মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২
মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আহতদের আহাজারি থামেনি

অভ্যুত্থান
আহতদের আহাজারি থামেনি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন, দ্রুত নির্বাচনের দাবি আর ক্ষমতার পালাবদলের হাওয়ায় হারিয়ে গেছে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ। অভ্যুত্থানের সাত মাস পরও সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং ঘাতকদের বিচারের জন্য তাদের বারবার নামতে হচ্ছে সড়কে। গতকাল বুধবার দুপুরে আবারও রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে আহতরা সড়ক অবরোধ করে দাবি জানান। ঘাতকদের বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসন অগ্রাধিকার তালিকায় থাকার কথা। কিন্তু সেই উদ্যোগ তুলনামূলকভাবে ধীরগতি বলেই আহতদের অভিযোগ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে গুলিবিদ্ধ হন সৌরভ ইসলাম। ওইদিন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করেন। দীর্ঘদিন সেখানে চিকিৎসা শেষে চার মাস ধরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেখতে সুস্থ মনে হলেও আসলে তা নয়। অনেকের শরীরে গুলি অথবা ভেতরে রিং বসানো আছে। তাই আমাদের চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় নিচ্ছে।

শুধু সৌরভ নন, আরও অনেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কিংবা নিজ বাড়িতে বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে পরিবারের বোঝা হয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ ধারদেনা ও অন্যের সাহায্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের কারও কারও বুকে গুলির ক্ষতচিহ্ন শুকায়নি। শরীরে অসংখ্য রাবার বুলেটের ক্ষত। হাত-পা অচল হয়ে গেছে। অন্ধ কিংবা এক চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, অন্য চোখে ঝাপসা দেখেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তাদের।

তথ্যমতে, অভ্যুত্থানে আহত ৯৯ জন এখনো নিটোরে ভর্তি। এ পর্যন্ত ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৮৯ জন। নিটোরের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য বিশেষ কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে এসে আহত রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আহতদের দ্রুত পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা এবং ইমার্জেন্সি হটলাইন চালুসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে মিছিল নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। আহতরা উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রবেশের গেটের সামনের সড়কে বসেন।

এর আগেও গত ১৪ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আহতদের দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে বলা হয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই আন্দোলনে আহতদের উন্নত চিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। অথচ তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো দাবি পূরণ করা হয়নি। আর এজন্যই তাদের বারবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। এটি গাইডলাইন আকারে প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে আন্দোলনে আহত হয়ে যারা কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, তাদের আজীবন ভাতা দেওয়া হবে এবং প্রত্যেকের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ও আজীবনের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

সূত্রে জানা গেছে, জুলাই ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুখের অবয়ব হারানো খোকন চন্দ্র বর্মণকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে গত সাত মাসে ৪০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে আহতদের মধ্যে সাতজন চিকিৎসা শেষে ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আহতদের মধ্যে যাদের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান আছে। আর গত কয়েক মাসে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ বেশ কয়েকটি চিকিৎসক দল আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে বাংলাদেশে এসেছিল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুলাই আন্দোলনে আহত ১৪ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬টি দেশ (থাইল্যান্ড, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর) থেকে আসা বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাজারের বেশি আহতের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার মূল্যায়ন করেছেন। ক্ষেত্রবিশেষে তারা আন্দোলনে আহতদের সার্জারি করেছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আহতদের বেশিরভাগের চিকিৎসা শেষ হয়ে গেছে। কারও চিকিৎসায় ব্যক্তিগতভাবে অর্থ ব্যয় করতে হয়নি। এখন প্রয়োজন পুনর্বাসনের। এজন্য একটি পৃথক ফাউন্ডেশন করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। আহতদের সব বিষয় এখন ওই দপ্তর থেকে পরিচালিত হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জিয়ার সমাধিতে ডা. সাবরিনার শ্রদ্ধা, যুবদল সভাপতির ক্ষোভ

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া মারা গেছেন

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

১০

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

১১

রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১২

চট্টগ্রামের মিষ্টি কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, মধুবন ফুডকে জরিমানা

১৩

আশুলিয়ায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

১৪

জাবির সাবেক সহকারী প্রক্টর জনি রিমান্ডে

১৫

প্রাণনাশের শঙ্কায় ভুগছেন ফজলুর রহমান, চাইলেন নিরাপত্তা

১৬

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইসহাক দারের প্রতিক্রিয়া

১৭

অপ্রতুল বিনিয়োগের কারণে চিকিৎসার মান কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছায়নি : ডা. রফিক 

১৮

মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানানো থালাপতির উত্থানের গল্প

১৯

চট্টগ্রামের নগরায়ণ সংকটে শহরবাসী, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নেই

২০
X