আতাউর রহমান
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ০২:১৮ এএম
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অনলাইনে কথিত এমএলএম

‘গোল্ডেন রিচ’ অ্যাপের ভেলকিতে সর্বনাশ

‘গোল্ডেন রিচ’ প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার চার ব্যক্তি। সৌজন্য ছবি
‘গোল্ডেন রিচ’ প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার চার ব্যক্তি। সৌজন্য ছবি

রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকার আবু সাঈদ ফেসবুকে গোল্ডেন রিচ নামে অনলাইন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন দেখেন। তাতে বলা হয়, এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার ৯০ দিনের মধ্যেই দ্বিগুণ লভ্যাংশ পাওয়া যাবে। কক্সবাজার আর কুয়াকাটায় রিসোর্টে বিনিয়োগ করে সেখান থেকে এই লভ্যাংশ দেওয়া হবে। ওই বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অ্যাপের মাধ্যমে তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন। তবে বিনিয়োগের লভ্যাংশ তুলতে গিয়ে দেখেন গোল্ডেন রিচের ভেলকিতে সর্বনাশ হয়েছে তার!

শুধু আবু সাঈদই নন, অনলাইনে কথিত এই এমএলএম ব্যবসার নামে গোল্ডেন রিচের ভেলকিতে সর্বনাশ হয়েছে কয়েক হাজার ব্যক্তির। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া কয়েক কোটি টাকা, পাচার হয়ে গেছে দেশের বাইরে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ এই গ্রুপটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। এরই মধ্যে গোল্ডেন রিচের কান্ট্রি ম্যানেজার, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর আর এজেন্টসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি। তবে কথিত ওই এমএলএম কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিঠুন কুমার রায় পলাতক। বাংলাদেশে ছাড়াও ভারতে তার নাগরিকত্ব রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, তারা এখনো তদন্তে জানতে পেরেছেন গোল্ডেন রিচ নামের অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে অন্তত ৩ হাজার ব্যক্তির সর্বনাশ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেশি। এ চক্রটি গত ১ বছরে ৬ কোটি টাকা হাতিয়েছে। এসব টাকার বেশির ভাগই ক্রিপ্টো কারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় রূপান্তর করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এ চক্রের মূলহোতা মিঠুন কুমার রায়কে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাকে পাওয়া গেলে বিস্তারিত তথ্য মিলবে।

অ্যাপের ভেলকিবাজি: গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গোল্ডেন রিচ নামে অনলাইন এমএলএম অ্যাপের মালিক পলাতক মিঠুন। তিনি এই অ্যাপকে ঝুঁকিমুক্ত ও বিশ্বস্ত অনলাইন ইনভেস্টের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রচারণা চালান। মাত্র ৯০ দিনে বিনিয়োগের দ্বিগুণ মুনাফা দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তবে টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচার করেন। চক্রটি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ওই বিজ্ঞাপন দেখে তাদের ফাঁদে কেউ পা দিলে প্রথমে গোল্ডেন রিচ অ্যাপ ইনস্টল করতে হয়। এরপর নিজের নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এরপরই অ্যাকাউন্টের মালিককে এরা একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে। সেখান থেকে বলা হয়, অ্যাপ সাইন ইন করে ১ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে একটি ‘রোবট’ কিনলে ৯০ দিনের মধ্যে অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা জমা হবে। বিনিয়োগের বিনিময়ে কিছু পয়েন্ট পাওয়া যায়, যাকে প্রতারকরা রোবট বলে। যদিও ওই পয়েন্ট শুধুই সংখ্যামাত্র। একজনের আইডির রেফারেন্স কোড ব্যবহার করে অ্যাপে নতুন আইডি খুললে ২০০ টাকা বোনাস দেওয়ার কথা বলা হয়। এভাবে চলতে থাকলে লেভেল ১০ পর্যন্ত প্রথমজন বোনাস পেতে থাকবেন। এভাবে অ্যাপসের মাধ্যমে আইডি খুলে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর পর তা ভার্চুয়াল মুদ্রায় রূপান্তর করে পাচার করা হয়। যদিও এর আগে বলা হয়, কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় কোম্পানিটি রিসোর্টে বড় বিনিয়োগ করেছে। সেখান থেকে দেওয়া হবে লভ্যাংশ।

পাঁচ ধাপে চলে প্রতারণা : গোয়েন্দা সাইবার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এ চক্রের প্রধান মিঠুন। তিনি বেশির ভাগ সময়ে বিদেশে থেকে অ্যাপটি অপারেট করেন। এই প্রতারণার কাজ চালাতে পাঁচটি ধাপ রয়েছে। মিঠুনের পরের ধাপে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে রয়েছেন তরিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তৃতীয় ধাপে রয়েছে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। গ্রেপ্তার তাজিরুল ইসলাম হচ্ছেন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। পরের ধাপের নাম এজেন্ট। গ্রেপ্তার রিয়াজুল ইসলাম ফকির একজন এজেন্ট। সর্বশেষ ধাপের নাম হলো গ্রুপ। গ্রুপের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাস্টমার সন্ধানের কাজ করেন।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের এডিসি জুনায়েদ আলম সরকার দৈনিক কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন জেলায় যারা বেশি রোবট ক্রেতা অর্থাৎ গোল্ডেন রিচ অ্যাপ ইনস্টল করে আইডি খুলতে পারতো—কান্ট্রি ম্যানেজার তরিকুল তাদের থেকে বাছাই করে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নিয়োগ দিতেন। এই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডররা আবার এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের পরিচালনা করত। এই এজেন্টরা ১০ জন করে একটি গ্রুপ করত। এভাবে সারা দেশেই প্রতারণার জাল ফেলা হয়।

অপর এক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার কান্ট্রি ম্যানেজার তরিকুল এক সময় তার তার ছোট ভাইয়ের মোবাইল ফোনের দোকানে চাকরি করতেন। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর তাজিরুল ইন্টারনেটের ব্যবসা করতেন। আর এজেন্ট রিয়াজুল ইসলাম ফকির এক সময় বাসের হেলপার ছিলেন। পলাতক মিঠুন জিবি কয়েন নামে ভার্চুয়াল মুদ্রা চালু করেছেন। এই মুদ্রা অনলাইনে ছাড়ার জন্য সম্প্রতি ভারতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও করেন। গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যোগ দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি প্রকাশ করে স্মৃতিচারণ করলেন বাঁধন 

বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মেহেরপুরে পৌরসভা ঘেরাও

বিশ্ব মশা দিবস / মশা দমনে সচেতনতাই আনবে কাঙ্ক্ষিত সফলতা

কালীগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

চার্টার্ড সেক্রেটারি : ব্যতিক্রমধর্মী ও সময়োপযোগী এক পেশা 

সিজিএসের সংলাপে বক্তারা / রাজউক দুর্নীতিমুক্ত না হলে ঢাকা বাঁচবে না

যাদের নিয়ে উমামার প্যানেল ঘোষণা

বিয়ের পর স্বাস্থ্য ও ভুঁড়ি বাড়ে কেন? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজে ম্যাচ অফিসিয়াল হিসেবে থাকছেন যারা

ছাগল হত্যার অভিযোগে যুবক কারাগারে

১০

ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পে বিশাল নিয়োগ, ৮ম শ্রেণি পাসেও আবেদন

১১

ড. সরোয়ার ও আসিফ মাহতাবকে হত্যার হুমকি ইস্যুতে হেফাজতের বিবৃতি 

১২

গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের হুমকি, গ্রাহকদের যে বার্তা দিল তিতাস

১৩

পাকিস্তানি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেলেন বাংলাদেশি চিকিৎসক

১৪

আরও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছে ইরান

১৫

রহস্যময় ছবির পাশে লেখা ‘আম্মু-আব্বু আমারে মাফ করে দিও’

১৬

এবার এনবিআরের ৩ কর্মকর্তাকে বদলি

১৭

পানি উঠেছে অমিতাভ বচ্চনের বাংলোতে 

১৮

মেসের কক্ষই যেন ‘মিনি সেটেলমেন্ট অফিস’, বিছানার নিচে হাজারো খতিয়ান

১৯

ভারতে নতুন নিয়মে পদ হারাবেন প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী, আসছে বিল

২০
X