কবির হোসেন
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ০৩:৪০ এএম
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৪, ০৭:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

থেমে আছে বিচারপতিদের হিসাব দাখিলের উদ্যোগ

এক যুগ পার
থেমে আছে বিচারপতিদের হিসাব দাখিলের উদ্যোগ

উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের সম্পদের হিসাব দাখিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল এক যুগেরও বেশি সময় আগে। তখনকার প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সম্পদের হিসাব দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছিলেন। তার এই উদ্যোগে সমর্থন জানিয়ে সেই সময় উচ্চ আদালতের বেশ কয়েকজন বিচারপতি সম্পদের হিসাব দাখিল করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেই ধারাটি আর অব্যাহত থাকেনি। ফলে সম্পদের হিসাব দাখিলের উদ্যোগটি থেমে গেছে। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। এতে সাড়া দিয়ে অনেকেই হিসাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক সময় অধস্তন আদালতের বিচারকরা তাদের বার্ষিক ওয়ার্ক স্টেটমেন্টের সঙ্গে সম্পদের হিসাবও দিতেন। কিন্তু এখন আর দেন না। আবার সম্পদের ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ার বিধানও ছিল। এখন মাঝে মাঝে বিচারকদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়। এ ছাড়া চাকরিতে প্রবেশের সময় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা একটি ফরম পূরণ করেন, যেখানে সম্পদের তথ্যও উল্লেখ থাকে।

২০১২ সালে প্রণীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্রে প্রতি বছর বিচারক-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পদের হিসাব দাখিলের জন্য আলাদা কোনো বিধান নেই। আবার উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের সম্পদের হিসাব দাখিলেরও আলাদা কোনো বিধি (রুলস) নেই। ফলে সম্পদের হিসাব দাখিল নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথাও নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারালয়ের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি বজায় রাখা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার স্বার্থে বিচারকদের সম্পদের হিসাব দেওয়া উচিত।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে, ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর আমি সম্পদের হিসাব দাখিল করেছিলাম। এর উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছতা বজায় রাখা। বিচার বিভাগের প্রায় সবাই সৎ। তবে দু-একজন ব্ল্যাকশিপ (কুলাঙ্গার) থাকলেও থাকতে পারে। আমার কথা হচ্ছে, দেশের জনগণ আমাদের মালিক। সেই মালিকের কাছে আমাদের জবাবদিহি আছে, দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা এবং সততা বজায় রাখার দায়বদ্ধতা আছে। সেসব দায়বদ্ধতা থেকেই সম্পদের হিসাব দাখিল করেছিলাম। আমার দেখাদেখি তখন আমার আরও কয়েকজন সহকর্মী সম্পদের হিসাব দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়নি।’

যদিও উচ্চ আদালতের একজন বিচারপতি জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের দুর্নীতির তেমন কোনো সুযোগ নেই। তেমন টাকা-পয়সার মালিকও কেউ নেই। সবাই সম্পদের হিসাব দিতে চান। কিন্তু হিসাব নিয়ে লাভ কী হবে? ট্যাক্স ফাইলে তো দেখানো হচ্ছেই। সেই চিন্তা থেকে আর নেওয়া হয় না, দেওয়াও হয় না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারকদের সম্পদের হিসাব দেওয়া উচিত। কারণ বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের খারাপ ধারণা আছে। বিশেষ করে ২০১০ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সেবা খাতে দুর্নীতি শীর্ষক সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ১৩টি সেবা খাতে দুর্নীতি সংক্রান্ত জরিপে বিচার বিভাগকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত খাত বলে চিহ্নিত করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১০ সালের জুলাই পর্যন্ত বিচার চাইতে এসে ৮৮ শতাংশ বিচারপ্রার্থী দুর্নীতির খপ্পরে পড়েছেন। এর মধ্যে ঘুষ লেনদেন বেশি হয় উচ্চ আদালতে। টিআইবির দেওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারপতিকে নিয়ে একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়।

সেই মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘টিআইবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কমিটি মনে করে, টিআইবি স্পষ্টতই সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকে বিচার বিভাগ ধরে নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। আইনজীবী, তাদের ক্লার্ক বা মোহরার ও দালালরা বিচার ব্যবস্থার অংশ নন। কিন্তু টিআইবি তাদের বিচারক ও বিচারালয়ের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সংযুক্ত করে বিচার বিভাগকে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আখ্যায়িত করেছে।’

অবশ্য টিআইবির প্রতিবেদনে বিচার বিভাগের দুর্নীতির সঠিক তথ্য না থাকলেও বিচার ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের দুর্নীতি থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে না সুপ্রিম কোর্ট কমিটি। কমিটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘টিআইবির প্রতিবেদনে বিচার বিভাগের দুর্নীতির সঠিক তথ্য অনুপস্থিত থাকলেও বিচার ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের দুর্নীতি যে বিরাজমান, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

এমনই আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই সম্পদের হিসাব দাখিল করে একটি নতুন ধারার সূচনা করেছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। স্বচ্ছতার স্বার্থেই তখন তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সবাইকে সম্পদের বিবরণী দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। পরে সেই উদ্যোগটা থেমে আছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হক। বিচার বিভাগের জন্য একক ডেটাবেস তৈরি করে সারা দেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের (জুডিশিয়াল অফিসার) সব তথ্য সন্নিবেশিত করার উদ্যোগ নেন তিনি।

জুডিশিয়াল স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্টের (জাস্ট প্রকল্প) আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডেটাবেস তৈরির জন্য নির্দিষ্ট ফরমে বিচারকদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। ফরমে বিচারকদের জন্য যেসব বিষয় জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়, সেগুলোর মধ্যে ছিল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য (ভাইবোন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ), শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাষাজ্ঞান, বিদেশ ভ্রমণ, ব্যয়, সম্পদ (ভাইবোন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ), আয়কর, চাকরি সংক্রান্ত তথ্য, প্রশিক্ষণ, সেমিনার, প্রকাশনা, বার্ষিক প্রতিবেদন, বিভাগীয় মামলা, পদোন্নতি সংক্রান্ত তথ্য। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে জানান, তখন অনেকেই তথ্য পাঠিয়েছিলেন। এসব তথ্য দিয়ে বিচার বিভাগের একটি ডেটাবেস তৈরি করা আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাম্প ট্রাকচাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত

‘আকাশে মেঘ দেখলেই সবজির দাম বাড়ে’

রাজধানীতে বাস থামিয়ে গুলি, এরপর দিল আগুন

ইসলামী ব্যাংকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ হ্যাকড

অফসাইড-হ্যান্ডবলের বিতর্ক মেটাতে আসছে বিশ্বকাপ বল ‘ট্রায়োন্ডা’

দোয়ার সময় এই মারাত্মক ভুল করছেন না তো? জেনে নিন

ভেনেজুয়েলার উপকূলের পাঁচটি মার্কিন যুদ্ধবিমান

বুক দিয়ে ঘানি টেনে সংসার চালান ষাটোর্ধ্ব দম্পতি

বাংলাদেশের কাছে হারের মূল কারণ জানালেন রশিদ খান

সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের ঘটনায় বাংলাদেশের নিন্দা

১০

‘রাজনৈতিক সংকট সমাধান ফিফার কাজ নয়’

১১

ইতিহাসের প্রথম জুমার জামাতে কতজন মুসল্লি ছিলেন?

১২

সুরা পড়ে মারুফার জন্য দোয়া করেন মা

১৩

খুব অল্প সময়ে সৃজিতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েছি: সুস্মিতা

১৪

হারামাইনে আজ জুমা পড়াবেন যারা

১৫

রেললাইনের পাশে পড়ে ছিল যুবকের মরদেহ

১৬

সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ

১৭

যে কারণে মেয়েকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখেন রানি

১৮

শহীদ আবরার বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক : ডাকসু ভিপি

১৯

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট পেল আরও দুই দেশ

২০
X