মার্কিন সাবেক কূটনীতিক পিটার হাস জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রমাণ হিসেবে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের একটি নথি অনলাইনে প্রচার করা হয়। অভিযোগ করা হয়, নতুন দলটির সঙ্গে গত ৫ আগস্ট বৈঠক করেছেন পিটার হাস এবং তিনি ওই দিন বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
পিটার হাস ঢাকায় এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন, এমন অভিযোগও ওঠে রাজনৈতিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে তিনি গত ৫ আগস্ট ওয়াশিংটনে ছিলেন বলে জানান ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এএফপি একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানানো হয়।
গুজব ছড়াতে তৈরি করা হয় ভিআইপি লাউঞ্জের ভুয়া কাগজ
শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দোলনচাঁপা ব্যবহারকারী যাত্রীদের একটি ভুয়া তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত ৬ আগস্ট প্রথম ছড়ানো হয়। কথিত এই তালিকায় ৫ আগস্ট তারিখ তুলে ধরা হয়।
সেখানে লেখা আছে পিটার হাসের নাম। এ ছাড়া কোন ফ্লাইটে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন, সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
পিটার হাস ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ৫ আগস্ট পিটার হাস বাংলাদেশ ছেড়েছেন, এমন দাবি করে মো. শহীদ উদ্দিন খান (Md Shahid Uddin Khan) নামে একটি প্রোফাইল থেকে বাংলা ভাষায় লেখা হয়, ‘পিটার হাস আজ ০৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা ১৯:১০ মিনিটের সময় এমিরেটস ইকে ৫৮৩ ফ্লাইটে করে যাত্রা করার পূর্বে বাংলাদেশেই ছিল। অথচ এনসিপি বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছে যে, পিটার হাস আমেরিকায় আছে; কি চরম মিথ্যাচার ও ভয়ংকর অবস্থা আমাদের গণমাধ্যমের, ছি!!।”
এ ঘটনায় একটি টিভি চ্যানেলে প্রথম দাবি করা হয়, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে পিটার হাসের সঙ্গে কক্সবাজারে দেখা করতে গেছেন এনসিপির নেতারা। এরপর ফেসবুক এবং এক্সের আরও অনেক অ্যাকাউন্টে একই রকম দাবি করা হয়।
এনসিপির নেতাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে পিটার হাসের সঙ্গে কথিত বৈঠক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার কথাও বলেছেন অনেকে।
কিন্তু পিটার হাস ওই সময় ওয়াশিংটনে ছিলেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা ফেসবুকে এক বিবৃতি দিয়ে ৫ আগস্ট জানান, পিটার হাস ওয়াশিংটনে রয়েছেন।
পিটার হাস বর্তমানে এক্সালারেট এনার্জি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের এপ্রিলের পর একবারের জন্যও বাংলাদেশে যাননি পিটার।
এদিকে এনসিপি বিভিন্ন জাতীয় সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছে যে পিটার হাস যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। এটি এমন চরম মিথ্যাচার, যা আমাদের গণমাধ্যমের ভয়াবহ অবস্থাকে প্রতিফলিত করে।
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বাংলা সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের যে কথা বলা হচ্ছে সেটি গুজব এবং ভিত্তিহীন।
ভুয়া যাত্রী তালিকা
শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ এএফপিকে বলেছেন, যে ভিআইপি যাত্রীদের তালিকা ছড়ানো হয়েছে এটি ‘সম্পূর্ণ ভুয়া’। কাগজটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এটি জাল ও নকল।
যে বা যারা এটি বানিয়েছে, তারা কাগজের শুরুতেই ভুল লিখেছে। তারা অফিসিয়াল নাম ‘বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের’ জায়গায় লিখেছে ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ’। অর্থাৎ ‘বেসামরিকের’ জায়গায় লিখেছে ‘বেসরকারি’।
কাগজে শাহরিয়ার চৌধুরী নামে একজনের নাম দেওয়া হয়েছে। যাকে উল্লেখ করা হয়েছে বিমানবন্দরের সহকারী পরিচালক হিসেবে। কিন্তু বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের তালিকায় এমন কারও নামই নেই।
এ ছাড়া ওই কাগজে বলা হয় এমিরেটসের ফ্লাইট ৫৮৩ গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে গেছে। কিন্তু ওই দিন এই ফ্লাইট সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করে।
এ ছাড়া অন্য যেসব ফ্লাইটের তথ্য ছিল, সেগুলোতেও ভুল পাওয়া গেছে। এমনকি এতে উল্লিখিত যাত্রীদের নামের বানান ভুল করা হয়েছে। পদবিতেও উল্লেখ করা হয়েছে ভুল তথ্য।
উদাহরণ হিসেবে, ওই যাত্রীর তালিকায় মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী নামে একজনকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ২০২২ সালের ২২ মে তাকে আরেক মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়।
সূত্র : এএফপি ফ্যাক্টচেক
মন্তব্য করুন