সুভাষ সিংহ রায়
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৪ এএম
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যা দেখি যা শুনি

বিএনপি এখন করবে কী

পূর্বে প্রকাশিতের পর
বিএনপি এখন করবে কী

দুই. ৭৪ বছরের একটা রাজনৈতিক দল যতটাই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং নিজেদের মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য করে তুলছে, বিএনপি তার বিপরীতে ততটাই ভুলের মধ্য দিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে একটা ব্যর্থ, অসাংগঠনিক ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলে পরিণত হচ্ছে। নেতৃত্ব যেখানে লক্ষ্যহীন, মূল্যবোধ যেখানে ফ্যাকাশে, নীতি যেখানে ভ্রান্ত সেখানে মানুষের কল্যাণ থেকে অকল্যাণ বেশি হবে, তা এখন মানুষ বুঝে গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে নির্বাচনের বাইরে থাকায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বিএনপি। একাধারে প্রায় ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে তারা, এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ফলে সেটি অনিবার্যভাবে ২৩ বছরে পরিণত হচ্ছে। বিএনপির মতো আদর্শহীন একটি দলে কেবল আওয়ামীবিরোধী মনোভাবকে জিইয়ে রেখে নেতৃত্ব বিকাশ করা সম্ভব নয়। ফলে বিএনপি নেতৃত্ব বারবার নতুন দল গঠন করে আলাদা অবস্থান নিচ্ছেন। ফলে বিকল্পধারা, এলডিপি, বিএনএফ, বিএনএম, তৃণমূল বিএনপি, প্রগতিশীল গণতন্ত্র মঞ্চের মতো অসংখ্য পার্টির জন্ম হয়েছে। আর বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে প্রকাশ্য বিভাজন দেখা দিয়েছে। বিএনপির অন্তত ৫২ নেতা দল থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যাদের অনেকে সাবেক সংসদ সদস্য। এর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি অনেক নেতা এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে দলের বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। এতে দলের ভেতরে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেক নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এবং অনেকে অংশ না নেওয়ায় মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ের এই নেতাদের অনেকে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বা নিতে চেয়েছিলেন।

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করে কোনো ফল অর্জন করতে পারেনি বিএনপি। এক মাস ধরে শুক্র-শনি ও মঙ্গলবার বাদে প্রায় একটানা হরতাল-অবরোধ করেও সরকারকে একচুলও নড়াতে পারেনি। আন্দোলনে ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে নেতাকর্মীদের হতাশা আরও বেড়েছে। মেজর হাফিজের মতো অনেক নেতা দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। তারেক রহমান ও তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে বহু নেতা অনেকদিন ধরেই নীরব ভূমিকায় আছেন।

বিএনপি কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। মানুষের জীবনমান কিংবা তাদের দৈনন্দিন ইস্যু নিয়ে তাদের কোনো কথা নেই। এমনকি ফিলিস্তিনে গণহত্যা নিয়েও তারা টুঁ শব্দটি করেনি। উপরন্তু ৩০০ বাসে আগুন ও প্রায় সাড়ে ৫০০ নাশকতার কারণে জনমনে বিএনপি সম্পর্কে মানুষের মনে বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপিতে এখন বহিষ্কারের মিছিল; লোম বাছতে কম্বল উজাড়ের দশা হয়েছে বিএনপির। কেন্দ্রীয় ৫২ নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় পর্যায়ের আরও কয়েকশ বিএনপি নেতা। প্রতিদিন তাদের কাউকে না কাউকে বহিষ্কার করছে বিএনপি। শত শত নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে বিএনপি নিজেই দলের বিলুপ্তি ত্বরান্বিত করছে। অজ্ঞাত গোপন আস্তানা থেকে ডিজিটাল বিবৃতি দিয়ে বিএনপির বিরতিহীন কর্মসূচি চলছেই। দেড় মাস ধরে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে বিরতিহীন হরতাল-অবরোধ আর গাড়ি পোড়ানো কর্মসূচি করেছে বিএনপি। বিএনপি নেতৃত্বের দেউলিয়াত্ব আরেকবার প্রমাণিত হলো। কারণ বিএনপির অবরোধের মধ্যে জীবনযাত্রা থেমে নেই। স্কুলগুলোতে সময়মতো পরীক্ষা হয়েছে। অফিস-আদালত চলছে। জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কর্মসূচি থেকে কোনো কিছু অর্জন করতে পারেনি বিএনপি। সরকারকে সহানুভূতি কিংবা জনগণের ভালোবাসা কিছুই পায়নি তারা। অথচ রিজভী নির্লজ্জের মতো বলেছেন, আন্দোলন কর্মসূচি চলতেই থাকবে। বিএনপির যে কোনো পরিকল্পনা নেই, কোনো নীতি নেই, কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনীতি নেই, এটি আরেকবার প্রমাণিত হলো। এর আগে ২০১৫ সালের আজীবন অবরোধ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। সেবার বিএনপি ২৮০ দিন অবরোধের অপরাজনীতির কর্মসূচি দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর কদিন আগে বলেছেন, ‘সব দলকে নির্বাচনে আসার অনুরোধ জানানোর পরেও বিএনপি না এসে সহিংসতা করছে। তবে তারা কিছুই করতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীও থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক সেটি অন্যান্য দেশও চায়। আমরাও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এর মধ্যেই তা সবাই বুঝতে পারছেন। নির্বাচনের পরিবেশ দেখে বিদেশিরা পর্যন্ত সন্তুষ্ট।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সবসময় গণতান্ত্রিক ধারাকে ফিরিয়ে আনা ও অব্যাহত রাখার জন্য চেষ্টা করেছে। শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল, হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে ছিল, এর পরও ১৯৭৯-এর নির্বাচনে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ, কেবল গণতান্ত্রিক ধারাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। একইভাবে ঘোষণা দিয়ে ১৯৮৬-র নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯৮৬-এর নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে সেই ইতিহাসকেও পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। গণতন্ত্রের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। আর বিএনপি সবসময় গণতন্ত্র নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে, এখনো তারা তৃতীয় শক্তি বা বাইরের শক্তির আশায় বসে আছে। দেশের মানুষের প্রতি বিএনপির কোনো আস্থা নেই। বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় আবারও জায়গা করে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। এই তালিকায় ৪৬তম স্থানে রয়েছেন তিনি। গত ৫ ডিসেম্বর এই তালিকা প্রকাশ করেছে অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক মার্কিন সাময়িকী ‘ফোর্বস’। অনেকদিন ধরেই এই তালিকায় শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। প্রতিবছর শেখ হাসিনার নাম ওই তালিকায় উপরের দিকে উঠে আসছে।

তিন.

রিজার্ভ নিয়ে গুজব চলছেই। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে গত বছর একই সময়ের তুলনায় পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স প্রবাহ) বেড়েছে। পণ্য আমদানি কমেছে, ফলে টাকা বেঁচে গেছে। এর পরও একদল লোক ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন, দেশের অর্থনীতি সংকটে। গত পাঁচ মাসে পণ্য আমদানিতে আমাদের ব্যয় হয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার। এ মুহূর্তে রিজার্ভ আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২৬ বিলিয়ন ডলার, আর আইএমএফের হিসাবে (ঋণের কিস্তি ও বকেয়া পরিশোধের পর) ২০.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত পাঁচ মাসে যে ব্যয় হয়েছে, সে হিসাবে আরও পাঁচ থেকে সাত মাসের রিজার্ভ বাংলাদেশে আছে। আমরা যে ব্যয় করছি, তার তো হিসাব আছে। অথচ বিএনপিপন্থি কয়েকটি মিডিয়া কাল্পনিক হিসাব বের রিজার্ভ তিন মাসেরও কম ইত্যাদি গুজব ছড়াচ্ছে। মনে রাখা দরকার, আগামী পাঁচ থেকে সাত মাস বাংলাদেশ শুধু যে ব্যয় করবে তা নয়। আয়ও করবে। বিশেষ করে ডিসেম্বরে গার্মেন্টসগুলো বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল পাবে। অন্য খাত থেকেও ডলার আসতেই থাকবে।

নির্বাচনী কার্যক্রমে অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় পোস্টার, ব্যানার ছাপানো, নেতাকর্মীদের যাতায়াতে পরিবহনের ব্যবহার ইত্যাদি নানা কারণে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। এবারে নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের ব্যয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরাও ব্যয় করছেন। এর ফলে নির্বাচন কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে কিছুটা চাঙ্গা ভাব এসেছে। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, বিদেশিরা কখনো আমাদের চাপ দেয় না। চাপ দেওয়ার তাদের কোনো রাইটও নেই। কারণ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। নির্বাচন কমিশন আবার স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সাংবিধানিক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের যে পর্যন্ত সুযোগ ছিল, সেই পর্যন্ত আমরা তাদের বলেছি। আইন অনুযায়ী এ মুহূর্তে আর কোনো সুযোগ নেই। তার পরও কেউ যদি অংশগ্রহণ করতে চান, আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। আমরা যা কিছুই করি না কেন, সংবিধানের আলোকে করতে হবে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ৮৩ পর্যবেক্ষক এবং ৪৬ বিদেশি সাংবাদিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও কাভারের জন্য আবেদন করেছেন। আরেকটি সংবাদ সাধারণ মানুষকে খুবই বিক্ষুব্ধ করেছে। আবারও খাবারের গাড়িতে হামলা করল বিএনপি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চাবাহী একটি কাভার্ডভ্যান পুড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি। আগেও খাদ্যপণ্যবাহী গাড়িতে আগুন দিয়েছে তারা। সম্প্রতি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের টেটিয়ারকান্দা কাভার্ডভ্যান থামিয়ে আগুন দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে ভেতরে থাকা কয়েক হাজার মুরগির বাচ্চা পুড়ে মারা যায়। এই বিএনপিকে মানুষ কি কখনই গ্রহণ করবে?

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রপাগান্ডা ছড়ানোর আগে পরামর্শ নিতে বললেন শিবির প‍্যানেলের সর্ব মিত্র!

মালয়েশিয়ায় নামাজ আদায় করে কার্যক্রম শুরু করলেন নাহিদ

খাওয়ার পর করা এই ৮ কাজ ডেকে আনবে বিপদ, বলছেন বিশেষজ্ঞ

এবার নাহিদা-সোবহানারাও হারল যুবাদের কাছে

গুম-খুনের জন্য হাসিনার বিচার হতেই হবে : মির্জা ফখরুল

৩৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে ইতি টানছেন গোবিন্দ ও সুনীতা

ফেনী থেকে নির্বাচন করবেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান 

চাঁদাবাজি ও ছিনতাইর অভিযোগে সাবেক সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলল ছাত্রদল

ঐকমত্য কমিশনে মতামত দেয়নি যেসব দল

১০

গ্রোক চ্যাটবটের সঙ্গে কথোপকথনের লাখো তথ্য ফাঁস

১১

গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই, বলল ইসরায়েল

১২

হোটেলে নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ, সাবেক সমন্বয়কের বিরুদ্ধে মামলা

১৩

অজিদের বিপক্ষে প্রোটিয়াদের রেকর্ড সিরিজ জয়

১৪

তিস্তা সেচ ক্যানেলে নেমে ২ শিশুর মৃত্যু 

১৫

ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হচ্ছে সৌরজগতের সবচেয়ে দ্রুতগতির গ্রহ

১৬

পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হবে : ডা. তাহের

১৭

ডাকসুর নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মুখ খুললেন সাদিক কায়েম

১৮

নিখোঁজের পর নদীতে মিলল সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ

১৯

আরও উন্নত ব্যাকআপ সুবিধা নিয়ে গুগল

২০
X