মুফতি আরিফ খান সাদ
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৪ এএম
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এলো পবিত্র মাহে রমজান

এলো পবিত্র মাহে রমজান

বছর ঘুরে আমাদের দুয়ারে উপস্থিত পবিত্র মাহে রমজান। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে এ মাসটি ইবাদত-বন্দেগির বসন্তকাল হিসেবে বিবেচিত। এ মাসে আসমান থেকে নেমে আসে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের ফল্গুধারা। এ মাসের প্রধান ইবাদত সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন। সুবহে সাদিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত টানা উপবাস পালন করতে হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।

সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক, সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, রোজা পালনে সক্ষম, সুস্থ সব নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক। ঋতুবর্তী নারী, সন্তান প্রসবকারিণী মা ও অসুস্থ ব্যক্তি রোজা পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করবেন। তবে কোনো কারণ ছাড়া রোজা না রাখলে সে ‘ফাসিক’ বলে গণ্য হবে। আর রোজা অস্বীকার করলে সে কাফির হিসেবে বিবেচিত হবে।

মাহে রমজানে পবিত্র কোরআন নাজিল হওয়ায় মাসটির গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ। এ ছাড়া এই মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর। কদরের রাতকে আল্লাহতায়ালা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা করেন। রোজার উদ্দেশ্য তাকওয়াভিত্তিক সমাজ গঠন। এ প্রসঙ্গে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’

রমজান মাস বান্দাদের আল্লাহর রহমত অর্জন ও ক্ষমা লাভের সুযোগ করে দেয়। অতীতের সব গুনাহ মাফ পাওয়ার সুযোগ আসে এ মাসে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান সহকারে ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে এবং এমনিভাবে রাতে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি)। রোজাদারের মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটা দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি)। আর রোজাদারের পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন। হাদিসে কুদসিতে রাসুল (সা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ বলেন, সাওম (রোজা) আমারই জন্য। আমি নিজেই এর বিনিময় দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম)। এসব কারণে মুসলিম উম্মাহর কাছে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।

রোজা শুধু সর্বশেষ উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়নি। অন্য ধর্মের অনুসারীদের ওপরও রোজা পালন করার বিধান ছিল। পৃথিবীর প্রথম নবী আদম (আ.) রোজা পালন করতেন। নুহ (আ.)-এর সময় প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখার বিধান চালু ছিল। দাউদ (আ.) তার শিশুপুত্রের অসুস্থতার সময় সাত দিন রোজা পালন করেন। মুসা (আ.) এবং ঈসা (আ.) ৪০ দিন করে রোজা রেখেছেন। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) রোজা ফরজ হওয়ার আগে মহররমের নবম ও দশম তারিখ রোজা রাখতেন। হিজরি দ্বিতীয় সালে রমজানের রোজা ফরজ হিসেবে ঘোষিত হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর রমজানকে অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যের সঙ্গে পালন করে বিশ্ব মুসলিমবাসী। আসুন, এবারের রমজানকে আমরা স্বাগত জানাই।

মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১০

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১১

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১২

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৩

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৪

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১৫

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১৬

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

১৭

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

১৮

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

১৯

ডেজার সভাপতি প্রকৌশলী রুহুল আলম, সম্পাদক প্রকৌশলী চুন্নু

২০
X