ফেসবুক মেসেঞ্জারে বললেই চলে আসে প্রতি বিষয়ের অধ্যায়ভিত্তিক ক্লাস নোট। প্রশ্নব্যাংক, লেকচার শিট, ল্যাব রিপোর্টও পাওয়া যায়। অ্যাপের নাম ‘নোটবট’। তৈরি করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বুটেক্সের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৪৪তম ব্যাচের আফশিন নাহিয়ান তৃপ্ত। নোটবটে অনেকের নোট পাওয়া যায়। এর মধ্যে অবশ্য সৈয়দ মুহাম্মদ আল আকিবের নোট একটু বেশি জনপ্রিয়। নোটবটের গল্প শোনাচ্ছেন মাহবুব আলম রিয়াজ।
তৃপ্তর হাতে শুরু
উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তৃপ্ত ভর্তি হন বুটেক্সের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ভর্তি হয়ে খেয়াল করেন ক্লাসের সবাই শিক্ষকদের লেকচার তোলে না ঠিকমতো। পরীক্ষার আগে বন্ধুদের নোট সাপ্লাই দিতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যেত সে। সবাইকে সময়মতো দিতেও পারত না। এ ‘যন্ত্রণা’র অবসান ঘটাতেই মাথায় আসে আইডিয়া। তৈরি করে মেসেঞ্জার চ্যাটবট। গুগল ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রথমে একটি কাঠামো দাঁড় করায়। নাম দেয় বুটেক্স নোটবট।
শুরুতে কোড ছাড়া ম্যানিচ্যাট (ManyChat) প্ল্যাটফর্মের ফ্রি প্ল্যানে ফেসবুক মেসেঞ্জারে চ্যাটবটের কার্যক্রম শুরু হয়। সাড়া পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে। বাড়তে থাকে ব্যবহারকারী। সমস্যা বাধে ম্যানিচ্যাট প্ল্যাটফর্মের নতুন নিয়ম আসায়। ফ্রি সার্ভিসে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর প্রবেশাধিকার নেই। কিন্তু তখন নোটবটের চাহিদা আট হাজার ছাড়িয়ে। সবাইকে এর সুযোগ দিতে গুনতে হবে মাসে ৫০ ডলার করে।
২০২১ সালে তৃপ্ত ম্যানিচ্যাটের নির্ভরশীলতা কাটিয়ে টিউটোরিয়াল দেখে কোড শিখে নেন। সে কোড দিয়ে বানিয়ে ফেলেন নতুন আঙ্গিকের নোটবট। এখন এতে যত খুশি তত শিক্ষার্থী প্রবেশ করতে পারছে। খরচটা শুধু হোস্টিংয়ের। আর সেটাও বহন করছে শিক্ষাসংক্রান্ত প্ল্যাটফর্ম ‘বন্দি পাঠশালা’।
নোট সংগ্রহ ও প্রচারে আছে বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগভিত্তিক প্রতিনিধি। শুধু বুটেক্স নয়, অধিভুক্ত কলেজসহ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ুয়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নোট জমা দেন এতে। সেই নোট তৃপ্ত আপলোড করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।
নোটবটের বর্তমান ব্যবহারকারী প্রায় ১০ হাজার। পরীক্ষার সময় দিনেই ব্যবহারকারী দাঁড়ায় দেড়-দুই হাজারে।
শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক ব্যাপারেই নোটবট ব্যবহার করে না, অনেকে বটের সঙ্গে বসে বসে গল্পও করে। গান, মুভি, খাবারের সাজেশন পাওয়া যায় এ বট থেকে।
আকিবের নোট
নিজের করা ক্লাসনোটের পিডিএফ কাউকে শেয়ার না করলে সেমিস্টার শেষে হয়তো গুগল ড্রাইভের এককোনায় পড়েই থাকত, যা আদতে পরে কোনো কাজেই আসত না। কিন্তু নোটগুলো যেন কারও উপকারে আসে সেই চিন্তা থেকেই বুটেক্স নোটবটে নোট শেয়ারিংয়ে করে যাচ্ছে আকিব। পড়ছে বুটেক্সের অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তার নোটে এখন উপকৃত হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কঠিন কোর্সগুলোও সহজে শেষ করতে পারছে অনেকে।
আকিব প্রায় ৩০টি বিষয়ের নোট করেছে। প্রতিটি কোর্সে দুই পার্ট থাকায় তার সবসময় চেষ্টা ছিল বিষয়ের অন্তত একটা পার্ট হলেও নোট করা হয়। আকিব বললেন, নোটগুলো আমি যদি নিজের জন্য করতাম তাহলে হয়তো এত কষ্টই করতাম না। নোটবটের জন্য ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের ব্যাচমেট ও জুনিয়রদের কথা মাথায় রেখেই গুছিয়ে কাজটা করেছি। নোটগুলোকে তথ্যমূলক ও প্রশ্নব্যাংকগুলোকে অ্যানালাইসিস টাইপের করতে হয়েছে। আকিব বেশিরভাগ নোটই করে ক্লাস টেস্টের আগে। তা ছাড়া সেমিস্টারে পরীক্ষার আগে যে দুই সপ্তাহের প্রিপারেটরি লিভ পায়, সে সময়ে নোটে মন দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানুজ্জামান রনি বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পরীক্ষা ঘনিয়ে এলেই পড়া নিয়ে ছোটাছুটি করে। বুটেক্স নোটবট আমার জন্য রীতিমতো আশীর্বাদ। সব নোট-বই-সিলেবাস সাজানো থাকে।
৪৬তম ব্যাচের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রাবী সিদ্দিকী জুবায়ের বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে প্রতিটি কোর্সের নোট গুছিয়ে করা হয়ে ওঠে না। তখন নোটবট ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়। তা ছাড়া প্রশ্নব্যাংক সেকশন থেকে সহজেই আগের বছরের প্রশ্ন দেখে নেওয়া যায়।
মন্তব্য করুন