অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা আপাতত থেমেছে। কিন্তু এই সরকারের অংশীজনদের মধ্যে বড় দুই শক্তি বিএনপির সঙ্গে সরকারের দূরত্ব কমেনি; রয়ে গেছে অস্বস্তি। কারণ বিএনপির এ অবস্থানের সঙ্গে নেই বর্তমানে রাজনীতিতে প্রভাবশালী অন্য দলগুলো, অর্থাৎ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থানের প্রতি এই দলগুলোর সমর্থন রয়েছে বলা যায়। তবে বিএনপিও অভিযোগ করছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টা করছে। যদিও সরকারের একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বললে তারা এ ধরনের অভিযোগ মানতে রাজি নন। কিন্তু বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল এখন সামনে এসেছে, দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব ডিসেম্বরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশের মানুষের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি এবার নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেছে আলটিমেটামের সুরে।
‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে’ বলে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর ডিসেম্বরের মধ্যেই যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার প্রস্তুতি নিতে তিনি নতুন প্রজন্মসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ শীর্ষক এক জনাকীর্ণ সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। লন্ডন থেকে সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ নামে এ কর্মসূচি করা হলেও কার্যত এর মধ্য দিয়ে সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি দলটির অন্যতম লক্ষ্য। সমাবেশে প্রধান অতিথিসহ সব বক্তাই নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের সমালোচনা করেন।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে একটি সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার চার দিনের জাপান সফরের প্রথম দিনে টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
অর্থাৎ দেশের রাজনীতি এবং জাতীয় নির্বাচন এখন ডিসেম্বর ও জুনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিএনপি দেশের একটি জনপ্রিয় বড় রাজনৈতিক দল। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে তারা একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, এ ধারণা তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এবং দেশের রাজনীতিতে। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তৈরি হওয়া সুযোগ বা সম্ভাবনা দ্রুত কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার একটা বিষয় রয়েছে। এ সুযোগ ও সম্ভাবনার ভিত্তিতেই বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। আমাদের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। যার মাধ্যমে দেশের আবার নির্বাচনী সংস্কৃতি ফিরে আসবে। শুরু হবে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা।
মন্তব্য করুন