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে : হান্নান মাসুদ

লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজে হামলার হুমকি

নির্বাচনের দিকে পুরোদমে হাঁটছে ইসি, নিচ্ছে যেসব প্রস্তুতি

চাঁদাবাজির সময় তাঁতি দল নেতাকে গণপিটুনি

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের আরও এক পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

ইরানের ভাঙন চেয়েছিল ইসরায়েল, উল্টো জুড়ে যাচ্ছে

এবার আল আকসায় হামলার পরিকল্পনা ইসরায়েলের?

খালেদা জিয়া সর্বপ্রথম সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন : আসাদুজ্জামান রিপন

১০

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের বিবৃতি

১১

ঢাকা কলেজ এইচএসসি- ’৯৬ ব্যাচের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন

১২

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

১৩

ম্যাথুজের মতো সম্মানের সঙ্গে বিদায় চান শান্ত

১৪

৩১ দফা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির সনদ : এস এম জিলানী

১৫

পেসাররা আরেকটু ভালো করতে পারত : শান্ত

১৬

রাজশাহীতে সিসিএসের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা

১৭

আমি আশ্বাস দিতে আসিনি, কাজ করতে এসেছি : চসিক মেয়র

১৮

খিলক্ষেতে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীরের লিফলেট বিতরণ

১৯

পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় আসকের উদ্বেগ

২০
X