রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০২:৩৯ এএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৪৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দলীয় সিদ্ধান্ত পেলেই আদালতে যাবেন আইনজীবীরা

তারেক রহমানের দেশে ফেরা
দলীয় সিদ্ধান্ত পেলেই আদালতে যাবেন আইনজীবীরা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় রয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, দ্রুততম সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আইনি প্রক্রিয়াসহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবেন তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আইনজীবীরা এখনো আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেননি। তারা বলছেন, এটি দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দল থেকে নির্দেশনা পেলেই তারা আইনি প্রক্রিয়ায় নামবেন। অবশ্য এ ব্যাপারে দলীয়ভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতনের পর দেশের মানুষ তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষা করছে। বিএনপির নেতাকর্মীসহ সবার প্রত্যাশা, উনি দ্রুততম সময়ে দেশে ফিরবেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে উনার মামলাগুলোর বিষয়ে কথা বলবেন।’

দেড় দশকের বেশি সময় ধরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন তারেক রহমান। বর্তমানে তিনি দেশটিতে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়ে’ অবস্থান করছেন। লন্ডন থেকেই দল পরিচালনা করছেন তিনি।

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতিবার ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বিএনপি। একই সঙ্গে নতুন সরকারের কার্যক্রম এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপরও নজর রাখছে দলটি। জানা গেছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে দলীয় সিদ্ধান্তে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবেন আইনজীবীরা। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এবং দলপন্থি আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এবং ওয়ান-ইলেভেন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার মামলাগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা তাদের।

তারেক রহমানের আইনজীবী ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সর্বদাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো ছিল রাজনৈতিক। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব মামলা মোকাবিলা করা হবে।’

তারেক রহমানের আইনজীবীরা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারাদেশে শতাধিক মামলা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মানি লন্ডারিং, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানহানি এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও আছে। ওয়ান-ইলেভেনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা হয়। বাকি মামলাগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের। এরই মধ্যে পাঁচটি মামলায় তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার ১০ বছর দণ্ড হয়। অর্থ পাচারের একটি মামলায় ২০১৩ সালে বিচারিক আদালতের রায়ে তিনি খালাস পেলেও পরে উচ্চ আদালত তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন।

২০০১ সালে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারেক রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে আটক করা হয়। সে সময় তাকে ১৩টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। ১৮ মাস পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে জেল থেকে বের হন। আট দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর তিনি দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেই থেকে তারেক রহমান সপরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

এর মধ্যে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে ওইদিনই কারাবন্দি হন। এরপর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে সফল হয়নি।

তারেক রহমান লন্ডনে থেকেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির পরামর্শে দল পরিচালনা করছেন। বিএনপি নেতারা জানান, তারেক রহমানের নেতৃত্বেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের একদফার আন্দোলন হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।

তারেক রহমান লন্ডনে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপির তরফ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছিল, চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। পরবর্তী সময়ে জানানো হয়, তিনি লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘২০১২ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকঢোল পিটিয়ে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার 

‘আর একটা পাথর সরানো হলে জীবন ঝালাপালা করে দেব’

আমাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

মানুষ ভাত পাচ্ছে না আর উপদেষ্টারা হাঁসের মাংস খুঁজতে বের হচ্ছেন : আলাল

বিচারককে ‘ঘুষ’, বারে আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত

ট্রাক প্রতীক নিয়ে নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আবু হানিফ 

শিক্ষককে ছুরি মারা সেই ছাত্রী এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে

নথি সরিয়ে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি, কর্মকর্তা বরখাস্ত

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রাসঙ্গিকতা

আগামী সরকারে থাকবেন কিনা জানালেন ড. ইউনূস

১০

বাঁশের পাতার নিচে মিলল ৩৭ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর

১১

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল

১২

‘সবার উপরে ভাত’ নাটকের কোটি ভিউজ উদযাপন

১৩

‘এক পায়ে পাড়া দিয়ে, আরেক পা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো’

১৪

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত ৪২ জনের নাম প্রকাশ

১৫

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের তৃতীয় হার

১৬

নির্বাচনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইলেন তারেক রহমান

১৭

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কত বছর লাগবে, জানালেন প্রেস সচিব

১৮

স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লেন বিসিএস ক্যাডারের ৬ কর্মকর্তা

১৯

চাকরি দিচ্ছে এসিআই, আবেদন করুন এখনই

২০
X