মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে চীন ও কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা করেছে। সব মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক এবং কিছু বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এদিকে সব ধরনের মার্কিন যানবাহনের ওপর ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য তিনি নিজে নিশ্চিত করেছেন। এসব পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তির বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং জানিয়েছে, আগামী ১০ এপ্রিল থেকে মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ কার্যকর করা হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর রাতারাতি চীনের নতুন ঘোষণা এলো। এই ৫৪ শতাংশ শুল্কের মধ্যে পূর্ববর্তী শুল্কও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, চীনা কাস্টমস শস্য রপ্তানিকারক সিঅ্যান্ডডি (ইউএসএ) ইনকরপোরেটেড থেকে আমদানির ওপর তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ জারি করায় কৃষি বাণিজ্য আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে তিনটি মার্কিন কোম্পানি থেকে পোলট্রি এবং হাড়ের মাংস আমদানিও স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রে সামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, লুটেটিয়াম, স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়ামসহ মাঝারি ও ভারী বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আইন অনুসারে প্রাসঙ্গিক পণ্যের ওপর চীন সরকারের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলো জাতীয় নিরাপত্তা এবং স্বার্থকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করা এবং পরমাণু বিস্তার রোধের মতো আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করা। চীন বলেছে, মার্কিন শুল্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় বেইজিং এ পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলার মধ্যেই সব ধরনের মার্কিন যানবাহনের ওপর ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য তিনি নিজে নিশ্চিত করেছেন।
এক্সবার্তায় কার্নি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমাদের অটোমোবাইল খাতে ২৫ শতাশ রপ্তানি শুল্ক জারি করেছেন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে কানাডার সরকার। এই শুল্ক থেকে প্রাপ্ত অর্থ পুরোটাই কানাডার অটোমোবাইল শিল্প ও এ খাতের কর্মীদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।’ প্রসঙ্গত, কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি রয়েছে।
চুক্তিটির নাম কানাডা-ইউনাইটেড স্টেটস-মেক্সিকো এগ্রিমেন্ট (সিইউএসএমএ-কুসমা)। এই চুক্তির আওতায় বার্ষিক হিসেবে বিভিন্ন মার্কিন ও মেক্সিকান পণ্যে কোটা অনুসারে শুল্কছাড় দেয় কানাডা। বৃহস্পতিবারের এক্সবার্তায় কার্নি বলেন, এখন থেকে যানবাহনের ক্ষেত্রে মেক্সিকো কোটা অনুযায়ী শুল্কছাড় পেলেও যুক্তরাষ্ট্র তা পাবে না। অর্থাৎ এখন কুসমার কোটা ও কোটার বাইরে যত মার্কিন যানবাহন কানাডার ভূখণ্ডে ঢুকবে, প্রতিটি থেকে ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক কেটে রাখবে দেশটির সরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের যানবাহনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক জারি করলেও গাড়ির যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের ওপর কর আরোপ করেনি কানাডা। এ প্রসঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার কানাডার অটোমোবাইল শিল্পকে আরও বড় ও বহুজাতিক করে তুলতে চায় এবং এক্ষেত্রে কাঁচামালের সরবরাহ প্রবাহে কোনো ধরনের বাধা আরোপ করতে সরকার আগ্রহী নয়।
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে—এমন প্রায় সব দেশের ওপর সবধরনের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক জারি করেছেন ট্রাম্প। কানাডার যানবাহনের ওপর ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক জারি করেছেন তিনি। এর আগে গত ৪ মার্চ কানাডীর বিদ্যুৎ ও পটাশের ওপর ১০ শতাংশ ও ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম ছাড়া বাদবাকি সব কানাডীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তিনি। পরে ১২ মার্চ কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপরও ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক জারি করেন ট্রাম্প। সূত্র: এএনআই।
মন্তব্য করুন