শাহনেওয়াজ খান সুমন
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ০৮:৫৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নজিরবিহীন নাগরিক দুর্ভোগ ঢাকা দক্ষিণে

নজিরবিহীন নাগরিক দুর্ভোগ ঢাকা দক্ষিণে

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে চলমান আন্দোলনে টানা দুই সপ্তাহ ধরে অবরুদ্ধ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন। এতে নাগরিকসেবা বন্ধ থাকায় নজিরবিহীন দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। বন্ধ রয়েছে রাজস্ব আদায়ও। আসন্ন কোরবানির ঈদে বর্জ্য অপসারণ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, দিনে দিনে জরুরি কাজ আটকে থাকায় নগরবাসীর সঙ্গে আমাদেরও ভোগান্তি বাড়ছে। আইনের মারপ্যাঁচে শপথ আটকে থাকায় ইশরাক সমর্থকরা দুষছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে। আর স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, এটি এখন আদালতে বিচারাধীন বিষয়। ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আজ বুধবার পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আপিল শুনানি হবে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে নগর ভবন অবরুদ্ধ থাকায় নজিরবিহীন দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

গতকালও নগর ভবনের প্রবেশের সব ফটকে এখনো তালা ঝুলেছে। ভেতরে সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কর্মকর্তাও নগর ভবনে প্রবেশ করতে পারছেন না। গত ১৫ মে থেকে ডিএসসিসির দাপ্তরিক কাজকর্ম, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, নাগরিকত্ব সনদ, উত্তরাধিকার দলিল ও ভূমি হস্তান্তর-সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশা নিয়ন্ত্রণ সেবা চালু রয়েছে। তবে কীটনাশকের অনিয়মিত সরবরাহের কারণে মশক নিয়ন্ত্রণের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

ডিএসসিসির সিংহভাগ কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের একটি অংশ যুক্ত হয়েছে। কর্মসূচি শুরুর দুই দিন পর থেকেই মূলত তারা যুক্ত হন।

এখনো তারা এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে রয়েছেন। ডিএসসিসির শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, কোর্ট রায় দেওয়া সত্ত্বেও ইশরাক হোসেনকে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। উপদেষ্টার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তিনি শপথ নিতে পারছেন না। জনগণের যেই ভোগান্তি নাগরিকরা যে সেবা পাচ্ছে না, তার জন্য মূলত দায়ী উপদেষ্টা।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, আমরা সাধারণত সপ্তাহে একবার করে কীটনাশক সরবরাহ করি; কিন্তু নগর ভবন বন্ধ থাকায় মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কর্মীদের বলা হয়েছে মজুত থাকা সামান্য ওষুধই রেশন করে চলতে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, নগর ভবনে গত ১৪ দিনে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। অফিশিয়াল কাজ আমরা আংশিক করার চেষ্টা করছি। যেগুলো অতীব জরুরি, যেমন নির্দিষ্ট তারিখে শেষ হবে এমন কাজ কিংবা টেন্ডারের কিছু কাজ সচিবালয়ে বসে করতে হচ্ছে। দিন দিন জরুরি কাজ আটকে থাকায় নগরের বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদেরও ভোগান্তি বাড়ছে।

ভোগান্তিতে নগরবাসী: সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স করাতে এসে কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আজিমপুরের রজ্জব আলী বলেন, এক দিকে এখানে আসতে অনেক সময় লেগেছে, রিকশা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের পরে আর সামনে যাওয়ার উপায় নাই, পরে হেঁটে নগর ভবনে এসেছি। এসে দেখি সামনে আন্দোলন আর নগর ভবনের সব জায়গায় তালা দেওয়া, কি সমস্যায় পড়েছি বলুন। এভাবে আর কয় দিন থাকবে। কে মেয়র হবে, সেটা আমাদের জানার দরকার নেই। আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের সেবা তো খোলা রাখবে।

ফরিদ উদ্দিন নামে একজন বলেন, ইশরাকের কর্মী সমর্থকদের আন্দোলন যৌক্তিক; কিন্তু এই আন্দোলনের কারণে আমরা সেবা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। গত এক সপ্তাহ ধরে আমার মেয়ের জন্মনিবন্ধনের কাজ করতে পারছি না। কবে করতে পারবো তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।

রাজস্ব আদায় বন্ধ: মে ও জুন এই দুই মাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় বছরের এক-তৃতীয়াংশের বেশি রাজস্ব আয় হয়। কিন্তু আন্দোলনের কারণে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

ডিএসসিসির উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, ১৪ জুন পর্যন্ত অফিস বন্ধ থাকবে ঈদের ছুটির জন্য। এই সময়টুকু রাজস্ব আদায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু আমরা কাজ করতে পারছি না। বছরের অধিকাংশ রাজস্ব এই সময় ও আগস্ট মাসে আসে।

তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে জোরালো কর্মসূচি শুরু করেছিলাম। কিন্তু গত বছরের ছাত্র আন্দোলন রাজস্ব আদায়ের গতি ধীর করে দেয়। এবার যখন অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করেছিল, তখনই এই অচলাবস্থা শুরু হলো।

ঈদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা: প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে গরুর হাট ইজারার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে বড় ধরনের প্রস্তুতি নেয় সিটি করপোরেশন; কিন্তু এবার এসব কাজের কিছুই এগোয়নি। ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, আমাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঈদের সময় কোরবানির বর্জ্য সামলানো। গরুর হাটের টেন্ডার বা প্রাক-ঈদ প্রস্তুতি সভা কিছুই করতে পারিনি। ময়লা পরিবহনের গাড়ি মেরামত, ব্লিচিং পাউডারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার কাজ বন্ধ আছে। এভাবে চললে ঈদের সময় কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঘরে ঢুকে নারীকে গলাকেটে পুকুরে ফেলল মরদেহ

সাগরে নিম্নচাপ   / বৃষ্টি কতদিন থাকবে, জানালেন আবহাওয়াবিদ

চাকরি দিচ্ছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, আবেদন করবেন যেভাবে

ট্রাম্পের পাশে থাকা মাস্ক অবশেষে সরে দাঁড়ালেন

চিফ ইঞ্জিনিয়ারের পরিকল্পনায় মোংলা বন্দরে জাহাজে ডাকাতি

আজ থেকে দেশের সব সোনার দোকান বন্ধ

সকাল থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি

কেউ নিরাপদ থাকবে না, ইসরায়েলকে ইয়েমেনি বিদ্রোহীরা

বিনা টেন্ডারে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ

সাভারে ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিত ও ছাত্রলীগ কর্মী

১০

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১১

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা

১২

সকালে খালি পেটে এক মুঠো কাঁচা ছোলা কী কী উপকার করে

১৩

কে এই মোহাম্মদ সিনওয়ার, যাকে হত্যার দাবি করছে ইসরায়েল

১৪

পুশইনে ব্যর্থ হয়ে ককটেল ফাটিয়ে ফিরে গেল বিএসএফ

১৫

কেমন কাটতে পারে আজকের দিন, জেনে নিন রাশিফলে

১৬

যেসব এলাকায় ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না আজ

১৭

টিভিতে আজকের খেলা

১৮

দুপুরের মধ্যে ৬ জেলায় ঝড়ের আশঙ্কা

১৯

পুশইনে ব্যর্থ হয়ে সীমান্তের বাতি বন্ধ করে ফেরত নিয়েছে বিএসএফ

২০
X