ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় এক বছর ধরে চলা বর্বরতার মধ্যে এবার ইসরায়েলি মনোযোগ যেন সরে গেছে লেবাননে। চিরশত্রু হিজবুল্লাহকে শায়েস্তা করতে গত সোমবার থেকে লেবাননে হামলা শুরু করেছে তেল আবিব। ধারাবাহিক এসব হামলায় দেশটির ৫০ শিশুসহ ৫৬৯ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও সহস্রাধিক। হামলায় দক্ষিণ লেবানন যেন এক ধ্বংসস্তূপ। হামলা হয়েছে লেবাননের রাজধানী বৈরুতেও। প্রাণ বাঁচাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। ইসরায়েল বলছে, তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত লেবাননে হামলা অব্যাহত রাখবে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, লেবানন কি তাহলে আরেক গাজা হতে যাচ্ছে। গ্রন্থনা: ওয়াহেদুজ্জামান সরকার
এক নজরে
**ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে এ পর্যন্ত নিহত ৫৬৯
**নিহতদের মধ্যে অন্তত ১৫০ জন নারী ও শিশু
**আহত অন্তত দুই হাজার
**নারী-শিশুসহ অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকা
**স্থল অভিযানের কথা ভাবছে তেল আবিব
** হামলা বন্ধের আহ্বান রাশিয়া, চীন, ইরানসহ বিভিন্ন দেশের
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যেই তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষ। লেবাননজুড়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বিস্ফোরণের ঘটনার পর ইসরায়েলকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। এ হুমকির দিনই গত সোমবার থেকে গোষ্ঠীটি লক্ষ্য করে লেবাননে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ২০০৬ সালের পর লেবাননে এ ধরনের হামলা আর হয়নি। হামলায় এখন পর্যন্ত সরকারি তথ্যমতে, ৫০ শিশুসহ ৫৬৯ জন নিহত হয়েছে। সহস্রাধিক আহত মানুষের বেশিরভাগেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। কিছুক্ষণ পরপরই দক্ষিণ লেবাননে বিমান থেকে ফেলা হচ্ছে বোমা। হামলায় দক্ষিণ লেবানন কার্যত এখন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামলা থেকে বাঁচতে শত শত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছে। ইসরায়েল গত বছর গাজায় হামলা শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহ গাজার সাধারণ মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে সীমান্তবর্তী ইসরায়েলে হামলা শুরু করে। তখন থেকে ওই সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে হামলা চলছে। হিজবুল্লাহর হামলা থেকে বাঁচতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষ তাদের নিরাপত্তা দিতে না পারার জন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে দোষারোপ করছে। তারা শিগগিরই বাড়িতে ফিরতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু করবে বলে হুমকিও দিয়েছে। এরকম প্রেক্ষাপটে নিজেদের উত্তর সীমান্ত নিরাপদ রাখতে গাজা থেকে এখন লেবাননে পূর্ণ মনোযাগ দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট যুদ্ধ ‘নতুন পর্যায়ে’ প্রবেশ করেছে বলে জানান। তিনি লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ‘শক্তি’ মোতায়েনের ঘোষণা দেন। আর সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র লেবাননে স্থল আগ্রাসনের দাবি নাকচ করে বলেন, ‘উত্তর সীমান্তে আমাদের বাস্তুচ্যুত সব নাগরিককে ফিরিয়ে আনতে যা যা করা দরকার আমরা তা করব।’ অর্থাৎ লেবাননে ইসরায়েলি হামলা যে শিগগিরই থামছে না, তা তার কথা থেকে স্পষ্ট। আর শেষ পর্যন্ত লেবাননে হামলা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সেখানেও গাজার মতো হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে তাতে সন্দেহ নেই। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আমরা লেবাননকে আরেকটি গাজা হতে দিতে পারি না। এ মুহূর্তে নিউইয়র্কে চলছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন। লেবানন যে আরেকটি গাজা হতে পারে না, তা বিশ্বনেতাদের নিশ্চিত করার এখনই সময়।