

খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির নেতা মোতালেব শিকদার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টায় নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। মাদক ও নারীঘটিত ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বেড়িয়ে আসছে মাদক ও নারীসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোসা, বিদেশি মদ ও ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ঘটনার পর থেকে আহত মোতালেব ও তার পরিবার দাবি করে আসছিল খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায় গাজী মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে। এমন কথাও প্রচার করা হয় হাদিকে যেভাবে মাথায় গুলি করা হয়েছে তাকেও এভাবে মাথায় গুলি করা হয়েছে। তবে আহত অবস্থায় মোতালেবকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানে প্রাথমিক সিটিস্ক্যানে মাথার ভেতরে গুলি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। মাথার বাম পাশের চামড়া ভেদ করে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আক্তারুজ্জামান।
এদিকে গুলির ঘটনাস্থল হিসাবে যেখানের কথা বলা হয়েছে সেখানে দোকানদার বা পথচারীদের জিজ্ঞাসা করলে কেউ গুলির কোনো শব্দ বা কাউকে আহত হতে দেখেনি বলে জানায়। তবে গুলির ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাশ্ববর্তী লাজ ফার্মার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় এনসিপি নেতা পাশের আল আকসা মসজিদ গলি থেকে বের হয়। একই সিসিটিভি ক্যামেরায় রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাত ১২টায় একটি প্রাইভেটকারে আরও দুজনসহ তাকে ওই গলিতে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
পরে রাস্তায় পড়ে থাকা রক্ত দেখে পুলিশ গলির ১০৯ নম্বর ভবন মুক্তা হাউসে প্রবেশ করে সেখান থেকে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করে। একইসঙ্গে ওই বাড়ি থেকে বিদেশি মদ, মদের একাধিক বোতল, ইয়াবা ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
চিহ্নিত হওয়া বাড়ির মালিক আশরাফুন্নাহার কালবেলাকে বলেন, ২ মাস আগে এনজিও কর্মী পরিচয়ে তন্বী নামে এক নারী ওই বাড়ির নিচ তলার ফ্লাটটি ভাড়া নেয়। চারতলা বাড়ির উপরের তিনটি ফ্লোরেই মেস হিসাবে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ভাড়া থাকে। মালিক না থাকায় সেভাবে তন্বীর সঙ্গে কথা হতো না বাড়িওয়ালা আশরাফুন্নাহারের।
তবে প্রতিদিন বহিরাগতরা এসে মাদক ও নারী সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ এলে তন্বিকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছিলেন তিনি। ওই বাড়িতে যেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফ্লোরে রক্ত দুইটি কক্ষেই বিপুল মাদক সেবনের সরঞ্জাম, বিদেশি মদ, বেশ কয়েকটি মদের বোতল, ইয়াবা উদ্ধার করে। সিআইডি, পিবিআই, গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে জানার পর আমরা ঘটনাস্থল খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু সেখানে খুঁজে না পেয়ে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখতে পাই ভিকটিম ও তার দুই সহযোগী সাত সাড়ে ১২টার দিকে এই জায়গায় এসেছিলেন। পরে আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি সকালে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আল আকসা মসজিদ গলির ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পাই বিভিন্ন জায়গায় রক্তের দাগ, বিদেশি মদ ও ইয়াবা ক্ষার সরঞ্জাম। ঘটনাস্থল থেকে আমরা একটি গলির খোসাও উদ্ধার করি। এরপর আমরা নিশ্চিত হই যে ঘটনাটি ঘরের ভেতরে ঘটেছে। এ সময় যারা ঘরের ভেতরে ছিল তাদের অন্তঃকোন্দলের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর নিশ্চিতভাবে বলা যাবে কারা এটা ঘটিয়েছে।’
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর এনসিপির সংগঠক রাহাত হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়েছি, এটা কোনো সাংগঠিনক বিষয় না। তিনি যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত। শুনেছি সেখানে অনেক ধরনের মাদক ও নারী সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আমি বলতে চাই এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত। সংগঠন এই দায়ভার নেবে না।’
উল্লেখ্য, এনসিপি নেতা মোতালেব শিকদার পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার ও সক্রীয় যুবলীগ কর্মী ছিলেন। ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ২০২২ সালে কার্যনির্বাহী সদস্য ও খুলনার প্রভাবশালী মটর শ্রমিক নেতা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর জাকির হোসেন বিপ্লবের ঘনিষ্ট এবং শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের অনুসারী ছিল।
গত ৫ আগস্টের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে ফিরে এসে স্থানীয় এনসিপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এনসিপি সংগঠক ওয়াহেদুজ্জামান অনিকের মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে দেখা করে যোগ দেন এনসিপিতে। মটর শ্রমিক নেতা হওয়ায় দায়িত্ব পান জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়কর। তবে সম্প্রতি এতিমদের শীত বস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করার জন্য নিজের নামে কার্ড ছাপিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে চাদাঁবাজির অভিযোগ রয়েছে মোতালেবের বিরুদ্ধে।
মন্তব্য করুন