ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলায় বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বর্তমানের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ কেনা হবে। এ ছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানো হবে। সব মিলিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই প্রেক্ষাপটে আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরকার এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, চালু থাকা প্লান্টগুলো থেকে বর্তমানের চেয়ে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বেশি উৎপাদন করার পরিকল্পনা করেছি। অতিরিক্ত এই বিদ্যুৎ কিনে সরবরাহ করা গেলে লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি কিছুটা কমবে। তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও বাড়ানো হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র গত সোমবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশজুড়ে লোডশেডিং পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার সচিবালয়ের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জরুরি সভা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের আদানি গ্রুপের কড্ডা কেন্দ্রে থেকে বর্তমানের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। বর্তমানে ওই কেন্দ্র থেকে ৭০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখান থেকে ১ হাজার ৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। এ ছাড়া
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ মালিকানার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও বেশি বিদ্যুৎ কেনা হবে। বর্তমানে এই কেন্দ্রটি থেকে ৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে পিডিবি। এখন রামপাল থেকে ৬১২ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া টেস্ট রানে থাকা এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ার থেকে এখন পাওয়া যাচ্ছে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এটি ৩২০ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পেট্রোবাংলা দৈনিক ১ হাজার ২শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। এর বিপরীতে গ্যাস থেকে উৎপাদন হচ্ছে কমবেশি ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ বাড়ালে আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল, বাঘাবাড়ি, টঙ্গী, ভেড়ামারাসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
এদিকে রামপাল ও এসএস পাওয়ারের কর্মকর্তারা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী কয়লা না থাকায় এখনই সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। রামপাল কেন্দ্রে যে পরিমাণ কয়লা আছে, তা দিয়ে আর মাত্র ১২ দিন চলবে। কয়লা আনতে রামপাল কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে ডলার চেয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বাশঁখালীতে অবস্থিত এসএস পাওয়ার কেন্দ্রে কয়লা মজুত আছে মাত্র দুদিনের। ১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ কেন্দ্রটি এখনো টেস্ট রানে আছে। এখনই সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বেশি বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে দুটি কেন্দ্রের কর্মকর্তরাই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সরকারি তথ্যমতে, দেশে এখন বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। সরবরাহ হচ্ছে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। তবে
খাত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। ডলার সংকটে জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সরকারি তথ্যমতেই লোডশেডিং ৩ হাজার ২১৫ মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে বাস্তবে এর পরিমাণ আরও বেশি বলে মনে করেন বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন