

হংকংয়ের তাই পো এলাকার ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসিক কমপ্লেক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এটিকে গত ৬০ বছরের মধ্যে হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছে চীনা প্রশাশন। এ ঘটনায় অন্তত ৯৪ জন নিহত হয়েছেন। এ বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চারটি ভবনে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এলেও ওপরের তলাগুলোতে এখনো আটকে থাকা মানুষের সন্ধান করছে উদ্ধারকারী দল। হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ২৭৯ জনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে ২৭৯ জন নিখোঁজ ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এই সংখ্যা আপডেট করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা লরেন্স লি জানান, তার স্ত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি বলেন, আগুন লাগার পর তাকে বের হতে বলেছিলাম। কিন্তু করিডোর ধোঁয়ায় ভরে যাওয়ায় তিনি আবার ফ্ল্যাটে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ইয়ায়ুকও তার বড় বোন শ্রী-ওয়াহিউনির সন্ধান পাননি। তিনি জানান, রাতভর ঘুম হয়নি এবং সকালে কনস্যুলেটে গিয়ে হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়েছেন।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার বিকেলে বাঁশের স্ক্যাফোল্ডিং ও নির্মাণ নেটিং থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সাতটি ভবনে। কর্তৃপক্ষের ধারণা, ভবনের বাহিরের কিছু উপকরণ অগ্নিরোধক মান পূরণ করেনি, যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিন নির্মাণ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অবহেলার অভিযোগে ম্যানস্লটার বা অনিচ্ছাকৃত হত্যার সন্দেহে তদন্ত চলছে।
কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নির্মাণ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকার জানিয়েছে, বড় ধরনের সংস্কারকাজ চলা সব আবাসিক ভবন তাৎক্ষণিকভাবে পরিদর্শন করা হবে এবং ধাপে ধাপে বাঁশের স্ক্যাফোল্ডিং নিষিদ্ধ করা হবে।
হংকংয়ের কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল জানিয়েছে, শহরে প্রায় ২,৫০০ নিবন্ধিত বাঁশ স্ক্যাফোল্ড কর্মী আছে এবং ২০১৮ সাল থেকে এ কাজে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াং ফুক কোর্টের প্রায় দুই হাজার ফ্ল্যাটে চার হাজার ৮০০ মানুষ বসবাস করতেন। বাসিন্দাদের অনেকেই প্রবীণ। ১৯৮০-এর দশকে নির্মিত এই কমপ্লেক্সে বর্তমানে বড় ধরনের সংস্কার প্রকল্প চলছিল।
সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৩০ কোটি হংকং ডলার (৩৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার) সাহায্য তহবিল ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি শাওমি, শিয়াওপেং, জিলিসহ চীনের বহু কোম্পানি ও জ্যাক মা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মন্তব্য করুন