

জেনারেটিভ এআই হয়তো কর্মীর কাজের গতি বাড়ায়। তবে এটি গভীর চিন্তাভাবনায় বাধা দিতে পারে—এমনটাই বলছেন গবেষকরা।
তাদের ভাষ্য, দীর্ঘমেয়াদে এর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়লে স্বাধীনভাবে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
এআই চ্যাটবটের মাধ্যমে কঠিন প্রশ্নের উত্তর তৈরি করা, বড় ডেটা বা তথ্য বিশ্লেষণ করা, কিংবা চাকরির কভার লেটারের যথার্থতা যাচাই করা এক সাধারণ ব্যবহার হয়ে উঠেছে। কিছু বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, এসব কাজ এআই দিয়ে করানোর মানে হলো মস্তিষ্ক কম খাটছে। আর এতে চিন্তাশক্তি আর সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কমে যেতে পারে। এ বছরের শুরুতে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) একটি গবেষণা প্রকাশ করে। সেখানে দেখা গেছে, যারা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে প্রবন্ধ লিখেছেন, তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অন্যদের তুলনায় কম ছিল। যারা এআই ব্যবহার করেননি, তাদের মতো করে নিজেদের লেখা থেকে উদ্ধৃতিও দিতে পারেননি এআই ব্যবহারকারীরা। গবেষকরা বলছেন, বিষয়টি শেখার দক্ষতা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা নিয়ে আরও ভাবা দরকার। এমআইটি ও আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। তাদের মাথায় ইলেকট্রোড বসিয়ে ইইজির মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়।
অংশগ্রহণকারীরা এআইকে দিয়ে প্রশ্ন ছোট করা, উৎস খোঁজা এবং ব্যাকরণ ঠিক করার মতো কাজ করিয়েছেন। নতুন ধারণা তৈরির কাজেও এটি ব্যবহার করা হয়, তবে ব্যবহারকারীরা মনে করেন এআই এ ক্ষেত্রে খুব একটা দক্ষ নয়।
কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি ও মাইক্রোসফট আলাদা একটি গবেষণায় দেখেছে, এআইর ওপর বেশি নির্ভর করলে মানুষের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কমে যেতে পারে।
তারা ৩১৯ জন অফিস কর্মীর ওপর জরিপ চালায়, যারা সপ্তাহে অন্তত একবার কাজের জন্য এআই ব্যবহার করেন। গবেষণায় ৯০০টি ভিন্ন ভিন্ন কাজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ডেটা বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে নিয়ম যাচাই করার মতো বিষয় ছিল। ওইউপির এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জন মনে করে এআই তাদের দক্ষতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেখা গেছে, এআই টুলের ওপর যাদের আস্থা বেশি, তারা নিজেদের চিন্তাশক্তি কম কাজে লাগান। গত অক্টোবরে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (ওইউপি) যুক্তরাজ্যের স্কুলপড়ুয়াদের ওপর একই ধরনের একটি জরিপ চালায়। সেখানে ১০ জনের মধ্যে ছয়জনই মনে করে, এআই তাদের পড়াশোনার দক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাহলে এআইর ব্যাপক ব্যবহারে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা কি হুমকির মুখে? ওইউপির জেনারেটিভ এআই বিশেষজ্ঞ ড. আলেকজান্দ্রা টমেস্কু মনে করেন, পুরোপুরি তা নয়। তিনি স্কুলপড়ুয়াদের ওই জরিপে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ জনই বলেছে এআই তাদের অন্তত একটি দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। সেটা সমস্যা সমাধান, সৃজনশীলতা বা রিভিশন দেওয়া হতে পারে।’ চ্যাটজিপিটির প্রধান স্যাম অল্টম্যানের তথ্যমতে, তাদের সপ্তাহে ৮০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য চ্যাটজিপিটি সম্প্রতি ১০০টি প্রম্পটের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।
তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) অধ্যাপক ওয়েন হোমস মনে করেন, এটুকুই যথেষ্ট নয়। শিক্ষার্থীদের এআই ব্যবহারে উৎসাহিত করার আগে এর প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন