বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে ত্রুটিপূর্ণ দরপত্রের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন নীতিনির্ধারকরা। গত ২৯ জুলাই তৎকালীন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের এই টেন্ডারের শর্ত শিথিল করে দরপত্রের ব্যয় মঞ্জুরি দেয়। এমনকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) প্রদান করা হয়। শেষ পর্যন্ত সেই টেন্ডার বাতিল হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং উপদেষ্টা চূড়ান্ত দরপত্রের চুক্তি না করতে এবং অসম্পূর্ণ দরপত্রের পুনঃটেন্ডার করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসনে আজাদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত ‘শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন (কম্পোনেন্ট-২ দেশের আটটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ) শীর্ষক প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের অধীনে সরকারি অর্থায়নে জিওবি-৩ প্রোকিউরমেন্ট অব রেডিওলজি, এন্ডোস্কপি এবং পিএসিএস, আরআইএস ইক্যুইপমেন্ট) কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে মন্ত্রণালয় ওই দরপত্রের চূড়ান্ত অনুমোদন ও ব্যয় মঞ্জুরি করে। মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ জেড এম শারজিল হাসানের সই করা গত ২৯ জুলাইয়ের ব্যয় মঞ্জুরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন (কম্পোনেন্ট-২ দেশের আটটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ) শীর্ষক প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের অধীনে সরকারি অর্থায়নে জিওবি-৩ প্রোকিউরমেন্ট অব রেডিওলজি, এন্ডোস্কপি এবং পিএসিএস, আরআইএস ইক্যুইপমেন্ট) কিনতে ৪৯ কোটি ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫৫ টাকার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ এবং চলতি অর্থ বছরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় আলোচ্য ক্রয় প্যাকেজটি অন্তর্ভুক্তি সাপেক্ষে নিম্নবর্ণিত শর্তে নির্দেশক্রমে ব্যয় মঞ্জুরি জ্ঞাপন করা হলো।’
এ জেড এম শারজিল হাসান বলেন, এই দরপত্রের বিষয়ে আগের মন্ত্রী একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন এই প্রকল্পে কোনো নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। তার পরই দরপত্রটি অনুমোদন করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে গত ঈদুল আজহার ছুটির আগের দুদিন ১৪ ও ১৫ জুন (শুক্র ও শনিবার) ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ওই সময়ে সচিবালয়ে কর্মরত বেশির ভাগ কর্মকর্তাই ১৪ জুন বা তার আগেই নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই দরপত্র চূড়ান্ত করতে অনেক কর্মকর্তাকে অফিস করতে হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ঈদের আগে শুক্রবার অফিসে থেকে ব্যয় মঞ্জুরির নথি প্রস্তুত করান। পরদিন শনিবার সেই নথি অনুমোদন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছিলেন, টেন্ডারটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ওসব নথি যাচাই-বাছাই করে ছুটির দিনে ফাইল প্রস্তুত করিয়েছি। এমনকি শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী এতে অনুমোদন দেন। এমনিতেই বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পারার দুর্নাম রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তা ছাড়া এই প্রকল্পের অবকাঠামো প্রায় সম্পন্ন; তাই যন্ত্রপাতি কেনা জরুরি ছিল।
জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা সিদ্দিকা মাহতাব ১৪ জুন শুক্রবার ওই নথিতে সই করেন। নথিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের আটটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে সরকারি অর্থায়নে জিডি-৩ (রেডিওলজি, এন্ডোস্কপি অ্যান্ড পিএসিএস+আরআইএস ইক্যুইপমেন্ট) সংগ্রহে (৪৯ কোটি ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৫৫ টাকার) দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ, চুক্তিপত্র সম্পাদন ও ব্যয় মঞ্জুরি দিতে সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। সেখানে ১২টি শর্ত ছিল। গত ২৭ জুলাইয়ের ব্যয় মঞ্জুরিপত্রে আগের নথি বাতিল করা হয়েছে।