পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) সামুদ্রিক শৈবাল (সি-উইড) ব্যবহার করে খাবার ও প্রসাধনী তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় শৈবাল থেকে আইসক্রিম, জিলাপি, বিস্কুট, মিষ্টি, সচেজ, এমনকি জাপানি খাবার ‘সুশি’র নোরি শিট তৈরি সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি ফুড সাপ্লিমেন্ট ট্যাবলেট, সাবান ও উপটানসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদনেও সফল হয়েছেন তারা।
গবেষণায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, এসব খাবারের স্বাদ ভিন্নধর্মী এবং বাজারজাত হলে এর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে যদি শৈবালের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করা যায়, তবে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গবেষকরা জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে শৈবাল চাষ ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা গেলে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে দেশে নতুন একটি রপ্তানি খাতও গড়ে উঠতে পারে। উপকূলের অবহেলায় জন্ম নেওয়া সামুদ্রিক শৈবাল এখন যেন অমিত সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে— যা বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির চিত্র।
শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, আমি সি-উইড আগে শুধু শুনেছি, এবার খেয়ে দেখলাম সত্যিই স্বাদ অসাধারণ। এগুলো বাজারজাত করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাজীব সরকার বলেন, সামুদ্রিক শৈবাল আসলে একধরনের সামুদ্রিক সবজি। এতে উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নারীদের আয়রনের ঘাটতি পূরণে কার্যকর। এমনকি মানসিক হতাশা দূর করতে সহায়ক।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া প্রতি কেজি শুকনো শৈবাল ০.৫ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, যা পরিবেশ রক্ষাতেও ভূমিকা রাখে। শৈবাল থেকে বায়োপ্লাস্টিক ও বায়োডিজেল তৈরির সম্ভাবনা নিয়েও কাজ চলছে।
পবিপ্রবির খাদ্য মাইক্রোবায়োলজি ও নিরাপত্তা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং প্রাণিজ খাদ্যের ওপর চাপ কমাতে বিকল্প হিসেবে সামুদ্রিক শৈবাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এআইআরডির সহকারী গবেষক ড. মো. আরিফুল আলম বলেন, কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে শৈবালের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। এতে থাকা ওমেগা–৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড শিশুদের মেধা বিকাশে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ও হজমে সহায়ক। এই সম্ভাবনা সারা দেশে ছড়িয়ে দিলে উপকূল হতে পারে টেকসই উন্নয়নের রোল মডেল।
লুথ্যারন হেলথ কেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তারিয়া জান্নাত বলেন, সি-উইডে থাকা হাই ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি, ভিটামিন ও নানা খনিজ উপাদান মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি ত্বক ও চুলের যত্নে এটি অসাধারণ কার্যকর।
মন্তব্য করুন