জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০২:৪৩ এএম
আপডেট : ৩১ মে ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভোটবিমুখতার কারণ খুঁজতে চায় না ইসি

তৃতীয় ধাপে ভোটের হার ৩৬.২৪ শতাংশ
ভোটবিমুখতার কারণ খুঁজতে চায় না ইসি

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। ৮৭টি উপজেলায় মোট ২ কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার ১৮৫ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৩ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ ভোট পড়েছে ঠাকুরগাঁয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায়। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে লক্ষ্মীপুর সদরে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর আগে গত ৮ মে প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলা নির্বাচনে ৩৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ ভোট পড়ে। প্রথম ধাপে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতির রেকর্ড হওয়ার পর এর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী ধাপে ভোটার বাড়াতে নেওয়া হয়েছিল কিছু পদক্ষেপ। তবে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর কমিশন এখন ভোট প্রদানে সাধারণ মানুষের অনীহার কারণও খুঁজতে চাইছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ইসির তথ্যমতে, গত তিনটি উপজেলা নির্বাচনেই ধারাবাহিকভাবে ভোটের হার কমেছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা পরিষদে ভোটের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ। তারপর ২০১৯ সালে প্রথমবার দলীয় প্রতীকের উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে গত ৮ মে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি ছিল রেকর্ড সংখ্যক কম। ওই নির্বাচনে মাত্র ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। তার

পরের দুটি ধাপেও একই চিত্র দেখা গেছে।

জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির এমন বেহাল দশায় চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে নির্বাচন কমিশন। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আইন সংশোধনসহ কমিশনের নানা প্রচেষ্টার পরও কেন্দ্রে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ভোটাররা। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে রেকর্ড সংখ্যক কম ভোটারের উপস্থিতির পর দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ বুধবার তৃতীয় ধাপের ভোটেও অনীহার সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতির করুণ চিত্রের জন্য কৃষকদের ধান কাটার মৌসুম ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াসহ পাঁচটি কারণকে চিহ্নিত করে পরবর্তী ধাপে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশ্বস্ত করেছিল কমিশন। সেই লক্ষ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনাররা। কেন্দ্রে ভোটার আনতে প্রার্থীদের প্রতি বারবার আহ্বান জানানো হয় কমিশনের তরফ থেকে। ভোটবিরোধী প্রচারের ব্যাপারেও সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। এত কিছুর পরও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে কমিশনের হিসাবে মাত্র ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ ভোট পড়ে।

যদিও নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণ শেষে এ হার ৩০ শতাংশের কিছু বেশি হতে পারে বলে আভাস দেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোটার উপস্থিতির করুণ অবস্থা দেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিজেই হতাশা প্রকাশ করেন। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভোটের হার কম হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সংকটকেই দায়ী করেন তিনি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে ভোটের এমন হারকে কখনোই আমি উৎসাহব্যঞ্জক মনে করি না। বিএনপির বর্জনের কারণে উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার কম হচ্ছে। তারা ভোট বর্জন করে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করায় উপজেলা নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে আসছেন না। এটা রাজনৈতিক সংকট।’

এরপর তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে আর তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি কমিশনের। এ ধাপেও মাত্র ৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ ভোট পড়ে। ফলে ভোটবিমুখতার কারণ না খুঁজে নির্বাচন আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতায় মনোযোগী হচ্ছে কমিশন। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী সংঘাত, সংঘর্ষ ও হানাহানি কমিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ তৈরি করাই কমিশনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপ এবং ৯ জুন স্থগিত হওয়া উপজেলাগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। নানা চেষ্টা করেও ভোটারদের সাড়া না পাওয়ায় আপাতত ভোটার বাড়ানোর প্রসঙ্গ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শেষ করার দিকেই বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই প্রথম দুই ধাপে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার জন্য রাজনৈতিক সংকটকে দায়ী করেছেন। যার সমাধান কমিশনের কাছে নেই বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে আর তেমন ভাবনাও নেই কমিশনের। এখন সংবিধান অনুযায়ী শুধু ভোটের কার্যক্রম শেষ করতে চায় কমিশন। এতে ভোটার উপস্থিতি কম-বেশি যেমনই হোক, সেটি নিয়ে চিন্তিত নয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ভোটারের সন্তোষজনক উপস্থিতি নিরূপণের নির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠিও নেই আইনে। ফলে এক শতাংশ ভোট পড়লেও নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছে সংস্থাটি। একাধিক কমিশনারের বক্তব্যেও বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকারই হোক, সব ধরনের ভোটেই মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর প্রতিফলন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলায়ও দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত। কিন্তু বিষয়টিকে রাজনৈতিক সংকট বলে অনেকটাই এড়িয়ে যাচ্ছে কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান কমিশন ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বিরোধী বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত এসব নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ নেই। ফলে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কমিশনের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। ভোটারদের আগ্রহী করে তুলতে হলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ফ্লাইট চালুর আশা

পদ্মা ব্যাংকের ১২৯তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত

নতুন ভূমিকায় এবার দেখা মিলবে সৌরভ গাঙ্গুলির

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করল যুক্তরাষ্ট্র

খুলনায় পিকআপ-ইজিবাইক সংঘর্ষে নিহত ২ 

বিপাকে পড়েছেন শ্রদ্ধা কাপুর

বিয়ের আগে মা হওয়া নিয়ে গর্ববোধ করেন নেহা ধুপিয়া

পেনাল্টি মিসের দোষ রেফারির ঘাড়ে চাপালেন ম্যানইউ অধিনায়ক

৪ ইভেন্টে ৩ রেকর্ডে যে বার্তা দিলেন রিংকি

১০

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার

১১

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ নাহিদের

১২

গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে যে ভয়ের কথা জানালেন তৌহিদ আফ্রিদি

১৩

সুনামগঞ্জে বালু-পাথর লুট ঠেকাতে বিজিবির অভিযান

১৪

টি-টোয়েন্টিতে অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়ে যা বললেন সাকিব

১৫

ইসির শুনানিতে হট্টগোল / রুমিন ফারহানার সমর্থকদের মহাসড়ক অবরোধ, এনসিপির বিক্ষোভ 

১৬

কারাগারে বিক্রমাসিংহে, মুখ খুললেন সাবেক তিন প্রেসিডেন্ট

১৭

গোল্ডেন হারভেস্টে বড় নিয়োগ

১৮

যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন ভিসার ফি বাড়ছে দ্বিগুণের বেশি

১৯

জুম টিভির অফিসে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান

২০
X