ভোক্তাদের ন্যায্যতা, সুরক্ষা ও সুবিধা নিশ্চিত করার আইন হচ্ছে ভোক্তা অধিকার আইন, যা বৈশ্বিকভাবে ১৫ মার্চ জাতীয় ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভোক্তার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বক্তব্য রাখেন। ভোক্তাদের ভোগ্যপণ্য বিষয়ে নিরাপত্তার অধিকার, তথ্য প্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার ও অভিযোগ প্রদানের অধিকার—বক্তব্যে চারটি মৌলিক অধিকার ওঠে আসে। পরবর্তীকালে বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ও ভোক্তা অধিকার বিষয়ে সোচ্চার কর্মী মালয়েশিয়ার আনোয়ার ফজাল কর্তৃক এ দিবসের রূপকার হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৮৩ সালে ১৫ মার্চ ভোক্তা সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ভোক্তাদের মৌলিক অধিকার বিষয়ে সচেতনতার উদ্দেশ্যে বৈশ্বিকভাবে উদযাপনের আহ্বান জানান। এরপর থেকে ১৯৮৫ সালে জন এফ কেনেডির বক্তব্যের সঙ্গে আরও আটটি অধিকার যোগ করে ‘কনজুমার অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’ এসব অধিকার সনদে অন্তর্ভুক্ত করে। কেনেডির ভাষণের এই দিনকে স্মরণীয় রাখতে ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
ভোক্তা অধিকারের মূল লক্ষ্য ভোক্তাদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে বর্তমান যুগে যেখানে প্রযুক্তি ই-কমার্স বাজার ব্যবস্থা দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, সেখানে ভোক্তাদের অধিকার রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অধিকার সংরক্ষণ করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ২০০৯ সালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গঠিত হয়। এটি একটি আধা বিচারক সরকারি সংস্থা, যা পণ্য পরিষেবার ওপর ভোক্তাদের অভিযোগ গ্রহণ নিষ্পত্তি এবং ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ অভিলক্ষ্যে কাজ করে।
ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে ভোক্তারা তাদের অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সে ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা হবে এবং জরিমানা ২৫ শতাংশ ভোক্তাকে প্রদান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ভোক্তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে। ভোক্তা অধিকার আদায়ে ভোক্তাদের এ অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে, বুঝতে হবে। কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতারণা করে ভেজাল পণ্য বিক্রয়, ওজন কম দেওয়াসহ দাম বৃদ্ধি, খাদ্যদ্রব্য অধিক মজুত রেখে খাদ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আইন লঙ্ঘন করে থাকে। এসব বিষয় অভিযোগ জানাতে একজন সচেতন ভোক্তা অনেক অবদান রাখতে পারেন। প্রমাণ রাখা ভিডিও ধারণ করে ও ১৬১২১ নাম্বারে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনে শাস্তি হিসবে বেশ কয়েকটি কঠিন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ওজনে কম দেওয়াতে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। মিথ্যা বিজ্ঞাপনে এক বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ অনিয়মে এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান আছে।
সবার উচিত এই আইন বিষয়ে সচেতন থাকা। নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা। ভোক্তা অধিকার আইন সমাজে সততা ন্যায়বিচার ও সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নয়, বরং একটি নিরাপদ সচেতন ও কল্যাণমূলক সমাজ গঠনে সহায়তা করে। একজন সচেতন ভোক্তা সমাজকে বদলে দিতে পারে। সবাই মিলেমিশে কাজ করলে সচেতন বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
সজিব হোসেন, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ঢাকা কলেজ
মন্তব্য করুন