

রাশিয়ার অর্থনীতি বর্তমানে নানামুখী সংকটের মধ্যে আছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, বাজেট ঘাটতি বড় হয়েছে এবং তেল ও গ্যাস থেকে রাজস্ব কমছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সামরিক খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও এর বড় কারণ। তবুও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অর্থনৈতিক চাপ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শিগগির ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য আলোচনার টেবিলে আনবে না। বিশ্লেষকদের ধারণা, বর্তমান যুদ্ধের গতি ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মস্কো আরও কয়েক বছর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক সিএসআইএসের গবেষক মারিয়া স্নেগোভায়া বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতি খারাপ হলেও ভেঙে পড়ার মতো নয়। তার মতে, আগামী ৩ থেকে ৫ বছর রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে। অনেক রুশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে রাশিয়ার যুদ্ধ চালানোর পথে তেমন বড় কোনো বাধা নেই।
যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরইউএসআইর গবেষক রিচার্ড কনোলি বলেন, যতদিন রাশিয়া তেল উত্তোলন করতে পারছে এবং মোটামুটি দামে বিক্রি করতে পারছে, ততদিন দেশটি কোনোমতে চলতে পারবে। অর্থনীতি পুতিনের যুদ্ধ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না।
সাধারণ মানুষের ওপর চাপ: যুদ্ধের শুরুতে সামরিক খরচের কারণে অর্থনীতি কিছুটা চাপে পড়েছিল। এখন সেই প্রভাব কমে এসেছে। সরকার যুদ্ধের খরচ মেটাতে কর বাড়িয়েছে—করপোরেট কর, আয়কর ও ভ্যাট বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি পণ্যের দামও বেড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ায় মানুষ অনেক আগে থেকেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে অভ্যস্ত। তাই এতে বড় ধরনের জনঅসন্তোষ তৈরি হচ্ছে না। আইএমএফ বলছে, এ বছর রাশিয়ায় গড় মূল্যস্ফীতি হবে প্রায় ৭.৬ শতাংশ।
যুদ্ধের মুনাফাভোগী শ্রেণি: রাশিয়ার বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ এখন সামরিক খাতে যাচ্ছে। এতে অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও কারখানার শ্রমিকরা লাভবান হয়েছেন। কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্য কমেছে।
গ্রাম ও দরিদ্র অঞ্চলগুলোতেও অর্থনৈতিক উন্নতি দেখা গেছে, কারণ সেনাদের বেতন খুব বেশি। বর্তমানে রুশ সেনারা ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি বেতন পাচ্ছেন। নিহত বা আহত সেনাদের পরিবারকেও সরকার বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। এ কারণে প্রায় ১০ লাখ হতাহতের (এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার নিহত) পরও বড় ধরনের বিক্ষোভ দেখা যায়নি।
পুতিন কেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান: বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধ শেষ হলে বিপুলসংখ্যক সাবেক সেনা সমাজে ফিরবেন—যাদের অনেকের চাকরি নেই এবং চিকিৎসা খরচ বেশি। তাই দেশের ভেতরের পরিস্থিতির কথা ভেবেও পুতিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আগ্রহী।
ভবিষ্যতের ঝুঁকি: দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। রাশিয়া তার জাতীয় সম্পদ তহবিল থেকে অনেক টাকা খরচ করে ফেলেছে। এ তহবিলের সহজে নগদ করা যায় এমন সম্পদ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় ৫৭ শতাংশ কমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ তহবিল আরও কমে গেলে সামরিক খরচ ধরে রাখতে সরকারকে সামাজিক খাতে কাটছাঁট করতে হতে পারে, যা সাধারণ মানুষ স্পষ্টভাবে টের পাবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বড় তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতে তেল রপ্তানি ঘুরপথে করতে হচ্ছে, যার খরচ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোরভাবে কার্যকর করা হয় এবং ভারত ও চীনের মতো দেশগুলো রাশিয়ার তেল কেনা কমায়, তাহলে ভবিষ্যতে পুতিন সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন।
মন্তব্য করুন