সাভারের আশুলিয়ার দুর্গাপুর গ্রামবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ‘সোহাগ মণ্ডল বাহিনী’। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। তারা যখন যাকে খুশি মারধর, হামলা ও নির্যাতন করছে। এমনকি জোরজবরদস্তি করে অন্যের জমি দখল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করাসহ নানা অপরাধ করে যাচ্ছে।
দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ওই বাহিনীর প্রধান সোহাগ মণ্ডল ওরফে বাটপাড় সোহাগের নেতৃত্বে রয়েছে ফরহাদ মণ্ডলসহ এলাকার উঠতি বয়সের ১৫ থেকে ২০ জন কিশোরের একটি বাহিনী। যাদের অধিকাংশ নেশাগ্রস্ত।
জানা গেছে, ‘সোহাগ মণ্ডল বাহিনী’র সন্ত্রাসীরা সর্বশেষ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় চা দোকানি লাইজু আক্তারের মালিকানাধীন জমিতে দলবল নিয়ে গিয়ে জমির বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে সেই জমি দখল করে নেয়। এ সময় জমি রক্ষায় লাইজু আক্তার ও তার বৃদ্ধা মা এগিয়ে এলে তাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে হত্যার হুমকি দেয় সোহাগ মণ্ডলের ক্যাডাররা। একইদিন পার্শ্ববর্তী খাদিজা রহমান নামে অপর আরেক নারীর জমিও দখল করে নেয় তারা।
এ ঘটনায় সোহাগ মণ্ডলসহ চারজনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত ছয়জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী লাইজু আক্তার বলেন, আমি একজন চা দোকানদার। অনেক কষ্ট করে টাকা জমিয়ে এই জমিটি কিনেছিলাম। এটি আমার একমাত্র সম্বল। আর সেই শেষ সম্বলটিও কেড়ে নিল সোহাগ বাহিনী। আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাব আপনারা আমার জমিটা ফিরিয়ে দিন।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক রুবেল মণ্ডলের মালিকানাধীন একটি স্কুলের সাইনবোর্ড ভাঙচুরসহ তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয় সোহাগ মণ্ডল ওরফে বাটপাড় সোহাগ।
শুধু জমি দখলই নয়, সোহাগ মণ্ডলের বিরুদ্ধে রয়েছে জোরপূর্বক গার্মেন্টসের জুট ব্যবসা দখল, ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের বিস্তর অভিযোগ।
ভূমিদস্যু সোহাগের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বাটপাড়ি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। আর এ কারণেই স্থানীয়ভাবে সে বাটপাড় সোহাগ নামে পরিচিত। এ ছাড়া এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেদের মাদকের নেশায় বুঁদ করে কিশোর গ্যাং বাহিনী পরিচালনা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অপকর্মের কারণে নানা সময় খবরের শিরোনামও হয়েছেন তিনি। তার কথার অবাধ্য হওয়ায় কয়েকদিন আগে বেশ কয়েকজন গার্মেন্টস শ্রমিককে মারধর করে এই সন্ত্রাসী সোহাগ ও তার বাহিনী। পরে ভুক্তভোগীরা আশুলিয়া থানায় মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে শ্রী ঘরে পাঠায়। সোহাগের এসব কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। আর ভুক্তভোগীদের দাবি ভূমিদস্যু সোহাগের বিরুদ্ধে এখনই নেওয়া হোক কার্যকরী পদক্ষেপ।
এ বিষয় জানতে অভিযুক্ত সোহাগ মণ্ডল ওরফে বাটপাড় সোহাগের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই ফোন লাইন কেটে দেন তিনি। এরপর একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক ভজন চন্দ্র রায় বলেন, ওই ঘটনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে বাউন্ডারির দেয়াল ভাঙা পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।