আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে ১৪ দল। শরিকরা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি আগেই ঠিক করার কথা বললেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ কতগুলো আসনে এককভাবে নির্বাচন করবে এবং শরিকদের কতটি আসন ছেড়ে দেবে, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় রয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। যদিও শরিকদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা জানান, গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমাদানের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ১৪ দলের একাধিক নেতাকে বলা হয়েছিল, মনোনয়ন ফরম বিতরণ কার্যক্রমের পর এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এ কারণে তারা ধারণা করছেন, আগামী সপ্তাহে আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে বৈঠক হবে।
জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের দরকষাকষি হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দেড় মাস বাকি। এ কারণে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করে নিজ নিজ প্রার্থী নিয়ে মাঠে নির্বাচনী প্রচারে নামতে চান ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা। এজন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে পৃথক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন তারা।
এ বিষয়ে আমির হোসেন আমু কালবেলাকে বলেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ নেই। বিষয়টি নেত্রী দেখবেন। ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আছে। কবে নাগাদ আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠক হতে পারে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা যাচ্ছে না। তবে আমি বিষয়টি আবারও নেত্রীকে বলব।
আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আওয়ামী লীগ এককভাবে আড়াইশ আসনে নির্বাচন করবে। বাকি আসনগুলো শরিকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজন হলে শরিকদের জন্য আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে আওয়ামী লীগ। ধারণা করা হচ্ছে, এবার ১৪ দলের জন্য ১৫-১৬টি আসন ছাড়তে পারে আওয়ামী লীগ। তবে ১৪ দলের পক্ষ থেকে আরও বেশি আসন চাওয়া হবে। এ ছাড়া বিকল্পধারা ও জাতীয় পার্টির জন্যও ছেড়ে দেওয়া আসন সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জনা গেছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গত ১৭ নভেম্বর নির্বাচনী সভা করেছে। এরপর ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর কাছে তারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য চিঠি দিয়েছে। যদিও গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে ওয়ার্কার্স পার্টি এবার ২৫ থেকে ৩০টি আসন চাইবে।
দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন কালবেলাকে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে শিগগির আমাদের আলোচনা হবে। সেখানে সবকিছু ঠিক হবে। তিনি বলেন, এবার আমরা বেশি আসন চাইব।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন বোর্ড, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে। গত শনিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত তারা দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু কালবেলাকে বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা গতবারের চেয়ে বেশি আসন দাবি করব।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এ বিষয়ে বলেন, আমি এবার আমার জন্য চট্টগ্রামের একটি আসন চাইব।
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি একটি রাজনৈতিক সভায় থাকায় এ বিষয়ে কথা বলতে পারেননি।
১৪ দলীয় জোট গঠনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এ পর্যন্ত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন জোটের নেতারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলকে মোট ১৩টি আসন দেওয়া হয়। এর মধ্যে জাসদ (ইনু) ৩টি আসন, জাসদ (আম্বিয়া) দুটি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জেপি মঞ্জু একটি ও তরীকত ফেডারেশনকে দুটি আসন দেওয়া হয়। নির্বাচনের সরাসরি ভোটে ১৪ দল থেকে ৮ জন সংসদ সদস্য হন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির ৩, জাসদের ৩, তরীকত ফেডারেশনের ১ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-জেপির (মঞ্জু) একজন। সংরক্ষিত নারী আসনে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একজন করে সংসদ সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির ২৩ জন ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের দুজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির ৪ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। নির্বাচনের পর জাসদ (আম্বিয়া) ১৪ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়।
দশম জাতীয় নির্বাচনে ১৮ এবং নবম জাতীয় নির্বাচনে ১৪টি আসন জোটের শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন জোট শরিক দলের ৫ নেতা।