প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের নিয়ে ‘সচিব-সভা’ অনুষ্ঠিত হবে আজ (সোমবার)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে সকাল ১০টায় এ সভা হবে। সভায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঠাঁই পাওয়া ১১ অগ্রাধিকার আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগান দিয়েই এবারের ইশতেহার ঘোষণা করেছিল দলটি।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান কালবেলাকে বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আলোচনা হবে কি না, তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই জানেন। তবে আমরা কৃষি, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প এবং জননিরাপত্তাসহ ৫-৬টি মন্ত্রণালয়-বিভাগকে তাদের বিষয়গুলো উপস্থাপন করার প্রস্তুতি নিতে বলেছি। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের অনুমতি দেন আমরা কথা বলতে পারব। তিনি অনুশাসন কিংবা কোনো নির্দেশনাও দিতে পারেন।
সাধারণত সচিব-সভাকে প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হিসেবে ধরা হয়। কারণ এ সভায় সব মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিবরা উপস্থিত থাকেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবদের সরাসরি কথা হয়। নানা-সমস্যা সম্ভাবনা ও সমাধান নিয়ে মুখোমুখি আলোচনা করেন সচিবরা। অতীতের সচিব-সভাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবার কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করাসহ নানা বিষয়ে অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আবারও দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার বক্তব্য দিচ্ছেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে আজকেও সভায়ও তিনি দুর্নীতি নির্মূলে কর্মকর্তাদের সতর্ক করবেন।
তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সভায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতহার বাস্তবায়নে সচিবদের সার্বিক সহযোগিতা চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ ইশতেহার বাস্তবায়ন সচিবদের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে। কারণ তারা প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইশতেহারে বেকারদের কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু সরকারি চাকরিতেই প্রায় ৪ লাখ পদ শূন্য। এসব পদ দ্রুত পূরণ করার বিষয়ে সচিবদের তাগিদ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেবেন।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এগুলো হলো দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিল্পের প্রসার ঘটানো, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীয় পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িক এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর সর্বশেষ সচিব সভা হয়।