এস. এম. বিপাশ আনোয়ার
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বর্ষা বিপ্লবের দিনলিপি

বর্ষা বিপ্লবের দিনলিপি

তপ্ত জুলাইয়ে যখন ক্যালেন্ডারের পাতায় ৩১-এ থেমে যায় দিন গোনা, তখনই ইতিহাসে লেখা হয় ৩৬-শে জুলাই। এটা কোনো সংখ্যা নয়, এটা এক প্রতীক—অগণিত তরুণের আত্মত্যাগ, সাহস আর স্বপ্নের এক অমর দিন। যে দিনটি কেউ ক্যালেন্ডারে খুঁজে পায় না, কিন্তু ইতিহাস তাকে চিরকাল মনে রাখে।

এ গল্পগাথা সেই ‘তরুণোদয়ের’ দিনগুলোর সাক্ষ্য, যখন ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উঠে এসেছিল সাহসী কণ্ঠে, মুষ্টিবদ্ধ হাত আর রক্তরাঙা রাস্তায়।

মুগ্ধর পানি লাগবে পানি আর আবু সাঈদের বুক পেতে গুলি হয়ে ওঠে প্রতিরোধের শিখা। স্বৈরাচারমুক্ত হয় বাংলাদেশ।

আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন— গণতন্ত্রের আবরণ থেকে স্বৈরাচার হয়ে ওঠা শেখ হাসিনা। আগে শেখ হাসিনা পালায় না বলে যে আশ্বাস উচ্চারিত হয়েছিল গর্বভরে, ৫ আগস্ট ৪৫ মিনিটের সিদ্ধান্তে সবকিছু অহংকারের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলেন। গত পনেরো বছর ধরে মানুষের ভোট দিতে না পারা, বিরোধী নেতা হত্যা-গুম আর মামলায় জেলে পুরে রাখা সব খবর জনসমক্ষে উঠে এসেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। ছাত্ররা ১ জুলাই ছাত্র সমাবেশ থেকে চূড়ান্ত সুরাহার জন্য ৪ জুলাই পর্যন্ত আলটিমেটামের পাশাপাশি তিন দিনের কর্মসূচি দেন। এরপর আওয়ামী লীগের একাধিক মন্ত্রীর অঙ্গীকার, খামখেয়ালিপনা আর শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে দেওয়া বক্তব্যে আগুনে ঘি ঢালে। ১৪ জুলাই চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ‘রাজাকারের বাচ্চা’ শীর্ষক বক্তব্য আন্দোলনের গতি তীব্র করে তোলে।

এরপর ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’—স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৫ জুলাই রাজাকার স্লোগানের জবাব দিতে ছাত্রলীগকে উসকে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ। প্রতিবাদে উন্মত্ত হয়ে ওঠে পুরো দেশ।

১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুক এবং ঢাকায় সবুজ আলী ও শাজাহান নিহত হন। ১৭ জুলাই আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়ে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। ১৮ জুলাই পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে মুগ্ধ, ফায়াজসহ আরও ৪৮ জন শাহাদাতবরণ করেন। এরপর অগ্নিগর্ভে পরিণত হয় বাংলাদেশ।

১৭ জুলাই: ইউজিসি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেয়। সরকার সব মোবাইল অপারেটরকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

১৮ জুলাই: ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেন। এদিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন।

১৯ জুলাই: শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রোধ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। ১৮ জুলাইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯ জুলাইও সারা দেশে সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়।

২০ জুলাই: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধির সঙ্গে সরকারের তিনজন প্রতিনিধির একটি বৈঠক হয়, যেখানে ছাত্ররা সরকারের কাছে ‘আট দফা দাবি’ জানান। সরকারের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সহসমন্বয়ক তানভীর আহমেদ।

২১ জুলাই: সেনাবাহিনীকে দেশের বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে দেখা যায়। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয় এবং রবি ও সোমবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

কারফিউর মধ্যেই যাত্রাবাড়ী, রামপুরা-বনশ্রী, বাড্ডা, মিরপুর, আজিমপুর, মানিকনগরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুজন পুলিশসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন ও অন্তত ৯১ জন আহত হন।

২২ জুলাই: ১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। সব পক্ষের শুনানি শেষে দুপুর ১টায় হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয় ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।

২৩ জুলাই: রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে কারফিউর মেয়াদ আরও দুদিন বাড়ানোর কথা জানায়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটাসংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

২৪ জুলাই: চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু হয় ও নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৭ হয়। ২৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ১ হাজার ৭৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। বিক্ষোভের সময় সেনা মোতায়েনের পর জাতিসংঘের লোগো সংবলিত যান ব্যবহৃত হলে জাতিসংঘ এ নিয়ে উদ্বেগ জানায়।

২৪ জুলাই রাত পর্যন্ত আরও ৪ জনসহ ২০১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

২৫ জুলাই: সরকার ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রাখে।

আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়।

২৬ জুলাই: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে জাতিসংঘ। এক বিবৃতির মাধ্যমে তারা এ উদ্বেগ প্রকাশ করে।

২৭ জুলাই: আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘাত, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সব দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আলটিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে রোববার সারা দেশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

২৮ জুলাই: ভোরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমসহ ছয় সমন্বয়কারীকে আটক করে সরকার।

২৮ জুলাই পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল অন্তত ২১১। ঢাকায় আহতের সংখ্যা অন্তত সাত হাজার। অধিকাংশ আহতই গুলিবিদ্ধ এবং বিশেষত মাথায় ও চোখে গুলিবিদ্ধ। রাত পর্যন্ত ১২ দিনে দেশের ১৮ জেলায় অন্তত ২৫৩ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয় ও অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

২৯ জুলাই: জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেয় বিক্ষুব্ধ ৭৪ বিশিষ্ট নাগরিক।

ডিবি হেফাজতে নেওয়া সমন্বয়কারীদের ছেড়ে দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে সোমবার দুপুরে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন দুজন আইনজীবী।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা আন্দোলন ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ৩০ জুলাই মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এটি প্রত্যাখ্যান করে ৩০ জুলাই লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।

৩০ জুলাই: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অনেক বাংলাদেশি সরকারি শোকের কালো রং প্রত্যাখ্যান করে লাল রং ধারণ করেন এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালান।

বেলা সাড়ে ১১টায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার এবং শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন।

৩১ জুলাই: হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে ৩১ জুলাই বুধবার সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ (ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচি পালন করে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময়ের জন্য ডেকে কথা বলতে না দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ ‘ভুয়া ভুয়া’ বলেও স্লোগান দেন।

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির আলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে।

৩২ জুলাই (১ আগস্ট): গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে দুপুর দেড়টার একটু পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২ আগস্ট শুক্রবার ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

৩৩ জুলাই (২ আগস্ট): ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটককৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকার কথা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এদিন দুপুর ১২টার পর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আবার বন্ধ করা হয়। পাঁচ ঘণ্টা পর ফেসবুক-মেসেঞ্জার আবার চালু করা হয়।

শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা দ্রোহযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ যোগ দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদসহ পূর্বঘোষিত ৯ দফা দাবিতে শনিবার (৩ আগস্ট) সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রোববার (৪ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।

রাতে গণভবনে জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

৩৪ জুলাই-(৩ আগস্ট): এদিন ভোরে আহত একজন ব্যক্তির চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।’

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্র হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ দুজন হলেন—রংপুর পুলিশ লাইনের এএসআই আমির হোসেন ও তাজহাট থানার কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়।

৩৫ জুলাই (৪ আগস্ট): বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়। এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে এলে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দৌড়ে বিএসএমএমইউর ভেতরে যান। আন্দোলনকারীরা বিএসএমএমইউর ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কর্মসূচি লং মার্চ টু ঢাকা ঘোষণা করে। প্রথমে ৬ আগস্ট পালন করার কথা থাকলেও পরে তা ৫ আগস্ট করা হয়।

বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকার শিক্ষার্থীসহ সব অভিভাবককে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানায়।

অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও হানাহানির ঘটনায় অন্তত ৯৮ জন নিহত হন বলে জানা যায়।

৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট): ৪ আগস্ট সরকার তিন দিনের কারফিউ জারি করার পর ৫ আগস্ট চলছিল প্রথম দিনের কারফিউ। এদিন সকালের পরিবেশ বেশ থমথমে, সতর্ক অবস্থানে ছিল ঢাকার পুলিশ। তবে কারফিউ অমান্য করে বেলা ১১টার পর থেকে সারা দেশের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ শাহবাগে জড়ো হতে থাকেন।

গণহত্যার বিচার নিয়ে ফেসবুক প্রোফাইল রক্তিম হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীদের। ৬ আগস্টের বদলে ঢাকামুখী লং মার্চ একদিন এগিয়ে আনে শিক্ষার্থীরা। ৫ আগস্ট সকাল থেকে মারমুখী অবস্থান নেয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি শেখ হাসিনার। মানুষের সব ক্ষোভ উগ্রে পড়ে গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় বাংলাদেশ।

মানুষ তাই মনে করে, ৩৬ জুলাই একটি প্রতিবাদী শিরোনাম—রক্তের বন্যায় ভেসে গেল অন্যায়।

লেখক: সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব

সম্পাদক জুলাই বিপ্লবের রক্তাক্ত দলিল

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মুরাদনগরে বিষাক্ত স্পিরিট পানে ২ জনের মৃত্যু

প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, থানায় মামলা

কুষ্টিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ ভোমরারা হতাশ হয়েছেন : নুর

দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

এবার চট্টগ্রামে সাংবাদিককে গলা টিপে হত্যাচেষ্টা

সাবেক ৩ গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

এনসিপির হয়ে নির্বাচন করব কিনা সিদ্ধান্ত নেইনি : আসিফ মাহমুদ

সবাইকে টেস্ট খেলানো জরুরি নয় : জোরাজুরিতে দেউলিয়ার শঙ্কা

প্রবাসেও আপ বাংলাদেশের কমিটি ঘোষণা 

১০

ইসরায়েল পুড়ছে রেকর্ড তাপমাত্রায়

১১

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তার চেক দিল যমুনা অয়েল

১২

অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা-অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান

১৩

৩০০ আসনে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে গণতন্ত্র মঞ্চ 

১৪

ড্রোন শো পরিচালনার প্রশিক্ষণে চীন যাচ্ছেন ১১ জন

১৫

সামাজিক কাজে অবদান রাখায় নিবন্ধন পেল প্রভাত

১৬

স্বাস্থ্যের ডিজির আশ্বাসে মন গলেনি, নতুন কর্মসূচি ছাত্র-জনতার

১৭

শহীদ মিনারে কাফনের কাপড় পরে বস্তিবাসীদের অবস্থান

১৮

পিআর পদ্ধতিতেই নির্বাচন হতে হবে : চরমোনাইর পীর

১৯

চট্টগ্রামে ১০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা মেয়রের

২০
X