

সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীর কবলে আলমগীর শেখ নামের এক প্রবাসী। গাজীপুরের ব্যস্ত চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে তাকে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে সঙ্গে থাকা সব অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাটি এলাকায় চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ভুক্তভোগী আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানাধীন আসাহার গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আতাব উদ্দিন ও জামিলা খাতুনের ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন সৌদি আরবের জেদ্দায় কর্মরত থাকার পর সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। এরপর সেখান থেকে মাইক্রোবাসযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যাত্রাপথে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্র কৌশলে তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অচেতন করে ফেলে। গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছালে তাকে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে সঙ্গে থাকা লাগেজ, নগদ টাকা, সৌদি রিয়াল, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন লুট করে পালিয়ে যায় তারা।
দুপুরের দিকে পথচারীরা মহাসড়কের পাশে একজন মানুষকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসেন। স্থানীয় জনতা তাকে বসিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন এবং কথা শোনার চেষ্টা করেন। এ সময় তার কাছে কেবল একটি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। সেখান থেকে পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। খবর পেয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর স্বজনরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তখনও তিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছিলেন না।
পথযাত্রী মাওলানা ইসমাইল হোসেন জানান, ওই প্রবাসী ভাইকে দেখে মনে হচ্ছিল তাকে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছে। তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না। পরে জ্ঞান ফিরে এলে তিনি জানান, বিমানবন্দর থেকে ওঠা মাইক্রোবাসেই তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মাইক্রোবাসে করে ত্রিশাল অভিমুখে রওনা দেওয়ার পর দীর্ঘ সময় তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যেই অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, তাদের প্রবাসী স্বজন গাজীপুর চৌরাস্তায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন।
একজন প্রবাসীর দীর্ঘদিনের কষ্টার্জিত অর্থ ও জীবনের সঞ্চয় দেশে ফেরার পথে এভাবে লুট হয়ে যাওয়াকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরা প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরেই ছিনতাইকারীদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। অথচ কার্যকর নজরদারি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনও জোরদার হয়নি।
এ বিষয়ে বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ কালবেলাকে বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ভুক্তভোগীকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই তার স্বজনরা নিয়ে গেছেন। তদন্ত শেষে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
স্থানীয়রা অবিলম্বে ছিনতাইকারীচক্র শনাক্ত করে গ্রেপ্তার, পাশাপাশি বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরত যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন