প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। তামাক সেবনের সব প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ প্রদান করার উদ্দেশ্যে দিবসটি সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া দিবসটির উদ্দেশ্য তামাক ব্যবহারের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং মানবস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের ওপর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করানো। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘তামাক শিল্পের হস্তক্ষেপ থেকে শিশুদের সুরক্ষা’।
বাংলাদেশে সবচেয়ে কম মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য কিনতে পাওয়া যায়। ফলে দরিদ্রদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার বেশি। এজন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তামাকের প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। সবরকম তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে তার দ্বিগুণের বেশি অর্থ তামাকজাত রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হয়।
ধূমপান শুধু ব্যবহারকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে না, উপরন্তু যারা তাদের আশপাশে থাকে তারাও এর ক্ষতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে না। তারা না চাইলেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে, স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপান সংক্রামক এবং অসংক্রামক উভয় রোগ সৃষ্টি করে। বিশেষভাবে শিশু, নারী ও নারীর গর্ভের সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে দেশে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে যে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, তার কারণে প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের সম্মেলনে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেন।
তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা জানি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স প্রদান করে থাকে, তাদের আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করে। বর্তমানে দেখা যায়, মুদিদোকান থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় হচ্ছে। যখন একটি লাইসেন্স প্রদান করা হয়ে থাকে, তখন সুনির্দিষ্টভাবে কোন ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে সেটা উল্লেখ করা থাকে। তাই মুদিদোকানের জন্য লাইসেন্স নিয়ে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে আইন লঙ্ঘন ঘটে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যদি তার আওতাধীন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করে, তারা যে লাইসেন্স প্রদান করেছে তা সঠিকভাবে তদারকির জন্য, তাহলে তামাকজাত দ্রব্য যত্রতত্র বিক্রয় অনেকাংশে কমে আসবে।
বর্তমানে শিশু-কিশোরদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার হ্রাস করার জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশগুলো মেনে চলা প্রয়োজন—তামাক ও নিকোটিন পণ্যের দাম বাড়াতে হবে; ২১ বছর বয়সের নিচে কারও কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি না করা; সব তামাক ও নিকোটিন পণ্যের বিজ্ঞাপন এবং প্রচার নিষিদ্ধ করা; চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য মিডিয়ায় তামাক ও নিকোটিন পণ্য ব্যবহারের ভয়াবহতা তুলে ধরা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তামাক ও নিকোটিন পণ্য ব্যবহারের জন্য সব শিক্ষার্থীর স্ক্রিনিং করা যেতে পারে; যারা তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করেন তাদের শনাক্ত, পরামর্শ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
লেখক: সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল টু ভাইস চ্যান্সেলর কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ বিএসএমএমইউ