জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার ট্যুর্ক বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফল কয়েক দশক ধরে মানুষ ভোগ করবে। তিনি অবিলম্বে রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। ট্যুর্ক বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পুরোদস্তুর আগ্রাসনের একটা ভয়ংকর মানবিক মূল্য রয়েছে। লাখ লাখ বেসামরিক মানুষকে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণ করে। এর দুই বছর পূর্তির ঠিক আগে তিনি এ কথা বলেন। খবর ডয়চে ভেলের।
ফলকার ট্যুর্ক এ যুদ্ধ ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন তদন্ত করার দাবিও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যারা অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ যুদ্ধ তৃতীয় বছরে প্রবেশ করতে চলেছে। এই যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। এর ফলে অনেক মানুষ ও পশুর মৃত্যু হয়েছে। ভয়ংকর ধ্বংসলীলা চলেছে। ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। কয়েকশ হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। ইউক্রেনের মানুষ কয়েক প্রজন্ম ধরে এর ফল ভোগ করবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার মনিটরিং মিশন জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে ১০ হাজার ৫৮২ জনের মারা যাওয়ার বিষয়টি তারা যাচাই করে দেখেছে। এ ছাড়া আরও অনেকে মারা যেতে পারেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে এর আগেই এ যুদ্ধের রাশ টেনে ধরা উচিত।
ওডেসা বন্দরে রুশ ড্রোন হামলা, নিহত ৩: এদিকে ইউক্রেনে কৃষ্ণ সাগরের ওডেসা বন্দরে ড্রোন হামলা করেছে রুশ বাহিনী। এই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে শুক্রবার জানিয়েছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী ও আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ কিপার। আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রাম পোস্টে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ৩১টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। সেগুলোর মধ্যে ২৩টি বিধ্বস্ত করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, ৯টি ড্রোনের মধ্যে একটি ওডেসা বন্দর এলাকায় আঘাত হানে। আর সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে উদ্ধারকর্মীরা বলেন, আরও অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে পারে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জরুরি বাহিনী কাজ করছে। আগুন নেভানোর সময় ধ্বংসস্তূপ থেকে এক নারী নিরাপত্তাকর্মীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওডেসা অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ কিপার টেলিগ্রামে বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও দুজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। শত্রুর আক্রমণে তিনজন মারা গেছেন। রুশ বাহিনীর ড্রোন হামলার ধরন ব্যাখ্যা করে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ওডেসা বন্দরে আক্রমণ করার জন্যই ড্রোন ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী। কিন্তু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, রুশ ড্রোন হামলায় ওডেসা বন্দর এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে পথ তৈরি করছেন উদ্ধারকারীরা। দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি লাইসাক জানিয়েছেন, ডিনিপ্রো অঞ্চলের মধ্য শহরের একটি আবাসিক ভবনে ড্রোন হামলা করেছে রুশ বাহিনী। সেই হামলায় চারজন আহত হয়েছেন। সেরহি লাইসাক আরও বলেন, সারা রাত অভিযান চালিয়েছে রুশ বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, বাসিন্দারা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে পারে।
ইউক্রেনকে টরাস ক্রুজ মিসাইল দিচ্ছে না জার্মানি: ইউক্রেনকে টরাস ক্রুজ মিসাইল দিচ্ছে না জার্মানি। এ নিয়ে বিরোধীদের আনা প্রস্তাব পার্লামেন্টে খারিজ হয়ে গেছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এই ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভকে দেওয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি মনে করেছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র দিলে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়বে। বিরোধী সিডিইউ অবশ্য শলৎসের যুক্তি মানতে রাজি হয়নি। তাদের মতে, প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন চাইবেন, তখনই যুদ্ধের তীব্রতা বাড়বে। তাদের মতে, এই দূরপাল্লার অস্ত্র পেলে ইউক্রেনের সুবিধা হতো।