

বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন ডলারের যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, তাতে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। একসময় যে ডলার ছিল সারা বিশ্বের জন্য একটি নিরাপত্তার প্রতীক, তা এখন অনেকের কাছে রাজনৈতিক অস্ত্রের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে দক্ষিণ বিশ্বের (গ্লোবাল সাউথ) দেশগুলো ডলারের ওপর আস্থা হারাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে? তার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু শক্তিশালী কারণ।
ডলার এখন যুদ্ধের অস্ত্র: ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ জব্দ করে। এটি বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে (বিশেষ করে চীন ও উপসাগরীয় দেশসমূহ) এ বার্তা দিয়েছে যে, আমেরিকা চাইলে যে কোনো সময় তাদের অর্থকেও রাজনৈতিক স্বার্থে আটকে দিতে পারে।
মার্কিন ঋণের বোঝা: আমেরিকার সরকারি ঋণের পরিমাণ হু-হু করে বাড়ছে। একই সঙ্গে ওয়াশিংটন বন্ধু ও শত্রু—উভয় দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করছে, যা ডলারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
স্বার্থের সংঘাত: চীন এবং আমেরিকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ এখন সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আমেরিকার যে ‘নিরাপত্তার বদলে জ্বালানি’ চুক্তি ছিল, তাও এখন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের কৌশল পরিবর্তন: একটা সময় ছিল যখন চীন ও মধ্যপ্রাচ্য তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ মার্কিন সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করত। এর ফলে আমেরিকার ঋণের খরচ কম থাকত এবং সাধারণ আমেরিকানরা সস্তায় গাড়ি বা বাড়ির ঋণ পেতেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে—চীন এখন আর ডলার জমিয়ে রাখছে না। আর কাতার বা সৌদি আরবের মতো দেশগুলো এখন আর তাদের তেল বিক্রির টাকা স্রেফ মার্কিন বন্ডে ফেলে রাখছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এর ফলাফল কী: বিদেশি দেশগুলো যদি মার্কিন বন্ড কেনা কমিয়ে দেয় বা ডলার বিক্রি শুরু করে, তবে আমেরিকায় সুদের হার বাড়বে। এতে মার্কিন সরকারের ঋণের বোঝা আরও ভারী হবে, সাধারণ মানুষের জন্য ঋণের খরচ বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আমেরিকার প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা (নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতা) সীমিত হয়ে পড়বে।
ডলারের আধিপত্য রাতারাতি শেষ হয়ে যাবে না—আমেরিকার বিশাল অর্থনীতি এবং শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এখনো ডলারকে টিকিয়ে রেখেছে। তবে যে কাঠামোগত শক্তিগুলো ডলারকে শীর্ষে রেখেছিল, সেগুলো এখন উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে।
মন্তব্য করুন