কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের

অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে লড়ব

সাক্ষাৎকার
অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে লড়ব

ডাকসু নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংসদ’ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ঐতিহাসিক ৯ দফার ঘোষক আব্দুল কাদের। নির্বাচিত হলে তিনি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা, জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব গড়ে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচন, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ অঙ্গীকার নিয়ে কালবেলার ঢাবি প্রতিনিধি লিটন ইসলামের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক

২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে এবারের নির্বাচনের পার্থক্য কোথায়?

আব্দুল কাদের: ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম ছিল। সেবার সবকিছু নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় আমরা ধরে নিয়েছিলাম ডাকসু সুষ্ঠু হবে না। কিন্তু ২০২৫-এর পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে রাজনৈতিক মনোভাব সম্পূর্ণ আলাদা। প্রত্যেক প্রার্থী অবাধে প্রচার করতে পারছেন। ভয়ের পরিবেশও নেই। তাই এবারের নির্বাচন একেবারেই ভিন্ন।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত পরিবেশ কেমন দেখছেন? কোনো শঙ্কা আছে কি?

আব্দুল কাদের: যারা ডাকসু বানচাল করতে চায়, তাদের মনে রাখা উচিত, ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশ আর আগের মতো নেই। শিক্ষার্থীদের রক্তের ওপর পা দিয়ে আপনারা চেয়ারে বসেছেন। আপনার প্রভুর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ উপেক্ষা করলে তা মেনে নেওয়া হবে না। যারা আপনাকে চেয়ারে বসিয়েছে, তারাই চাইলে নামিয়ে ফেলবে। ডাকসু বানচালের চেষ্টা হলে শিক্ষার্থীরা তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করবে।

কালবেলা: হলগুলোয় ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আপনাদের অবস্থান জানিয়েছেন আগেও। এখনো কি আগের অবস্থানে আছেন?

আব্দুল কাদের: আমরা চাইব না আমাদের হাত ধরে ক্যাম্পাসে গণরুম-গেস্টরুম কালচার ফিরুক। যেমনটা শিবির করছে। তারা যদি বলত, আমাদের হল কমিটি আছে, দাওয়াতি কাজ করছি, নামাজ পড়ছি, তাহলেও মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু তারা হল কমিটি গোপন রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর দেখাদেখি অন্যরাও শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক প্রোগ্রামে নিয়ে যাবে। যেমনটা আমরা দেখেছি, এস এম ফরহাদের বক্তব্যের পরপরই ছাত্রদল কমিটি দিয়েছে। আমরা হলে কোনোভাবেই গণরুম-গেস্টরুম ফিরতে দেব না।

কালবেলা: অনেক বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রার্থীদের ‘ব্যাশিং’ করা হচ্ছে। এটা ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলছে কি?

আব্দুল কাদের: আমাদের হার মানার কোনো কারণ নেই। সত্য প্রকাশের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে অল্পসংখ্যক মানুষ লড়াই করেছি। এখন অনেক বেশি শিক্ষার্থী এতে যুক্ত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সচেতন। ক্যাম্পাসে রাজনীতি ফিরবে কি না, তা নিয়ে তারা এরই মধ্যে মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে। আমার বক্তব্য নিয়ে শিবিরের নেতাকর্মীরা আমাকে গালাগাল করছে, জামায়াতের নেতাকর্মীরা আমার বাবা-মাকে অপমান করছে। কিন্তু যে-যাই বলুক, রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের এ সত্য প্রকাশের লড়াই আমি চালিয়ে যাব। এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত ফায়দা নেই। আমি আমার নিয়তের জায়গায় সৎ। সত্য প্রকাশে আমাদের লড়াই নিয়ে কেউ গুজব ছড়ালে সেটা আমার ভাবার বিষয় নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সচেতন। আমি মনে করি না, এসব তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে।

কালবেলা: নির্বাচনে ব্যয় কীভাবে সংকুলান করছেন?

আব্দুল কাদের: নির্বাচন করতে খুব বেশি খরচ হয় না। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগে, যা শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ম্যানেজ করতে পারে। আমাদের অনেকে এখনো টিউশনি করে। আবার আমরা কেউ গাড়ি ব্যবহার করি না। আমাদের হল সংসদ ও কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থীরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করছে কিংবা পরিবার থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করছে।

কালবেলা: প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

আব্দুল কাদের: আচরণবিধি লঙ্ঘনের সূচনা করেছে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামীম। মনোনয়ন সংগ্রহের সময় তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রবেশ করেন, যা আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এটা বিধিমালার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। শুধু তাই নয়, তিনি সেই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। আচরণবিধির প্রতি তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেও তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা দেখেছি, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রদলের প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ের পরে ফরম তুলতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিরোধ করে। ছাত্রদল এটাকে ‘মব’ বলে সংবাদ সম্মেলন করে এবং নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা গ্রহণের সময়সীমা এক দিন বাড়িয়ে নেয়। আমরা মনে করি, প্রশাসন যদি কোনো দলের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে, জুজুর ভয় না পেয়ে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট রক্ষা করতে পারে, তাহলে কোনো শঙ্কা থাকবে না।

কালবেলা: জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী ডাকসুতে আপনাদের অঙ্গীকার কী?

আব্দুল কাদের: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানের সূচনা। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের হামলার পর থেকে আন্দোলনের মোড় ঘুরে যায়। অভ্যুত্থানের পর আমাদের চিন্তা ছিল ক্যাম্পাসের আমূল পরিবর্তন আনা, রাজনৈতিক কাঠামো সুস্পষ্ট করা। আমরা চাই ভিসি, প্রোভিসি, প্রক্টর, প্রভোস্ট ও শিক্ষকদের নিয়োগ বিধিমালার আওতায় আনা হোক। শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা (আবাসন, খাদ্য, পাঠদান) নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পারি এবং একটি রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরি করতে পারি, তাহলে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব।

কালবেলা: শিক্ষার্থীরা আপনাকে কেন ভোট দেবে?

আব্দুল কাদের: আমাকে ভোট দেবে কি না, এটা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে মূলত শিক্ষার্থীরা আস্থার জায়গা চায়, ভরসা চায়। তারা শঙ্কায় আছে—আবারও গণরুম, গেস্টরুম ফিরে আসে কি না, ওই পরিস্থিতিতে কে তাদের পক্ষে কথা বলবে, তাদের পাশে দাঁড়াবে। আমি ২০১৯ সাল থেকে সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি, শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি, বিনিময়ে হামলা-মামলা, জেলজুলুম সহ্য করেছি। তা ছাড়া আমি এখনো নিয়মিত শিক্ষার্থী। আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছেন। শুধু ডাকসুকে সামনে রেখে এমফিলে ভর্তি হয়ে এখন নতুন করে ছাত্র হিতৈষী নেতা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন; অথচ আগস্টের আগে যাদের খোঁজ ছিল না, আগস্টের পরও ক্যাম্পাসে ছিলেন না তারা, জাতীয় রাজনীতি করে বেরিয়েছেন। এখন ডাকসু উপলক্ষে ক্যাম্পাসে ইন করেছেন, নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। শিক্ষার্থীরা এসব বোঝে। সব বিবেচনায় আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরা আমাকে আস্থায় রাখবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ প্রাক্তনকে ক্ষমা করে দিন 

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে বগুড়ায়

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি অনেকটাই ন্যায্য : উপ প্রেস সচিব

অধিকাংশ পাকিস্তানি পুরুষ অবিশ্বস্ত, দাবি পাক অভিনেত্রীর

বিমানবন্দরে ক্রিকেটার হেনস্তা, জড়িতদের ধরতে পুলিশের সহায়তা চেয়েছে বিসিবি

ছুটির দিনও ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’

গণমানুষের কণ্ঠস্বর এখন কালবেলা

শিবির প্যানেলের সনাতন ধর্মের সেই সুজন চন্দ্র বিজয়ী

বাংলাদেশে গুম ও নির্যাতনের বিচার নিয়ে জাতিসংঘের বার্তা

মাদ্রাসায় ক্রিকেট চালুর চিন্তা বিসিবির, যা বলছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

১০

রাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে বিজয়ী জাতীয় খেলোয়াড় নার্গিস

১১

১৭ হলের ভিপি-জিএস-এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের জয়

১২

আরিয়ান একদম সুইটহার্ট: ঈশিকা দে

১৩

পুরো কলেজে একজন পরীক্ষার্থী, তবু ফেল

১৪

জানা গেল দুপুর পর্যন্ত কেমন থাকবে আবহাওয়া

১৫

রাকসুর কেন্দ্রীয় ২৩ পদের ২০টিতেই শিবিরের জয়

১৬

রাকসুর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা, কোন পদে কারা জয়ী

১৭

রাকসু নির্বাচনের ফল নিয়ে ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী এষার প্রতিক্রিয়া

১৮

পদত্যাগ করছেন লাতিন আমেরিকার মার্কিন সামরিকপ্রধান

১৯

ফল পুনর্নিরীক্ষণ আবেদন শুরু, প্রতি বিষয়ে ফি ১৫০ টাকা

২০
X