কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অগ্নিগর্ভ নেপালে ২৪ ঘণ্টায় সরকার পতন

প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগ
অগ্নিগর্ভ নেপালে ২৪ ঘণ্টায় সরকার পতন

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয়কন্যাখ্যাত দেশ নেপাল। টানা দুই দিনের ব্যাপক বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে দেশটি। আন্দোলনে পুলিশের দমনপীড়ন থেকে সহিংসতা ছড়ায় দেশজুড়ে। গণবিক্ষোভের মুখে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এদিন দেশটির পার্লামেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বাসভবন এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোমবারের বিক্ষোভ থেকে মূলত এ আন্দোলনের সূত্রপাত। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ সত্ত্বেও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সামরিক বাহিনী সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।

নেপাল সরকার একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জেন-জি প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা রাস্তায় নেমে সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা দেশজুড়ে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রের অতিরিক্ত ক্ষমতার বিরুদ্ধে এক আন্দোলনের জন্ম দেয়, যা শেষ পর্যন্ত ওলি সরকারের পতন ডেকে এনেছে।

এই সংকট দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকারকে ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। কয়েকজন মন্ত্রী এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোও সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ভাবছে। গত ৪৮ ঘণ্টার বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ তরুণ নেপালিদের মনে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে আবারও এই হিমালয় রাষ্ট্রে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে।

জেন-জি আন্দোলনের সূচনা যেভাবে: গত সপ্তাহে নেপালের ক্ষমতাসীন জোট সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব কোম্পানি সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধন করেনি এবং ভুয়া তথ্য প্রচার ও অনলাইন প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল।

তবে সমালোচকরা বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। দেশটির সুশীল সমাজ ও বিরোধী নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, সরকারের এ পদক্ষেপ দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের সমালোচনা ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভিন্নমত দমনের কৌশল হিসেবে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখা গেছে তরুণ নেপালিদের মধ্যে। তাদের কাছে রাজনৈতিক অসন্তোষ প্রকাশ, আন্দোলন সংগঠিত করা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার প্রকাশের প্রধান মাধ্যম ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

দেশটির অনেক তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবার ও সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরছিলেন। তারা এমন এক সময়ে সরকারের আমলা ও রাজনীতিকদের মুখোশ উন্মোচন করছিলেন, যখন দেশটিতে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

সোমবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী; যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী এবং তরুণ পেশাজীবী কাঠমান্ডুতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় জেন-জি আন্দোলন, যা পরে মুহূর্তের মধ্যে দাবানলের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘দুর্নীতি বন্ধ করো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়’, ‘তরুণদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এতে তরুণদের এই আন্দোলন যে নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ক্ষোভকে যুক্ত করেছে, তা পরিষ্কার।

আন্দোলনের মূলে ‘নেপো কিডস’: সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নেপো কিডস’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে আন্দোলনের ডাক দেন বিক্ষোভকারীরা। এই হ্যাশট্যাগ দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শীর্ষ ট্রেন্ডে পরিণত হয়। সোমবার নেপালের হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ জানাতে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ সারা দেশে রাজপথে নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ, যারা ‘জেন-জি’ প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খ্যাতনামা সাময়িকী ‘টাইম’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নেপো কিডস’ শব্দটি হলিউডে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘নেপো বেবি’ থেকে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তারকাদের সন্তানদের পারিবারিক সম্পর্কের কারণে হলিউডে সুযোগ পাওয়ার স্বজনপ্রীতির চর্চাকে বোঝাতে এই পরিভাষা ব্যবহার করা হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের মূলে ছিল ‘নেপো কিডস’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ। ধনী রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তানেরা, যারা স্বজনপ্রীতির স্পষ্ট সুবিধাভোগী, তারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিলাসবহুল জিনিসপত্র, ব্যয়বহুল ছুটি কাটানো এবং সামগ্রিকভাবে তাদের জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপনের অভিযোগ আনেন।

সহিংসতায় রূপ নেয় বিক্ষোভ: দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুর বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন ঘিরে ফেলেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

ব্যাপক উত্তেজনা ও সংঘর্ষের মাঝে কিছু বিক্ষোভকারী সোমবার দেশটির সংসদ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস, জলকামান এবং পরে সরাসরি গুলি চালান।

সোমবার রাত পর্যন্ত দেশটিতে সহিংসতায় অন্তত ২০ জন নিহত এবং ২৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে সরকারি পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিক্ষোভের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সংসদ ভবন এলাকায় ভয়াবহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এবং পুলিশ ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হিমশিম খাচ্ছিল। দিনভর এই সহিংসতা শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরাহাওয়া, ভরতপুর, ইতাহারি ও দামাকের মতো বিভিন্ন শহরে।

এসব শহরের বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুর আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সরকারে সংস্কারের আহ্বান জানান। পরে কাঠমান্ডুতে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়। ললিতপুর ও ভক্তপুর জেলায়ও একই ধরনের বিধিনিষেধ জারি করা হয়।

মঙ্গলবার কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় তারা ‘সরকারি খুনিদের শাস্তি দাও’, ‘শিশু হত্যা বন্ধ করো’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।

সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে সুনির্দিষ্ট স্থাপনায় হামলা: গতকাল বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে দেন এবং শীর্ষ নেতাদের বাড়িঘরে একযোগে হামলা চালান। হামলার নিশানায় ছিল প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল, নেপালি কংগ্রেস নেতা শের বাহাদুর দেউবা ও মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দহলের বাসভবন।

এ ছাড়া দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু দেউবা রানার মালিকানাধীন একটি বেসরকারি স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুলটি জ্বলছে এবং বিক্ষোভকারীরা উল্লাস করছেন। দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডু ও কান্তিপুরে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় নেপালের সামরিক বাহিনীর ১২টি উড়োজাহাজে করে মন্ত্রীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫টি উড়োজাহাজ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল।

নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচলের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রখ্যাত ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সব ধরনের ফ্লাইটের উড্ডয়ন ও অবতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিক্ষোভকারীরা ড্রোন, আতশবাজি ও লেজার লাইট দিয়ে বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে স্থগিত করা হয়েছে। দেশীয় এয়ারলাইন্স বুদ্ধ এয়ারসহ অন্য কোম্পানিগুলোও ফ্লাইট বাতিল করে।

বিক্ষোভকারীদের দেওয়া আগুনে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর মৃত্যু: বিক্ষোভকারীদের দেওয়া আগুনে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী চিত্রকর নিহত হয়েছেন। সংবাদমাধ্যম খবরহাব জানিয়েছে, মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা তার বাড়িতে ঢুকে আগুন দেয়। ওই সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ঘরের ভেতর ছিলেন।

এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দিউবার বাড়িতে প্রবেশ করেন শত শত বিক্ষোভকারী। তারা তাকে ও তার স্ত্রীকে মারধর করেছেন। এতে শের বাহাদুরের মুখ থেকে রক্ত ঝরতেও দেখা গেছে। জনতার মার খেয়ে একটা সময় অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তাকে ঘাসের ওপর বসে থাকতে দেখা যায়। পাশে দেখা যাচ্ছে সেনা সদস্যরা তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ: দেশজুড়ে ভয়াবহ সহিংসতার মাঝেই পরিস্থিতি শান্ত করতে শেষ চেষ্টা হিসেবে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে কোনো ধরনের সহিংসতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। আমাদের অবশ্যই শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে। তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দেন।

কিন্তু পর্দার আড়ালে ক্রমবর্ধমান চাপের মাঝে পড়ে যান ওলি। দেশটির সেনাবাহিনীর একাধিক সূত্র বলেছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে ওলি সেনাপ্রধান আশোক রাজ সিগদেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামরিক সহায়তা চান তিনি। সিগদেল বলেন, তিনি (ওলি) যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন, তখনই সামরিক বাহিনী কেবল পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে পারে।

শেষ পর্যন্ত ওলি পদত্যাগে রাজি হন এবং প্রেসিডেন্ট পাউডেলের কাছে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে নেপালে প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর কেপি শর্মা ওলির চতুর্থ মেয়াদের অবসান ঘটে।

পদত্যাগের আগে একেবারে শেষ সময় ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা হিসেবে কয়েকটি ঘোষণা দেন ওলি। সোমবারের সহিংসতার ঘটনা তদন্তে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশসহ একটি তদন্ত কমিটি গঠন, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ঘোষণা দেন তিনি। যদিও তার পদত্যাগের পর এসব প্রতিশ্রুতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ওলির পদত্যাগের পরও বিক্ষোভ অব্যাহত, সংলাপের আহ্বান সেনাবাহিনীর: প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিসহ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করলেও বিক্ষোভ চলছে। কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের মধ্যে সেনাবাহিনীসহ দেশটির প্রধান নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জরুরি রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।

সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওবার্তায় বলেন, জাতীয় ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করা এবং প্রাণহানি ও সম্পদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, তা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়—যদি সহিংস কর্মকাণ্ড, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত থাকে, তবে রাত ১০টা (স্থানীয় সময়) থেকে সেনাসহ সব নিরাপত্তা সংস্থা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে বাধ্য হবে।

নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রাজারাম বসনেত স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু গোষ্ঠী বর্তমান সংকটকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ নাগরিক ও সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষতি করছে, লুটপাটে লিপ্ত হচ্ছে এবং অগ্নিসংযোগ ঘটাচ্ছে। যদি এই কর্মকাণ্ড বন্ধ না হয়, তবে নেপাল সেনা ও অন্যান্য সব নিরাপত্তা সংস্থা রাত ১০টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকবে।

আলোচনায় বালেন্দ্র শাহ ও সুদান গুরুং: এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন মূলত হামি নেপাল নামের একটি এনজিওর সভাপতি সুদান গুরুং। তার ডাকে সোমবার লাখো নেপালি রাজপথে নামেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এনজিওর মাধ্যমে দুর্যোগের সময়ে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি সরকারের দুর্নীতির কট্টর সমালোচকও। চলমান আন্দোলনের ডাক দিয়ে রীতিমতো নায়ক বনে গেছেন গুরুং। এদিকে পরবর্তী নেপালি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বালেন্দ্র শাহকে চান বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোর দাবি উঠেছে। তিনি মূলত কাঠমান্ডুর মেয়র। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করা বালেন্দ্র এক সময় হিপ-হপ গানের র্যাপার ছিলেন। তিনি শুরু থেকে এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করে আসছেন।

নেপালের বর্তমান সরকারের ভবিষ্যৎ কী: ওলির মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক সোমবার রাতেই পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার দেশটির কৃষিমন্ত্রী রামনাথ অধিকারী পদত্যাগ করেছেন। যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী তেজু লাল চৌধুরী এবং পানিসম্পদমন্ত্রী প্রদীপ যাদবও পদত্যাগ করেছেন। সংসদ সদস্য আসিম শাহ পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রদীপ পাউডেল পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ভাঙনের মুখে জোট সরকার: দেশটির চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ভাঙনের মুখে পড়েছে ক্ষমতাসীন জোট সরকার। দেশটির সংসদের ২৭৫ আসনের মধ্যে ৮৯ আসনের দখল রয়েছে নেপালি কংগ্রেস পার্টির। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা শেখর কৈরালা তার সমর্থকদের সরকার থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। মাওবাদী সেন্টারের ৩২ আসন রয়েছে। তারাও জোট সরকার থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে।

এ ছাড়া জনতা সমাজবাদী পার্টিসহ অন্য কয়েকটি ছোট দলও সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংসদে এসব দলের প্রায় ১০টি আসন রয়েছে। পাশাপাশি ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির (এনআইএসপি) ২১ জন এমপি একসঙ্গে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এই দলটি বিক্ষোভের কট্টর সমর্থক এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে দেশে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

এতে জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ১৩৮ আসনের নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো এখন অস্থায়ী সরকার গঠন এবং আগাম নির্বাচনের দাবি তুলছে। সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা নেওয়া থেকে বিরত রয়েছে। এদিকে, বিক্ষোভকারীরা এখনো রাস্তায় অবস্থান করছেন এবং বাস্তব রাজনৈতিক পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত পিছু হটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর যে প্রতিক্রিয়া জানালেন ট্রাম্প 

অবরোধে ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ২১ জেলা

আজ থেকে রেকর্ড দামে বিক্রি হবে স্বর্ণ

ডাকসুতে জয়ের পর ছাত্রশিবির সভাপতির স্ট্যাটাস 

আবিদুলকে কত ভোটে হারালেন সাদিক কায়েম 

বিপুল ভোটে বিজয়ী তন্বি

দেশব্যাপী লোডশেডিং হতে পারে, থাকবে যতদিন

কাতারে ইসরায়েলি হামলার পর যে প্রতিক্রিয়া জানাল সৌদি আরব

প্রচার শেষ, বৃহস্পতিবার জাকসু নির্বাচন

শীর্ষ তিন পদেই শিবির সমর্থিতরা

১০

নেতানিয়াহুকে থামানোর শক্তি ট্রাম্পের নেই : মার্কিন আইনপ্রণেতা

১১

আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, প্রবাস থেকে ৩ নেতার দুঃখ প্রকাশ

১২

ডাকসুর এজিএস মহিউদ্দীন

১৩

হামীম-মেঘমল্লারকে হারিয়ে ডাকসুর জিএস ফরহাদ

১৪

ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম

১৫

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১৬

কিরগিজস্তানে প্রতারণার শিকার ১৮০ বাংলাদেশি

১৭

‘সবটুকু দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত রক্ষা করব’

১৮

কাতারে হামলায় অংশ নেয় ইসরায়েলের ১৫ যুদ্ধবিমান, কয়েক সেকেন্ডে ছোড়া হয় ১০ গোলা 

১৯

এক জেলায় হরতাল, এক জেলায় অবরোধ চলছে

২০
X