কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০২:২৯ এএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ০৮:৪১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আঘাত হানতে পারে রাতে

উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আতঙ্ক

উপকূলজুড়ে ঘূর্ণিঝড় রিমাল আতঙ্ক

ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরের’ আঘাতে ২০০৭ সালে বিধ্বস্ত হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলো। পটুয়াখালীর খেপুপাড়া হয়ে উপকূল অতিক্রম করেছিল ‘সিডর’। দশ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান প্রকৃতির সেই ধ্বংসযজ্ঞে। সিডরের দুই বছরের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এতে তিন লাখ মানুষ গৃহহীন ও দুইশ মানুষ মারা যান। এবার ‘রিমাল’ নামে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে বাংলাদেশে। আজ রোববার রাতে প্রবল ঘূর্ণিঝড়রূপে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে এবং দমকা হাওয়াসহ ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত (আজ মধ্যরাতের পরে) বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যা থেকে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রিমাল সিডরের থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল। সম্ভাব্য ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে উপকূলের জেলাগুলোতে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া শুকনো খাবার, নগদ অর্থসহ ত্রাণসামগ্রী মজুত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। জনগণকে সচেতন করতে কোস্টগার্ড মাইকিংসহ প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সতর্ক করছে ফায়ার স্টেশনগুলো। উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সারা দেশে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রাত ৮টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ৬২ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল থাকায় মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রিমালের গতিবেগ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, সিডরের মতো অত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় নয় এটি, ঘূর্ণিঝড় রিমাল সিডরের থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। বেশি এলাকা নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি থাকতে পারে। সমুদ্র উপকূলের সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৫ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতি ভারি (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি রোববার রাতে বাংলাদেশের বেশি জায়গা নিয়ে আঘাত হানার পর প্রায় তিন দিন বাংলাদেশের ওপরই অবস্থান করতে পারে। যার সমাপ্তি ঘটতে পারে শেরপুর, নেত্রকোনা হয়ে ভারতের মেঘালয়ে গিয়ে।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এরই মধ্যে উপকূলের কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ঢাকার দিকেও মেঘ চলে এসেছে। রোববার দুপুরের পর থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে রিমালের প্রভাব শুরু হবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির ৩০ শতাংশ ভারত এবং ৭০ শতাংশ বাংলাদেশের স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। রোববার দুপুর থেকেই ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ উপকূল স্পর্শ করতে পারে। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে। রাত ১২টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে। পুরো ঘূর্ণিঝড়টির আকার ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা কতটুকু—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা আছে দুই মিটার বা সাত ফুট পর্যন্ত। এটি বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সারা দেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হবে। ২৪ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জেলায় বৃষ্টি বেশি হবে। এসব এলাকায় ভূমিধসের সতর্কবার্তা দেওয়া হবে।

রিমাল একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ বালু। এটি ওমানের দেওয়া নাম। তবে রিমাল নামে আফগানিস্তানে একটি শহর আছে। সেই শহরের নামানুসারেই এটির নামকরণ করা হয়েছে। গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হলে তাকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে তখন সেটিকে ‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা এর বেশি হলে হয় ‘সুপার সাইক্লোন’।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ নাথ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগ একটু ঘুরে কলকাতা, সুন্দরবন (ভারতীয় অংশ) স্পর্শ করে সাগরের দিকে সরে গিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে আসবে। এরপর যশোর, রাজশাহী হয়ে ওপরের দিকে উঠবে। ঘূর্ণিঝড় রিমাল স্থলভাগে উঠে নিষ্ক্রিয় হতে দুদিন সময় নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগামী ২৮ মে রাতের মাঝামাঝি এটি মিশে যেতে পারে।

তিনি জানান, স্থলভাগের তাপমাত্রা সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে বেশি থাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল দুর্বল হতে বেশি সময় লাগবে। সমুদ্রপৃষ্ঠে এই ঝড়ের গতি কিছুটা কমলেও স্থলভাগে এসে আবারও শক্তি সঞ্চয় করবে। ফলে স্থলভাগে আঘাত হানার পর গড়ে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতি নিয়েই এটি এগিয়ে যেতে থাকবে। এই সময়ে পশ্চিমাঞ্চল ও ঢাকা পর্যন্ত মধ্যাঞ্চলজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত ও বজ্রবৃষ্টি থাকবে। সুন্দরবনে ৩০০ মিলিমিটার, যশোরে ১৮৫ মিলিমিটার ও ময়মনসিংহে ৩৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।

৬ জেলাকে বিশেষ প্রস্তুতির নির্দেশ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলাকে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। উপকূলবর্তী সব জেলাকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও সম্ভাব্য ভূমি অতিক্রম এলাকার ভিত্তিতে উল্লিখিত ছয় জেলায় অধিকতর প্রস্তুত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আসন্ন। সেটা মাথায় রেখে সেইভাবে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরার উপকূল অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৭ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ব্যাপক বৃষ্টিপাত হবে। এজন্য পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও উপকূলে ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকায় ইফেক্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে। এখন ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থান করছে, বিশেষ করে পায়রা ও মোংলা বন্দরের সরাসরি দক্ষিণে।

আজ সকাল ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। সভায় আগাম সতর্কতার বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও জনগণকে সচেতন করা, আগাম মানবিক কার্যাবলি গ্রহণ করা, মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় ও বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোর সভা অনুষ্ঠান, সব পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা, আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, শিশুখাদ্য এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থা করা, জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দুর্যোগ তথ্য পাওয়ার জন্য টোল ফ্রি ১০৯০ ব্যবহারের কথা জানানো হবে।

সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের লঞ্চ এবং নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে নদীবন্দরগুলোতে চলাচল করা লঞ্চের জন্য এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সেটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর ভবনের ষষ্ঠ তলায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থেকে আবহাওয়া অফিস, কর্তৃপক্ষের সব নদীবন্দরে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বন্দরের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা, নদীবন্দরের বিভিন্ন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এবং ড্রেজার বেইজের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করার জন্য টেলিফোন নম্বর +৮৮০২২২৩৩৫২৩০৬ ও মোবাইল নম্বর ০১৯৫৮৬৫৮২১৩ ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে।

কৃষকদের জন্য ৮ পরামর্শ সম্ভাব্য ভারি বৃষ্টিপাতের জন্য ফসল রক্ষায় বিশেষ আবহাওয়া পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। পরামর্শগুলো হলো—বোরো ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ক হয়ে গেলে দ্রুত সংগ্রহ করে নিরাপদ জায়গায় রাখুন। দ্রুত পরিপক্ক সবজি ও ফল সংগ্রহ করে ফেলুন। সেচ, সার ও বালাইনাশক প্রয়োগ থেকে বিরত থাকুন। জমির আইল উঁচু করে দিন। নিষ্কাশন নালা পরিষ্কার রাখুন, যেন জমিতে পানি জমে না থাকতে পারে। আখের ঝাড় বেঁধে দিন, কলা ও অন্যান্য উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল এবং সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করুন। পুকুরের চারপাশ জাল দিয়ে ঘিরে দিন, যেন ভারি বৃষ্টিপাতের পানিতে মাছ ভেসে না যায়। গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি শুকনো ও নিরাপদ জায়গায় রাখুন।

প্রস্তুত ফায়ার সার্ভিস, ছুটি বাতিল ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় সার্বিকভাবে প্রস্তুত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসাধারণকে সচেতন, সতর্ক ও সাবধানতায় কাজ করছে সংস্থাটি। এজন্য ফায়ার সার্ভিসের সব সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের পরিচালক মো. শাহজাহান সিকদার জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় জীবন ও মালপত্র সুরক্ষা সংক্রান্ত যে কোনো কাজে দিবারাত্রি ২৪ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের সেবা গ্রহণ করা যাবে। সব আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রয়োজনে উপকূলবর্তী ফায়ার স্টেশনগুলোতেও সাধারণ জনগণ আশ্রয় নিতে পারবেন। ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিং সেল, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষসহ সব বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সারাক্ষণ সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত থাকবে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সেবা গ্রহণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশন, বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হটলাইন নম্বর ১৬১৬৩ অথবা কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের জরুরি মোবাইল নম্বর ০১৭৩০৩৩৬৬৯৯-এ ফোন করার জন্য বলা হয়।

ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলবর্তী জুঁইদন্ডি এলাকার বাসিন্দা কল্যাণ মিত্র বলেন, অতীতের সবকটি ঘূর্ণিঝড়ের সময় জুঁইদন্ডির বিস্তীর্ণ এলাকা উঁচু জলোচ্ছ্বাসে ডুবে গিয়েছিল। এবারও সেই আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মনে। জলোচ্ছ্বাস হলে এলাকার অনেক অপরিপক্ব বোরো ধান নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট হবে শত শত একরের সবজি ক্ষেত। মারা যাবে গরু-ছাগল। এ ছাড়া এই উপকূলের অনেক মানুষ মাছ ধরতে গিয়ে এখনো সাগর থেকে ফেরেনি। তাদের ভাগ্য কী হবে এ নিয়ে মানুষ বেশ চিন্তিত।

একই কথা বলেছেন বাঁশখালী উপকূলের গন্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা নেজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর আঘাতে এলাকার শত শত হেক্টর জমির লবণের মাঠ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। নষ্ট হতে পারে অপরিপক্ব বোরো ধান। তা ছাড়া এলাকার কয়েক হাজার জেলে সাগরে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। তাদের অনেকে এখনো ফেরেননি।

এদিকে প্রাণ হানিসহ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে জানমাল রক্ষায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় ছয় উপজেলাসহ জেলার ১৫ উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

পানির উচ্চতা বেড়েছে কক্সবাজারে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপে বাতাস শুরু হয়েছে। সাগর ও নাফ নদের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ফুট বেড়েছে। টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সড়কের পূর্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নাফ নদের পাড়ে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া। সেখানে পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। এখনো ভাঙন থেমে নেই দ্বীপে। এমনকি বিলীনের পথে দুটি বিদ্যালয়ের ভবন। এ ছাড়া গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখার’ আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলে বুক ব্যথা শুরু হয়। আমরা নাফ নদের তীরে প্রায় ২০০ পরিবার বসবাস করি। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলে নদের ধারেই আশ্রয় নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে আমরা সবাই খুব চিন্তিত। কেননা গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখায় আমাদের এলাকাকে তছনছ করে দিয়েছিল।’

বাঁধ ভাঙার ঝুঁকিতে সাতক্ষীরার মানুষ ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের খবর শুনলেই আঁতকে ওঠেন উপকূলীয় উপজেলা কয়রা ও শ্যামনগরের বাসিন্দারা। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে নদীর পানি বেড়ে এই বুঝি বাঁধ ভেঙে ভেসে যাবে সবকিছু। এর আগে উপকূলে যতবার ঝড় আঘাত হেনেছে ততবারই ভেসে গেছে তাদের ঘরবাড়ি। সে সময় যথাযথভাবে বাঁধ মেরামত না হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছেন উপকূলের তিন লক্ষাধিক মানুষ।

কয়রার গাববুনিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব উশিলা মণ্ডল বলেন, ‘ঝড়-বন্যায় বাঁধ ভাঙ্গি ঘরবাড়ি সব গাঙে গেছে। বার বার এভাবে ভাঙলি আমাগি আর বসবাসের জায়গা থাকবে না। শুনতিছি আবার একটা ঝড় আসবে, ভেঁড়ির যে অবস্থা তাতে কখন ভাঙি পানি ঢোকে সেই চিন্তায় আছি।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় রেমাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২০১৮ সালের নির্বাচনের বদনাম ঘোচাতে চায় পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার

ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে চেলসির বড় জয়

নরসিংদী জেলা সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা’র নতুন কমিটিকে সংবর্ধনা

কেইনের হ্যাটট্রিকে লেইপজিগকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন

নিখোঁজের একদিন পর যুবকের মরদেহ মিলল পুকুরে

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের তারিখ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প

এশিয়া কাপ দলে জায়গা পেয়ে সোহানের কৃতজ্ঞতার বার্তা

ঘুষ কেলেঙ্কারিতে পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

প্রবীণদের বিশেষ যত্ন নিয়ে বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিন: স্বাস্থ্য সচিব

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

১০

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

১১

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

১২

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

১৩

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

১৪

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

১৫

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

১৬

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

১৭

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

১৮

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১৯

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

২০
X