মহররম মাসের ফজিলত

হিজরি বর্ষপঞ্জির ১২ মাস। প্রতিটি মাসেরই ব্যতিক্রমী কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মহররম প্রথম মাস। আরবিতে বলা হয় ‘আল মুহাররমুল হারাম’, অর্থাৎ সম্মানিত মাস। রমজান-পরবর্তী এ মাসটি বিভিন্ন দিক বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ও বিশিষ্টগুলো হলো— হিজরি সনের প্রথম মাস : ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনীন উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে হিজরি সন গণনা শুরু হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরত রবিউল আওয়াল মাসে হলেও প্রাচীন আরবের প্রচলন অনুসারে হিজরি সনের প্রথম মাস হিসেবে স্বীকৃতি পায় মহররম মাস। আল্লাহর মাস : মহররম মাসের বিরল সম্মান বোঝানোর জন্য হাদিস শরিফে মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ অর্থাৎ, ‘আল্লাহর মাস’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। হিজরি সনের অন্য কোনো মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়নি। এটি মহররম মাসের একক বৈশিষ্ট্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ (মুসলিম : ১৯৮২) সম্মানিত চার মাসের একটি : হিজরি সনের বারো মাসের মধ্যে চারটি মাসকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সম্মানিত বলেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২। যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অবিচার করো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)। সাহাবি আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বারো মাসে বছর, তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক তথা, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর (চতুর্থটি হলো) মুজারের (গোত্র) রজব যা জুমাদাল উখরা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি : ২৯৫৮; মুসলিম : ১৬৭৯) আশুরার দিন : মহররম মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসের দশম তারিখ পবিত্র আশুরার দিন। যা অত্যন্ত তাৎপর্য ও মাহাত্ম্যপূর্ণ। এদিন রোজা রাখার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে এ দিনে রোজা রেখেছেন এবং স্বীয় উম্মতকে রোজা রাখার ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহ প্রদান করেছেন। হজরত আবু কাতাদা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, ‘এই রোজা বিগত এক বছরের গুনাহ মুছে দেয়।’ (মুসলিম : ১১৬২)। হজরত আলি (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহতায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছিলেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি : ১/১৫৭) ঐতিহাসিক ঘটনাবলি : ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকেও মহররমের দশম তারিখ তথা আশুরার দিন অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। এ দিনে ইতিহাসের বড় বড় বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়। মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায় বনি ইসরাইল এ দিনে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পান এবং ফেরাউন তার অনুসারীরা লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখেন আশুরার দিনে ইহুদিরা রোজা রেখেছে। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা রেখেছ কেন? তারা উত্তর দিল, এ দিনটি একটি মহান দিন। এ পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন আর ফেরাউন ও তার বাহিনী কিবতি সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। তাদের উত্তর শুনে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, হজরত মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ (বুখারি : ৩৩৯৭; মুসলিম : ১১৩৯)। এ দিনে নুহ (আ.)-এর কিস্তি জুদি পাহাড়ে নোঙর করে। (মুসনাদে আহমদ)