ভূ-রাজনীতি থেকে কাঁচামরিচ বাজার—দেশের সব সমস্যা সমাধান করতে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট জটিলতার চাপও প্রধানমন্ত্রীর ওপর ঠেলে দেওয়া হচ্ছে! শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তামিম ইকবাল-সংক্রান্ত জটিলতা সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া গেছে বটে, তবে এ ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে ক্রিকেটের দুরবস্থা দেখিয়ে গেল।
একদিকে কথা বলা কিংবা হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সীমারেখা মানছেন না ক্রিকেট প্রশাসকরা, অন্যদিকে দায়বদ্ধতার জায়গাটাকে ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন ক্রিকেটাররা। জনপ্রিয়তা বাড়ছে, বিস্তৃত হচ্ছে ক্রিকেটের পরিধি; কিন্তু সমানুপাতিক হারে বাড়েনি পেশাদারিত্ব। পেশাদারিত্বের মোড়কে ক্রিকেট পরিচালিত হচ্ছে আবেগ দিয়ে। সীমারেখা ভুলে গিয়ে টেকনিক্যাল বিষয়, দল নির্বাচন এমনকি একাদশ নির্বাচন নিয়ে ক্রিকেট প্রশাসকদের কথা বলা যেমন দৃষ্টিকটু, দৃষ্টিকটু হয়ে থাকছে একজন ক্রিকেটারের খেলা না-খেলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজালও! নির্দিষ্ট মানদণ্ডের মাপকাঠিতে টিম ম্যানেজমেন্ট ক্রিকেটারদের খেলার অনুমতি দেবে—এ কাজটা সঠিকভাবে করা হলে তো এখানে কারও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। একাদশে সুযোগ পাওয়া কোনো ক্রিকেটার নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশের জায়গা নেই। সব মিলিয়ে ছোট একটা ধাক্কা ক্রিকেটের অনেক ফাঁকফোকর দেখিয়ে গেল। খেলার ঘোষণা দিয়ে হুট করে সরে দাঁড়ানোর সংস্কৃতিটা বহুলচর্চিত হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অতীতে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এমনটি করেছেন। পঞ্চপাণ্ডবের দুই সদস্যকে অনুসরণের পথেই হাঁটতে যাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। যদিও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তামিম-সংকট কেটে গেলেও সিনিয়রদের সম্মানজনক বিদায় সংক্রান্ত গুমোট ভাবটা কিন্তু এখনই কাটছে না। অধিনায়কের স্বাভাবিক বিদায়ের ইস্যুটা জাতীয় ফুটবল দলের কোচের অধ্যায় সমাপ্তির চেয়েও বেশি অনিশ্চয়তায় ঢেকে আছে! সে প্রক্রিয়ার কারণে হ্যাং হয়ে আছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। আনুষ্ঠানিক অবসরের সুযোগ পাননি, নিজ থেকেও সরে দাঁড়াননি নড়াইল এক্সপ্রেস। অবসর ভেঙে ফেরার ঘোষণা দেওয়া তামিম কোন প্রক্রিয়ায় ক্যারিয়ার শেষ করেন সেটাই দেখার বিষয়।
বিগত দিনে ক্রিকেটের
আলোচিত-সমালোচিত ঘটনায় বরাবরই পাবলিক সেন্টিমেন্ট ছিল ক্রিকেটারদের পক্ষে। সাম্প্রতিক ঘটনায় অধিকাংশ পাবলিককে পাশে পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু ক্রিকেটারদের এমন হুট-হাট সিদ্ধান্তগুলোর কারণে ক্রমেই সমালোচনাও ডালপালা মেলছে। বোদ্ধাদের মতে, ক্রিকেট প্রশাসকদের যেমন সীমারেখা থাকা উচিত, একই ভাবে ক্রিকেটারদেরও ভাবা উচিত— আমি কী করতে যাচ্ছি, কী করা উচিত।
সংকটের মেঘ আপাতত কেটে গেছে। কিন্তু তামিম ইকবাল ও ক্রিকেট প্রশাসদের অতীতের মতো সামনের দিনগুলোতেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। সে কাজ করতে গিয়ে পেছনের ক্ষোভ-অভিমান নতুন সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তাই ক্রিকেটার ও ক্রিকেট প্রশাসকদের উচিত পেছনের ভুল ঝেড়ে ফেলে নতুন একটা শুরুর প্রতি যত্নশীল হওয়া, যা দেশের ক্রিকেটকে অনাকাঙ্ক্ষিত জঞ্জাল ছেঁটে ফেলে এগিয়ে নিতে পারে।
মন্তব্য করুন