দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি সমৃদ্ধশালী দেশ মালয়েশিয়া। এ দেশের প্রায় ৩ কোটি ৪৬ লাখ মানুষের মধ্যে ৬৪ শতাংশই মুসলমান। ১৩টি রাজ্য ও ৩টি ফেডারেল টেরিটরি (অঞ্চল) নিয়ে গঠিত মালয়েশিয়ার উত্তর-পূর্ব প্রান্তে দক্ষিণ চীন সাগরের কোলজুড়ে গড়ে ওঠা রাজ্যের নাম তেরেঙ্গা। এ রাজ্যের রাজধানী কোয়ালা তেরেঙ্গার ওয়ানমান এলাকায় মুসলমান সম্প্রদায়ের এবাদতের জন্য ২০০৮ সালে নির্মিত হয়েছে ক্রিস্টাল মস্ক বা ক্রিস্টাল মসজিদ।
স্থানীয় ইসলামিক হেরিটেজ পার্কে এ মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। সন্ডারসন ডিজাইন গ্রুপ এবং এ এইচ এস আর্কিটেক্টসের পরিকল্পনা ও ডিজাইনে ২১৪৬ বর্গমিটার এলাকার ওপর মূলত স্টিল, কাচ ও স্বচ্ছ ক্রিস্টাল ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছে এই অপূর্ব ও দর্শনীয় মসজিদ।
বাইরের নির্মাণশৈলী এ মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই বাইরের অংশ নির্মাণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে কাচ ও স্টিলের আবরণ। দিনের বেলা সূর্যের রশ্মি আর সন্ধ্যা ও রাতের রঙিন আলোর আভায় কাচ ও স্টিলের আবরণ নানা বর্ণের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়, যা একটি ক্রিস্টালের স্বভাবজাত ধর্ম। অপূর্ব এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই মসজিদটিকে ক্রিস্টাল মসজিদ বলা হয়।
একটি বড় গম্বুজ, চারটি মিনার আর আটটি ছোট ছোট গম্বুজে শোভিত মসজিদে অটোমান স্থাপত্যশৈলীর সন্ধান মেলে। ভেতর থেকে স্টিলের ফ্রেম দেখা গেলেও বাইরের অংশে শুধু আড়াআড়িভাবে লাগানো উজ্জ্বল কাচ ও স্টিলের আচ্ছাদন দেখা যায়। আর মসজিদের ভেতরে সাদা ও সোনালি বর্ণের কারুকার্যময় প্লেট ও অন্যান্য নকশা মসজিদের সৌন্দর্যকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তদুপরি মসজিদের মেঝেতে বিছানো অসংখ্য ফুল আঁকা নরম ও মোলায়েম কার্পেট এবাদতকারীদের মনে প্রশান্তি জোগায়।
মূল মসজিদে কেবলার দিক ছাড়া বাকি তিন দিকে আলোকোজ্জ্বল কাচের দেয়ালে খোদিত আছে ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি। মসজিদের ভিত নির্মিত হয়েছে একটি নদীর ওপর। মূল মসজিদে একসঙ্গে সাত শতাধিক মুসলমান নামাজ আদায় করতে পারেন। মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে অজু ও নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন উৎসবে একসঙ্গে ১ হাজার ৫০০ মুসল্লি মসজিদ ও আশপাশ এলাকায় নামাজ আদায় করেন।
ক্রিস্টাল মসজিদকে ইন্টেলিজেন্ট মসজিদও বলা হয়। কারণ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করা হয়েছে মসজিদ নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার নানা ক্ষেত্রে। ওয়াইফাই ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে পবিত্র কোরআন পাঠসহ নানা সুবিধার কারণে আধুনিক ও তরুণ সমাজের প্রিয় ইবাদতের স্থান এই ক্রিস্টাল মসজিদ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অনেক পর্যটক একটি অসাধারণ এবাদতখানা দেখার প্রত্যাশা নিয়ে এই এলাকায় তথা এ মসজিদে আসেন।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত মেজর, গবেষক,
বিশ্লেষক ও কলামিস্ট