লক্ষ্মীপুরে নিহত কৃষক দলের কর্মী সজীব হোসেনের বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল কিছুদিনের মধ্যেই। এজন্য গাড়ি চালানো শিখেছিলেন তিনি। তার বড় ভাই সৌদিপ্রবাসী মিজানুর রহমান সেখানে নেওয়ার ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন। কিন্তু তার সৌদি যাওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না তার। বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি। এদিকে সজীব নিহতের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে বিএনপি ও পুলিশ। তার মৃত্যুকে ব্যক্তিগত শত্রুতার জের বলছে পুলিশ। এমনকি নিহত সজীব কৃষক দলের সদস্য বা নেতা নন বলেও দাবি পুলিশের। অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ যৌথভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কৃষক দলের কর্মী সজীব হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এতে বিএনপির প্রায় ২০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। পুলিশের সংবাদ সম্মেলন : গতকাল বুধবার জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তিন-চারজন যুবক কলেজ রোডে ওই ব্যক্তিকে ধাওয়া
করে ছুরিকাঘাত করে। তখন এ সড়কে কোনো মিছিল ছিল না। আহত অবস্থায় সড়কের পাশে একটি বিল্ডিংয়ে দৌড়ে আশ্রয় নেন তিনি। ওই বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তে
থাকেন। কেউ ভয়ে বের হচ্ছেন না। একপর্যায়ে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। পরে বাড়ির দুই প্রতিবেশী সময় নিয়ে বের হন। এ সময় আহত ব্যক্তি পানি চাইলে তারা পানি দেন ও একটা কাপড় দিয়ে কাটা জায়গা আটকানোর চেষ্টা করেন। এ অবস্থায় বাড়ির লোকজন তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নাম পরিচয় জানান। একই সঙ্গে ঘটনার কারণ জানতে চাইলে বলেন, তিনি বিয়ে করেছেন। সেখানে ঝামেলা আছে। তা ছাড়া যারা মেরেছে, তারা তার কাছে টাকা পায়। সজীবের বাড়িতে মাতম: আর কয়েকদিন পর সজীব হোসেনের বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। তার বড় ভাই সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমান তাকে সেখানে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য তিনি দেশে গাড়ি চালানোও শিখেছেন। কিন্তু আর সৌদি আরব যাওয়া হলো না তার। গতকাল দুপুরে সজীবদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের চৌচালা ঘরের সামনের উঠানে নারী-পুরুষের জটলা। ওখানে নিহত সজীবের বোন কাজল আক্তার আহাজারি করছেন। ছোট ভাইয়ের কথা মনে হতেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন কাজল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘যারা আমার ভাইকে মেরেছে, আল্লাহ তুমি তাদের বিচার করো।’ বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: এদিকে একই ঘটনায় রাতে জেলা বিএনপির সংবাদ সম্মলনে নিহত ব্যক্তিকে কৃষক দলের চরশাহী ইউনিয়ন কমিটির সদস্য বলে দাবি করা হয়। নিহত সজীব চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। জেলা বিএনপি আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, পদযাত্রায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা শহরের বশিরভিলার দিকে আসতে থাকেন। পথে পথে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে পড়েন তারা। বিকেলে যখন পদযাত্রা শুরু করি, তখন সামাদ মোড় এলাকায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আমাদের লোকজনের ওপর চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে আমাদের কৃষক দলের একজন নেতা নিহত হন। তিনি বলেন, যিনি নিহত হয়েছেন, তিনি আমাদের চরশাহী ইউনিয়নের কৃষক দলের সদস্য। তার বাড়ি সদরের চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্যাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু তাহের। তাকে ধাওয়া করে মদিন উল্যা হাউজিংয়ের সামনে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিচার দাবি আ.লীগের: এদিকে সজীব হত্যার বিচার দাবি করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। গতকাল বুধবার বিকেলে শহরের দলীয় অস্থায়ী কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগ আহূত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, একজন পথচারী ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। খবর নিয়ে জানা গেছে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তিনি একজন টাইলস মিস্ত্রি। কর্মসূচি চলাকালে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় নিহত হওয়ার পরে গভীর রাতে বিএনপি তাকে নিজেদের দলীয় কর্মী দাবি করে ঘটনাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগকে দায়ী করার অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপি হত্যার ষড়যন্ত্রে মেতেছে। সংঘর্ষের বিষয়ে সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করি। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে শহরে আসেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি অনুরোধ ছিল আমরা যাতে বাজার সড়কের ব্রিজের দক্ষিণে না যাই। তাই আমরা ব্রিজের উত্তর প্রান্ত থেকে বাজার সড়ক হয়ে উত্তর এসে বাস টার্মিনালের দিকে যাই। কিন্তু শহরের সামাদ মোড় এলাকায় কী হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। শান্তি সমাবেশে আমাদের প্রায় ১০-১২ হাজার লোক অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা কারও ওপর আক্রমণ করেননি। উল্টো বিএনপির লোকজনের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। অনেক নেতাকর্মীও আহত হয়েছেন। তবে কতজন আহত হয়েছেন, সে সংখ্যা তিনি জানাতে পারেননি।
মন্তব্য করুন