এনায়েত শাওন
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০২:৫৫ এএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংগঠন গোছাতে ব্যর্থ যুবলীগ

রাজনীতি
সংগঠন গোছাতে ব্যর্থ যুবলীগ

ক্যাসিনো ব্যবসা, টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, জমি-বাড়ি দখলসহ নানা কর্মকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত হয় যুবলীগ। ২০১৯ সালের অক্টোবরে শুদ্ধি অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটক হন অনেকে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, ‘আওয়ামী যুবলীগে কিছু মনস্টার (দানব) তৈরি হয়েছে। যারা ছাত্রলীগের চেয়েও খারাপ।’ এমন অবস্থায় অনিবার্য হয়ে ওঠে যুবলীগের নেতৃত্বের পরিবর্তন। ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে আসে নেতৃত্ব। করোনাকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তারা ‘মানবিক’ তকমাও অর্জন করেন। তবে পৌনে পাঁচ বছরে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। তাদের নেতৃত্বে সম্মেলন হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি শাখায়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখা চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। নতুন সম্মেলনের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার ইঙ্গিত মেলেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শীর্ষ নেতৃত্বের অবহেলায় গতি নেই দলীয় কর্মকাণ্ডে। এর প্রভাব পড়েছে জেলা-উপজেলা-থানা শাখার সম্মেলনে। গত পৌনে পাঁচ বছরে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ১৭টিতে হয়েছে সম্মেলন, প্রণীত হয়েছে আংশিক কমিটি। মাত্র ৪টি শাখায় দেওয়া হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দলের ৬০০ উপজেলা মর্যাদার শাখার মধ্যে মাত্র ৪৬টিতে হয়েছে সম্মেলন। এসব জেলা ও উপজেলা মর্যাদার শাখায় মাত্র তিন মাসের জন্য আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। বছরের পর বছর পার হলেও এসব শাখায় হচ্ছে না সম্মেলন। ফলে তৃণমূল যুবলীগে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়েছে। সাংগঠনিক তৎপরতাও নামমাত্র। জেলা-উপজেলা ও আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সারির অনেক নেতা এরই মধ্যে মারা গেছেন। মূল দায়িত্বের অনেকে স্থান পেয়েছেন মূল দল আওয়ামী লীগের কমিটিতে। এ ছাড়া নতুন নেতৃত্ব না আসায় আটকে আছে তৃণমূলের বিভিন্ন শাখার সম্মেলন।

২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু যুবলীগের প্রধান খুঁটি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে শাখা দুটির কর্মকাণ্ড। ২০১২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে উত্তরে মাইনুল হোসেন খান নিখিল সভাপতি ও ইসমাইল হোসেন সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সভাপতি ও ওয়াহিদুল আলম আরিফ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ঢাকা দক্ষিণে সভাপতি-সম্পাদক এবং উত্তরের সভাপতি পদ চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। ২০১৩ সালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যার পর পলাতক থাকায় আরিফের স্থলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান এইচ এম রেজাউল করিম রেজা। ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্রাট গ্রেপ্তার হলে মাইনউদ্দিন রানাকে দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে উত্তরের সভাপতি নিখিল কেন্দ্রীয় যুবলীগে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ায় জাকির হোসেন বাবুল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু এক যুগের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এই দুই শাখার সম্মেলনের কোনো উদ্যোগ নেই।

একই অবস্থা দেশের অন্য শাখাগুলোতে। কোনো কোনো শাখায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সম্মেলন হয়নি। এর মধ্য কিছুদিন আগে পিরোজপুরের সম্মেলন হলেও ঝালকাঠির হয়নি। কার্যক্রম চলেছে শুধু আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলেছে ঝালকাঠির কার্যক্রম। সর্বশেষ গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। বরিশাল জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয় ৩১ বছর আগে ১৯৯৩ সালে। ২০০৪ সালে গঠিত বরিশাল মহানগরের আজ পর্যন্ত হয়নি কোনো সম্মেলন। আহ্বায়ক কমিটিতেই পার ২০ বছর। কিশোরগঞ্জ জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয় দুই যুগেরও বেশি সময় আগে। আহ্বায়ক কমিটিও পার করেছে এক যুগ। নাটোরে সভাপতি শরিফুল ইসলাম রমজান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল দুজনই এখন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা। যথাক্রমে তারা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২৬ বছরেও নতুন সম্মেলন না হওয়ায় দুটি পদই শূন্য। একই বছর সম্মেলন হয় মুন্সীগঞ্জেও। সেই কমিটির সভাপতিকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাও পাঁচ বছর আগে। ১৯ বছর আগে ২০০৫ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলায় সম্মেলনে আব্দুল কাদিরকে সভাপতি ও আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। বাদল এখন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কাদির সহসভাপতি। একই বছর সম্মেলন হয় মেহেরপুর ও শরীয়তপুর। সভাপতি এম এম জাহাঙ্গীর এখন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০৩ সালের পর আর সম্মেলন হয়নি চাঁদপুর ও যশোর জেলা যুবলীগের। নোয়াখালী জেলা যুবলীগও চলছে দুই দশকের বেশি সময় ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। মেহেরপুরেও সম্মেলন হয় ২০০৫ সালে। গত দুই দশকে সাতক্ষীরায় দুই দফায় আহ্বায়ক কমিটি দিলেও সম্মেলনের দেখা মেলেনি।

এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার কারণে সাংগঠনিক কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চলে। শোকের মাস আগস্টের পর দ্রুতই সব সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মতবিনিময় সভায় যুব নেতারা / জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে 

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে উদ্বেগ ঐক্য পরিষদের 

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের উৎসবে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ৪০

আ.লীগের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেন হাদি

তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারে ভুল উদ্ধৃতি সংশোধনের আহ্বান টিআইবির

‘আবরারের স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে অনেকের গাত্রদাহ দেখেছি’

সৌন্দর্যবর্ধনে সাভার উপজেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

ছেলের দায়ের করা মামলায় বাবাসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে কোরআন অবমাননা, সিএমপির জরুরি সতর্কবার্তা

জাতীয়করণ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা

১০

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

১১

খেলা শেষ হতেই রেফারির ওপর হামলা

১২

জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের জন্য সুখবর

১৩

আদালতের ‘ন্যায়কুঞ্জে’ খাবার হোটেল, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উচ্ছেদ

১৪

অ্যানথ্রাক্স ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলে, রংপুর-গাইবান্ধায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু

১৫

চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা / জানলে যে সব বলে দিতে হবে সেটা তো না

১৬

শেখ হাসিনা ও কামালের নির্বাচনী যোগ্যতা নিয়ে যা জানা গেল

১৭

ছাত্রদলকে সমর্থন জানিয়ে চাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুই প্রার্থী

১৮

খুন করে আল্লাহর ভয়ে নামাজ পড়ে ক্ষমা চান হত্যাকারীরা

১৯

ইংলিশদের বিপক্ষে মারুফাদের লড়াই করে হার

২০
X