দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুখ দেখে কাউকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নৌকার ভোটের সঙ্গে প্রার্থীর নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে কি না, তা যাচাই করেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। নিজ যোগ্যতায় পাস করতে পারবে—এমন যোগ্যদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এমন কঠোর বার্তা দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র কালবেলাকে জানায়, নিজ নিজ এলাকায় জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এলাকামুখী হতেও নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর দলের ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিভাগীওয়ারী প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ প্রতিবেদন ধরে ৮ বিভাগের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এতে তৃণমূলে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্থান পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, নির্বাচনের আগে তৃণমূলের কোথাও দ্বন্দ্ব থাকুক, সেটি দেখতে চাই না। বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে নেতাদের সতর্ক করেন দলীয় সভাপতি। তিনি বলেন, তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীদের কথা শুনুন।
কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে তা মিটিয়ে ফেলুন। যদিও কোথাও সমস্যা মেটাতে সক্ষম না হন, আমাকে জানাবেন। যারা এই সমস্যা সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আমার শক্তি। তাই দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে হবে। দলের যেসব বিভাগ, জেলা-উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে, সেখানে কমিটি গঠন দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন তিনি। যেখানে সম্মেলন হয়নি, সেখানে নির্বাচনের আগে সম্মেলনের প্রয়োজন নেই। শাখা কমিটিগুলোতে দলের ত্যাগী ও পোড়খাওয়া নেতাদের রাখতে নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দলের পরীক্ষিত কর্মীদের অর্থ-বিত্তের অভাব থাকতে পারে, কিন্তু তাদের দল থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। তাদের রেখেই কমিটি করতে হবে।
সূত্র জানায়, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে দলে ঐক্য বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র করেই আওয়ামী লীগকে কেউ রুখতে পারবে না। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, সেই নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের নিজ যোগ্যতায় পাস করে আসতে হবে। দলের মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে, কিন্তু শত ফুলের মধ্য থেকে সবচেয়ে সুন্দর ফুলটিই তিনি বেছে নেবেন বলেও পুনর্ব্যক্ত করেন।
এ সময় বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন ঠেকানোর নামে জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাসের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে এলাকার জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ নেতাদের যেতে নির্দেশ দেন তিনি। প্রচারে বিএনপির দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরারও নির্দেশ দেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চরিত্র হননের বিষয়ে নিষেধ করেন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে গিয়ে বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে নিষেধ করেন তিনি।
বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এক সংসদ সদস্যের ছেলের মন্দিরের জায়গা দখল, সিরাজগঞ্জ ও সিলেটে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা তুলে ধরেন। বৈঠকে মাদারীপুর আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের নিবৃত করেন। তিনি দুজনকেই দ্বন্দ্বের কথা ভুলে কাজ করার পরামর্শ দেন।
মন্তব্য করুন