শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের কোর্টে গড়াচ্ছে বল

জুলাই জাতীয় সনদ
সরকারের কোর্টে গড়াচ্ছে বল

জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গণভোটে সম্মত হলেও গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো বিভক্ত। গত বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ সময় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করলেও গণভোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে দলগুলোর মতবিরোধ রেখেই কমিশন আলোচনা শেষ করেছে। বিশেষত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিপরীতমুখী অনড় অবস্থানের মুখে ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। ফলে গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখন অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বল এখন সরকারের কোর্টে। অথচ সরকার এতদিন রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলো এখন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে কমিশন জানিয়েছে, আগামী বুধবার (১৫ অক্টোবর) জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হবে। জুলাই সনদের স্বাক্ষর ছাড়াও কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পরাজয় সবচেয়ে বড় অর্জন। এই ঐক্য অক্ষুণ্ন রাখার কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া দলগুলোকে এক জায়গায় আনা সরকার ও কমিশনের জন্য বিরাট সাফল্য মনে করেন বিশ্লেষক।

উল্লেখ্য যে, এরই মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। তবে সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে ঝুলে যায় জুলাই সনদ প্রণয়ন। সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। এর পাশাপাশি কমিশন গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। গত বুধবার পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। এর মধ্যে গত ৫ অক্টোবর (রোববার) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে দলগুলো ঐকমত্য হয়। কিন্তু গণভোট কবে ও কীসের ভিত্তিতে হবে, ভিন্নমতের প্রস্তাবগুলোর কী হবে—এগুলো নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ছিল। এমন অবস্থায় গত বুধবার বিকেল ৩টার দিকে দলগুলোর সঙ্গে মুলতবি আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। শুরুতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ দলগুলোকে গণভোটের সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে দীর্ঘ আলোচনায় দলগুলো কমবেশি আগের অবস্থানই তুলে ধরে। ফলে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হয়নি।

সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন : জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিনের আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আলোচনা শেষ হয় রাত সোয়া ১১টায়, যা বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ওই আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

শেষ দিনের আলোচনায় দলগুলোকে মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। বিএনপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের পক্ষে অনড় থাকে। আর জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত তথা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব প্রশ্নেও নিষ্পত্তি হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতকে সমন্বিত করে সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরামর্শ দেবে কমিশন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতকে বিবেচনা করে ঐকমত্য কমিশন যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সরকারকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট পরামর্শ দিতে আলোচনায় রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো মত দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাঁচটি বৈঠকের আলোচনায় প্রাপ্ত মতামতকে সমন্বিত করে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে এবং এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে তা অবহিত করবে।

তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে পৃথক ব্যালটে গণভোট দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট করার পক্ষে মত দিয়েছে। কমিশন মনে করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য ত্রয়োদশ সংসদকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রদানের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যত ঐকমত্য রয়েছে।

এ ছাড়া সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে পাঁচটি মতামত দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। মতামতগুলো হচ্ছে—জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নে একটি আদেশ জারি করতে হবে। এই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য বা বৃহত্তর ঐক্য আছে এবং যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) আছে গণভোটে, এ দুটি বিষয়ে আলাদা প্রশ্ন থাকবে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। পরিষদ আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটের অনুমোদন সাপেক্ষে জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্কারগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত

জানা যায়, বুধবারের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেওয়ার পক্ষে মত তুলে ধরে বিএনপি। পাশাপাশি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বেশকিছু দল সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেওয়ার পক্ষে। তবে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি বলছে নির্বাচনের আগেই গণভোট করতে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের অল্প সময় বাকি আছে। এর আগে গণভোটের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজন করা সম্ভব নয়। এতে অতিরিক্ত অর্থও খরচ হবে। তা ছাড়া আগে গণভোট করার প্রস্তাব জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়াস হবে।

আগামী সংসদ জুলাই সনদের বাইরে সংস্কার করতে পারবে না, তা নয় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রয়োজনে আরও সংশোধনী আনতে পারবে। জুলাই সনদে সব দলের ভিন্নমতে কে কী বলেছে, তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত থাকতে হবে। আর সনদের অঙ্গীকারে একটি বিষয় যুক্ত করতে হবে, যেসব দলের যে যে বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো তারা নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে সে দল তাদের ভিন্নমত অনুসারে প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে পারবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে জুলাই সনদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের কথা বলেছে। কিন্তু সেটা করতে হলে প্রথম অধিবেশন কত লম্বা হবে, যদি দুই বছর লাগে? এ ক্ষেত্রে সংসদকে সময় বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না। সংসদের স্বাধীনতা থাকতে হবে, প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। এখানে যথা শিগগির সম্ভব আগামী সংসদ সনদ বাস্তবায়ন করবে, এভাবে এটি উল্লেখ করা যেতে পারে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বা মধ্যভাগে গণভোট হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন গণভোট হলে কিছু জটিলতা তৈরি হবে। তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো সনদ থেকে বাদ দিয়ে গণভোট দিলে তা ঠিক হবে না। কোনো দলের মতামত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।

ঐকমত্য কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বিশেষ সংবিধান আদেশ বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রয়োজন আছে। এই আদেশে গণভোটের কথা বলা থাকবে। আদেশের তপশিলে জুলাই সনদ থাকবে। এই আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে। তিনি বলেন, আগামী সংসদের দুটি ক্ষমতা থাকবে। একটি সাধারণ সংসদের ক্ষমতা, অন্যটি কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা। সংসদের প্রথম অধিবেশনে এই ক্ষমতা থাকবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে সাধারণ সংসদ কাজ করবে। এভাবে হলে সংস্কার টেকসই হবে। আর যেসব বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো না হলে সংস্কার মুখ থুবড়ে পড়বে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, এমন প্রক্রিয়ায় যাওয়া ঠিক হবে না, যাতে সংস্কারগুলো ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। সংস্কারকে টেকসই করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যে নামেই হোক, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ আগে জারি করতে হবে। এই আদেশের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে কি না—এই প্রশ্নে গণভোট হবে এবং আগামী সংসদকে বিশেষ কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার (গাঠনিক ক্ষমতা) দিতে হবে। কারণ, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংস্কার করা হচ্ছে। এটি করতে হলে আগামী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দিতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। কারণ, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে গণভোট গুরুত্ব হারাবে।

১৫ অক্টোবর স্বাক্ষর হবে জুলাই সনদ

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে ঐকমত্য কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে কমিশনের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ১৫ অক্টোবর (বুধবার) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরিত হবে। ঐতিহাসিক এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের পাঁচটি বৈঠকে প্রাপ্ত মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয় যে, বিশেষজ্ঞরা এবং রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রাপ্ত অভিমত বিশ্লেষণ করে খুব শিগগির বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত সুপারিশ এবং চূড়ান্ত জুলাই সনদ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে। গতকালের বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় অংশ নেন।

বিশ্লেষক অভিমত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার কালবেলাকে বলেন, প্রথম বিষয় হলো যে, এরই মধ্যে ঐকমত্য কমিশন দুটি প্রধান সফলতা এনেছে। একটা হলো যে, রাজনৈতিক দলগুলোকে এক বছর ধরে একটা বিষয়ে এবং সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য এক করতে পেরেছে। এটি বিরাট অর্জন। আর দ্বিতীয়ত হলো—মোটামুটি তারা ৬০-৬২টি বিষয়ে একমত হয়েছেন। যদিও অল্প কিছু ইস্যুতে নোট অব ডিসেন্ট আছে। গণভোটে সবাইকে একমত করানোও বড় সফলতা। বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর এরকমভাবে এক টেবিলে ধারাবাহিকভাবে বসা এবং একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারাটা কিন্তু জাতি এবং সরকারের জন্য বিরাট সফলতা। যেভাবেই হোক, এটি অর্জন হয়েছে। এটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আছে। তবে নতুন কোনো প্রক্রিয়া নিতে পারে। সেটা কী? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সেটা তো ১৯৯১ সালে আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। তখন তো এরকম অন্তর্বর্তী সরকার ছিল না। কিন্তু ওটাও তো একটা বিরাট সংকট ছিল।

মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৯৯১ সালেও কিন্তু অল্প সময়ের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ছিল। তখন কিন্তু আমরা করেছি। আমরা যদি ওই সময়ে সংবিধান সংস্কার করতে পারি এবং আমরা একটা মৌলিক পরিবর্তন এনেছি। মানে রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থা থেকে দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমরা সংসদীয় ব্যবস্থায় এসেছি। এখন কেন আমরা ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে আসতে পারব না? তখন তো আমাদের রেফারিও ছিল না ঐকমত্য কমিশন বা সরকারের মতো। তখন কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে খুব সহজেই তিন মাসের মধ্যে কমপ্লিট করতে পেরেছে। সুতরাং একটা প্রক্রিয়া তো প্রতিষ্ঠিত। কাজেই নতুন বিতর্কে না গিয়ে আমরা একটা সাংবিধানিক গণভোট আগে করেছি। সেই একই পদ্ধতিতে করি না কেন?

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া

রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। সেগুলো হলো—সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে এই কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই কমিশনের সভাপতি এবং কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে কমিশন দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বে আলোচনা করে। প্রথম পর্বে গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে কমিশন। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ২ জুন থেকে ৩০টি দলকে একসঙ্গে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কমিশনের লক্ষ্য ছিল জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ সই করা; কিন্তু তা হয়নি। ৩১ জুলাই দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ হয়। ২০টি মৌলিক প্রস্তাবের মধ্যে অন্তত ৯টিতে কোনো কোনো দল ভিন্নমত দেয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বঙ্গ ফ্লেভার অ্যান্ড ফ্র্যাগরেন্স পরিদর্শনে জাইকা প্রতিনিধিদল

চাকসুতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য থাকছে আলাদা বুথ

বিশ্ববাজারে আবারও স্বর্ণের রেকর্ড দাম

আরও ছয় পুলিশ পেলেন বিপিএম ও পিপিএম পদক

ইসরায়েলি পার্লামেন্টে ট্রাম্পের ভাষণে হট্টগোল, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবি

ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু

গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, আসামিরা পলাতক

সংকটে মালদ্বীপ প্রবাসীরা, দেশত্যাগের মুখে ২৭ হাজার শ্রমিক

সৌদি থেকে ফেরত আনা হলো ৩৮ কোটি টাকা

আলু যেন গলার কাঁটা

১০

এবার ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে ইসিতে আরেক দলের আবেদন

১১

অকেজো সরঞ্জাম, ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা

১২

দাম বাড়ল ভোজ্যতেলের

১৩

চমেকে এসি বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু

১৪

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ভয়াবহ সহিংসতা, নিহত ৫

১৫

ব্যক্তির নাম সরিয়ে ১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন

১৬

এবার সব সরকারি কলেজে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

১৭

বর্ণাঢ্য আয়োজনে স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগে নবীনবরণ

১৮

খুলনা সদর আসনে ধানের শীষের দাবিদার যারা

১৯

দিনদুপুরে প্রকাশ্যে যুবককে গলা কেটে হত্যা

২০
X