এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এ ছাড়া ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ রোগীর। গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশের মৃত্যু ঘটে হাসপাতালে ভর্তির ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে।
চিকিৎসকরা বলছেন, জ্বর হওয়ার পর সেটাকে গুরুত্ব না দেওয়া, দেরিতে রোগ নির্ণয় এবং বিলম্বিত চিকিৎসা গ্রহণের কারণে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই যদি রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়, তাহলে এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর বেশিরভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
তবে রোগী ও স্বজনদের এ ক্ষেত্রে পাল্টা অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কয়েকজন রোগী ও অভিভাবক বলেন, বেশিরভাগ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী ভর্তি করতে চায় না। তারা নানা ছুতায় রোগীদের ফিরিয়ে দেয়। এতে রোগীরা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই পর্যায়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা বলেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. আবু হোসেন মোহাম্মদ মঈনুল আহসান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা সমর্থন করে বলেন, বেশিরভাগ রোগী আসে চূড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি রোগীর সচেতন হওয়ার ওপর জোর দিয়ে বলেন, সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। রোগীরা সচেতন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে, কমবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার।
সেপ্টেম্বর মাসের মৃতদের উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়স ছিল ঢাকার পল্লবীর তিন মাস বয়সী মাহিদ রহমান। সে মাসেই মৃত্যু হয় লালবাগের ৫ মাস বয়সী নাহিদের। এর মধ্যে মাহিদ ২৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল ভর্তি হয় এবং ওই দিনই তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে নাহিদ ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং পরদিন তার মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ৩২ জনের মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে। অর্থাৎ তারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির দিনই মৃত্যু হয়।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৮০ জনের মত্যুর তথ্য রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। এর মধ্যে ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। চট্টগ্রামে ৫ জনের, পটুয়াখালী, বরগুনা ও কক্সবাজারে মৃত্যু হয়েছে ৩ জন করে। দুজন করে মৃত্যু হয়েছে বগুড়া, গাজীপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, বান্দরবান, যশোর, বরিশাল ও গাইবান্ধায়। এ ছাড়া একজন করে মৃত্যু হয়েছে টঙ্গাইল, রাজবাড়ী, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর এবং ঝিনাইদহে।
এসব মৃত্যুর ১৮টি ঘটেছে ঢাকার নামিদামি হাসপাতালে। এর মধ্যে ইউনাইটডে, স্কয়ার, ল্যাবএইড, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল, এভারকেয়ার, এনাম মেডিকেল, আসগর আলী, ইউনিভার্সল মেডিকেল কলেজ, পপুলার মেডিকেল কলেজ রয়েছে। বাকি রোগীদের মৃত্যু হয়েছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে। তাদের মধ্যে ৪২ জন পুরুষ এবং ৩৮ জন নারী।
আরও ৫ মৃত্যু: এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে চলতি বছরে রোগটিতে ৫০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও দুজন নারী। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৯৪ হাজার ৩১৪ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭০৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। ওই সময় আক্রান্ত হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।