

ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পোশাক কারখানার কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে (২৭) পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহে আগুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১২ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শাহাদাত হোসেন তাদের প্রত্যেককে তিন দিন করে পুলিশি রিমান্ডে নেওয়ার এ আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক শেখ মোস্তাছিনুর রহমান কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, নিহত দিপুর বাড়িতে এখনো থামেনি শোকের মাতম। স্বামী হারানোর শোকে দিপুর স্ত্রী ও সন্তান হারানোর বেদনায় মা-বাবাসহ পুরো পরিবার শোকে কাতর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে শোকের মাতম ঘিরে ধরে পুরো পরিবারটিকে। অন্যদিকে, প্রতিদিনই বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক সহায়তাসহ দেওয়া হচ্ছে নানান আশ্বাস।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলো— পাইওনিয়ার নিট ফ্যাক্টরির ফ্লোর ম্যানেজার আলমগীর হোসেন (৩৮), কোয়ালিটি ইনচার্জ মো. মিরাজ হোসেন আকন (৪৬), কর্মচারী মো. তারেক হোসেন (১৯), মো. লিমন সরকার, মো. মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯) ও নিঝুম উদ্দিন (২০), ভালুকার বাসিন্দা মো. আজমল হাসান সগীর (২৬), মো. শাহিন মিয়া (১৯) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. নাজমুল (২১), আশিকুর রহমান (২৫) ও কাইয়ুম (২৫)।
ময়মনসিংহ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোস্তাছিনুর রহমান কালবেলাকে জানান, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সব আসামির উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানি শেষে প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সোমবার সকালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিপু দাসের বাড়ি পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান। এ সময় নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি দিপুর স্ত্রীকে চাকরির আশ্বাস দেন তিনি। এদিন সকালে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে দিপুর বাড়িতে যান জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমান। কর্মকর্তারা দিপুর পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা, শীতবস্ত্র, শুকনো খাবার ও একটি সেলাই মেশিন দিপুর পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়।
হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত : দিপু হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ময়মনসিংহ নগরী ও জেলার তারাকান্দায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সোমবার দুপুরে সচেতন ময়মনসিংহবাসীর ব্যানারে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এতে দিপু দাসের পরিবারের লোকজনসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
একই দাবিতে দিপু দাসের জন্মস্থান তারাকান্দায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ফ্রন্ট এবং দিপু দাসের পরিবারের সদস্যরা। সকালে তারাকান্দা বাজারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা কারখানার মালিকসহ প্রকৃত দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন। এ ছাড়া দিপুর পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেডের অ্যাডমিন, এইচআর ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার উদয় হোসেন জানান, নিহত দিপুর পরিবারকে প্রাথমিকভাবে মানবিক সহায়তা হিসেবে ৫ লাখ টাকা ও পরিবারের যেসব সদস্য কর্মক্ষম রয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া তার শিশুসন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ভালুকার জামিরদিয়া পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানির কর্মী দিপুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন