ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩১ এএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বেকারত্ব কমাতে বিনিয়োগ জরুরি

বেকারত্ব কমাতে বিনিয়োগ জরুরি

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য কর্মসংস্থান বড় চ্যালেঞ্জ। যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে বিদ্যমান শ্রমিকদের কর্মসংস্থানেও বড় ধাক্কা আসতে পারে। তাই নতুন কর্মসংস্থান তৈরি ও বিদ্যমান শ্রমিকদের কীভাবে কাজে টিকিয়ে রাখা যাবে, তা নিয়ে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

সম্প্রতি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত তুলে ধরেন। রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ। তিনি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বর্তমানে দেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। তাতে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। আবার যেসব কর্মসংস্থান হচ্ছে, সেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই শুধু কর্মসংস্থান তৈরি করলেই হবে না, মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। এজন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।

উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ভালো। তবে তা অনেকটাই ভারতের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং সরকারি খাতের ওপর অতিনির্ভরতার কারণে। কৃষকদের কৃষি খাত থেকে অকৃষি খাতে অভিবাসন ঘটছে। কিন্তু অকৃষি খাতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। শুধু ন্যূনতম কর্মসংস্থান পর্যাপ্ত নয়; ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

কেন দেশের অর্থনীতিতে এতদিন ধরে পোশাক খাতনির্ভর, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে আর কতদিন শ্রমিকরা কাজে টিকবে, সেটাও বড় প্রশ্ন। তাই ভবিষ্যতে টিকে থাকার জন্য এখনই শ্রমিকদের প্রস্তুত হতে হবে। এখনকার ডিজিটাল দুনিয়ায় কাজ করতে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসে অনলাইনে কাজের সুযোগ মিলছে। আমাদের এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

বাংলাদেশের বহু মানুষ বেকার, চাকরি পাচ্ছে না। তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। শুধু কর্মসংস্থান তৈরি করলেই হবে না, মানসম্মত কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকরিদাতা মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ও চাকরি দুটোই দরকার। বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমে গেছে। অথচ কর্মসংস্থানের সঙ্গে বিনিয়োগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বলেছেন, দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে দেশ। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে, মুদ্রা বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা চলছে। বৈষম্য প্রকট হয়েছে। এ অবস্থায় শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেই হবে না, কর্মসংস্থানের মানও বাড়াতে হবে।

এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না এলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে না। আর সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান ধারায় এখন যেন ভাটার টান। রিজার্ভ ক্রমাগত কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিদেশি বিনিয়োগও কমতে দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে এ দেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিরা তেমন আগ্রহী নন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, গত (২০২৩) বছর দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। ২০২২ সালে তা ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। এর মানে হচ্ছে, এটি আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম।

ইক্যুইটি মূলধন ২০২২ সালে তা ১ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩১ শতাংশ কমে ৭০৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ ২০২২ সালে ঋণাত্মক ৫৭ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৮৮ দশমিক ৯১ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে ‘হতাশাজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের সাবেক অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ। এমন সময় দেখা গেল যখন গত দুই বছর ধরে বিদ্যমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশে ডলারের প্রয়োজন।

পড়াশোনা করে তারা চাকরি পাবেন না। গরিব পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই হার ৯০ শতাংশ। চাকরি, পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণ নেই ২৯.৮ শতাংশ তরুণের। বিবিএসের হিসাব বলছে, দেশে শ্রমশক্তির মোট পরিমাণ ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার। এখন সেখানে বেকার ২৩ লাখ ৫০ হাজার। যদিও বেকারত্বের হিসাবের এ পদ্ধতিতে গলদ আছে। লেখাপড়া হতে হবে জ্ঞানকেন্দ্রিক। আমাদের স্টুডেন্টদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরি। সেখানে কিছু বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হলেও সেই অনুযায়ী বাজারে কাজ নেই। অনেকেই আবার কায়িক পরিশ্রম করতে চাইছেন বলেও বেকার বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, যারা সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং গত এক মাস ধরে কাজপ্রত্যাশী ছিলেন, তারা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস এ নিয়ম অনুসারেই বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকেও ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার ছিল। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি। বর্তমানে বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের গড় বেকারের হারের চেয়ে কিছুটা বেশি। ২০২৩ সালের গড় বেকারের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, নারী বেকার কমেছে। বিবিএস হিসাব অনুসারে, গত মার্চ মাস শেষে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (মার্চ-জানুয়ারি) সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১০ হাজার। অন্যদিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ হাজার নারী বেকার কমেছে। এখন নারী বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ৫০ হাজার। প্রান্তিক ভিত্তিতে বেকারের সংখ্যা হেরফের হতে পারে। সাধারণ শীতের সময় কাজের সুযোগ কম থাকে।

বিবিএস বলছে, শ্রমশক্তিতে এখন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ আছেন। তাদের মধ্যে ৭ কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার। এ ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। তারা কর্মে নিয়োজিত নয়, আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়। এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার। বিনিয়োগ আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসায় বেকারের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। কাজেই বেকারত্ব কমাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি জরুরি।

লেখক: সাবেক কর কমিশনার ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান-ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফের শাহবাগ অবরোধ ছাত্রদলের 

ধেয়ে আসছে পাহাড়ি ঢল, ডুবতে পারে ৪ জেলা

ইসরায়েলকে ‘ত্যাগ’ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!

ধর্ষণের অভিযোগে কারাগারে নোবেল, মুখ খুললেন সাবেক স্ত্রী 

কারামুক্ত হওয়ার পর নুসরাত ফারিয়ার ফেসবুক পোস্ট

স্ত্রীসহ পল্লবী থানার সাবেক ওসি হাসেমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়

নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে : মির্জা ফখরুল

হান্নান মাসুদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হলো তিন সমন্বয়ককে

অস্ত্র-গুলি বিক্রির সময় হাতেনাতে যুবক গ্রেপ্তার

১০

পাকিস্তান সফরে ম্যাচ সংখ্যা কমছে লিটনদের

১১

দুদকের তলবে সাড়া নেই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দুই পিওর

১২

সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করা আরেকটা অপরাধ : নজরুল ইসলাম

১৩

পড়াশোনা কম জানায় প্রশিক্ষণার্থী নারীকে অপদস্থ করলেন কৃষি কর্মকর্তা

১৪

নোবেল ও তরুণীকে নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন আইনজীবী 

১৫

কারামুক্ত হলেন নুসরাত ফারিয়া

১৬

জোরপূর্বক ধর্ষণের মামলায় গায়ক নোবেল কারাগারে

১৭

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা ও বিচার দাবি শিবিরের

১৮

কলেজছাত্র হত্যা মামলায় ১৭ বছর পর ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

১৯

‘ভারতের নিশানায় পুরো পাকিস্তান’

২০
X