নূর হোসেন মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ এএম
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্পে টানাপোড়েন

উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা
রড ও সিমেন্ট। ছবি : সংগৃহীত
রড ও সিমেন্ট। ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র আন্দোলন, কারফিউ, সরকার পতনের প্রভাবে সরকারি সব প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্যা। এখনো পানিতে ডুবন্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ইস্পাত ও সিমেন্টের দোকানপাট। অনেক প্রতিষ্ঠান খুললেও নষ্ট হয়ে গেছে মজুত পণ্য। সার্বিক পরিস্থিতিতে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে দেশের ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্পে। ইস্পাত পণ্য ও সিমেন্টের চাহিদা কমেছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। কমবেশি সব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কমার হার ৫০ শতাংশের ঘরে। বিক্রি বন্ধ থাকায় টান পড়েছে মূলধনে। এ অবস্থায় ব্যবসা নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দরকার সরকারের সহযোগিতা।

ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৪০টি কারখানা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বর্তমানে ইস্পাতের স্থানীয় চাহিদার ৫৩ শতাংশ পূরণ করছে চট্টগ্রামের চার কারখানা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম), আবুল খায়ের স্টিল (একেএস), জিপিএইচ ইস্পাত ও কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম)।

মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড কনসালটিং প্ল্যাটফর্ম বিগমিন্টের তথ্য অনুসারে, বিএসআরএম দেশের চাহিদার প্রায় ২৫, একেএস ১৪, জিপিএইচ ৮ ও কেএসআরএম ৬ শতাংশ পূরণ করে। বর্তমানে দেশে ইস্পাতের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৮৫ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৯০ লাখ টন। বিএসআরএমের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৪ লাখ টন। একেএস ১৫ লাখ এবং জিপিএইচ ও কেএসআরএম বছরে প্রায় ৮ লাখ টন করে ইস্পাত উৎপাদনে সক্ষম।

বিএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত কালবেলাকে বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন, সরকারের পতন থেকে ভয়াবহ বন্যা—এসবই মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে দেশের ইস্পাত শিল্পে। বর্তমানে ইস্পাত পণ্যের চাহিদা নেমেছে অর্ধেকে। এ প্রেক্ষাপট নিয়ে আমরা চিন্তিত। চাহিদা না থাকায় উৎপাদন বাধ্যতামূলকভাবে ৫০ শতাংশ কমাতে হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম, সুদহার, ঋণপত্রের কমিশন, ঋণপত্রের মার্জিন, মূসক, করসহ অন্যান্য মাশুল বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার চলতি মূলধনে ঘাটতি প্রকট হয়েছে। অফিস, কারখানা ব্যবস্থাপনা খরচ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের সহযোগিতা চায় দেশে ইস্পাত খাতের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, এ সংকট কাটাতে সরকারের সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য।

মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক সরওয়ার আলম কালবেলাকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি বন্যা আমাদের গোল্ডেন ইস্পাত এবং এইচএম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রভাব ফেলেছে। বন্যার কারণে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট খোলা যাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে আমাদের বিক্রির লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। এক থেকে দেড় মাসে ইস্পাত খাতের চাহিদা ৬০-৭০ শতাংশ কমেছে। ফলে আগে যারা তিন শিফটে উৎপাদন করত, এখন তারা দুই বা এক শিফটে প্রতিষ্ঠান চালাতেও হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের নির্ধারিত ব্যয় বহন করা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। যাদের ব্যাংক ঋণ আছে, তারা তা পরিশোধ করা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকারের যে প্রকল্পগুলো ছিল, সেখানে ঠিকাদাররা এখনো কাজ শুরু করেনি। এগুলো পুরোদমে শুরু হলে বেচাবিক্রি ফের শুরু হবে বলে আশা করছি।

বিএসএমএর সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে ডলারপ্রতি ৮৫ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে ১২৫ টাকা দিতে হয়। এতে কোম্পানিগুলোর ঋণপত্রের সীমা দেশি মুদ্রায় ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম, সুদহার, মূসক, করসহ অন্যান্য মাশুল বেড়ে যাওয়ায় চলতি মূলধনে ঘাটতি প্রকট হচ্ছে। এ খাত রক্ষা করতে অবিলম্বে সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হবেন।

সিমেন্ট খাতেরও একই অবস্থা। প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আমিরুল হক কালবেলাকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। চাহিদা না থাকায় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই উৎপাদন কমে গেছে। তিন মাস ধরে ব্যবসা হচ্ছে না। ব্যবসার গতি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এ খাতের বিনিয়োগকারীরা এখন ব্যাংক ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন। নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রেই ভাবতে হচ্ছে বিকল্প কিছু। এ অবস্থায় ভালো কোম্পানিগুলোরও এখন ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ৬ সেপ্টেম্বর

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

১০

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

১১

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

১২

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

১৩

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

১৪

ডাকসু নির্বাচনে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন

১৫

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

১৬

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

১৭

শুনানিতে বিএনপি-এনসিপির মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি

১৮

পাঁচ মাসে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেল বিডা

১৯

নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে : চরমোনাই পীর

২০
X