যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে উচ্চ শুল্ক নিয়ে রপ্তানিকারকদের দুশ্চিন্তার অবসান হয়েছে। গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার কথা জানান। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উদোক্তাদের মধ্যে। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক এক হওয়াকে রপ্তানির জন্য সুবিধা হিসেবেই দেখছেন তারা। একই সঙ্গে নতুন করে অর্ডার বেড়ে যাওয়ার প্রত্যাশাও করছেন রপ্তানিকারকদের কেউ কেউ।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু কালবেলাকে বলেন, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশি পণ্যে পাল্টা শুল্ক একই, অর্থাৎ ২০ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর আগেই ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ হয়। চীনের সঙ্গে এখনো চুক্তি হয়নি। তবে বর্তমানে চীনের ওপর ৩০ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ওপর শুল্ক ৩২ শতাংশ থেকে কমে ১৯ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ কিছুটা বেশি হলেও স্বস্তিকর। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন, ভারতসহ আমাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় শুল্ক বেশি নয়। এটাই আমাদের রপ্তানির জন্য বড় সুবিধা। যেহেতু শুল্ক হার প্রতিযোগীদের প্রায় সমান, তাই শুল্কের কারণে রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, সরকার কী কী ছাড় দিয়েছে আমরা এখনো জানি না। তবে যে প্রতিশ্রুতিগুলো বাংলাদেশ দিয়েছে, যেমন গম আমদানি, নন-ট্যারিফ বাধা দূর করা, আমদানি বাড়ানো—এগুলো ঠিকই আছে। এগুলো পূরণ করা উচিত। গম, তুলা, এলএনজি কেনার মতো স্বল্পমেয়াদি এবং উড়োজাহাজ কেনার মতো দীর্ঘমেয়াদি বিষয় আছে। মনে রাখতে হবে, এখানে কোনো গাফিলতি থাকলে আমরা ফের বিপদে পড়তে পারি। আমরা এখনো বিস্তারিত কিছু পাইনি। পাওয়ার পর সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। বিজিএমইএ সদস্যদের বার্তা দিতে চাই, বাড়তি এই শুল্ক আমদানিকারক ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকেই দিতে হবে। আর দিন শেষে সেটি মার্কিন ভোক্তাদের ওপরই গিয়ে পড়বে। ফলে এই বিশেষ বার্তা পরিষ্কার থাকতে হবে।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালবেলাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা অবশ্যই স্বস্তির। আমাদের প্রতিযোগীদের সঙ্গে আমাদের শুল্কহার একই, যে কারণে নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। অনেক নতুন অর্ডারও বাংলাদেশ পেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, যেহেতু আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কটন দিয়ে পোশাক তৈরি করব, সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে তৈরি করা পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের জন্য এখন থেকেই আলোচনা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীন ছাড়া অন্য দেশগুলোর জন্য প্রায় সমান হারে শুল্ক নির্ধারণ করা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর জন্য এই শুল্ক ১৯ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা রক্ষা পেয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের উদ্যোক্তাদের আরও দক্ষ ও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কিন ক্রেতাদের বোঝাতে হবে যে, এই আমদানি শুল্ক আমদানিকারকদেরই বহন করতে হবে এবং পরিশেষে এটি চূড়ান্তভাবে ভোক্তাকেই বহন করতে হবে। এতে পণ্যের মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে, যা বিক্রি কমার সম্ভাবনা তৈরি করবে। এই পরিস্থিতিতে অর্ডার কিছুটা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতারা অন্যায্যভাবে দাম কমানোর চেষ্টা করতে পারেন। তবে, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর জন্যও শুল্কের হার প্রায় একই রকম বা তার চেয়ে বেশি হওয়ায়, এ মুহূর্তে শক্তিশালী দরকষাকষিই একমাত্র উপায়। কারণ, অন্য যে দেশেই যাক, তাদের কমপক্ষে আমাদের সমান শুল্ক দিতেই হবে। বরং আমাদের এখানে ক্রয়াদেশ দিলে চীন বা ভারত থেকে শুল্ক বিবেচনায় সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে।
মন্তব্য করুন