বশির হোসেন, খুলনা
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ এএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বদলি বাণিজ্যে বিপর্যস্ত খুলনার স্বাস্থ্য প্রশাসন

বদলি বাণিজ্যে বিপর্যস্ত খুলনার স্বাস্থ্য প্রশাসন

আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের চাহিদার ভিত্তিতে একের পর এক সংযুক্ত বদলি করে হাসপাতালগুলোতে অচলাবস্থা তৈরির অভিযোগ উঠেছে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মঞ্জুরুল মুর্শিদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে, বিভাগের সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেছেন ভয়ংকর এক সিন্ডিকেট। স্টেনোগ্রাফার ফরিদ আহমেদ মোল্যা তার এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা। বঙ্গবন্ধু পরিষদ খুলনার এই নেতার আত্মীয়করণ বদলি বাণিজ্য শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও চলছে বহালতবিয়তে।

খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালের একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মঞ্জুরুল মুর্শিদের এই সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা ফরিদ আহম্মেদ মোল্যা, স্টেনোগ্রাফার পদে, বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসে কর্মরত থাকলেও তাকে সবাই পিএ ফরিদ নামে চেনে।

জানা যায়, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের ফরিদ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক এমপি শেখ হেলালের নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তার প্রভাবে আধিপত্য বিস্তার করে রাখে খুলনার পুরো স্বাস্থ্য প্রশাসন। অপ্রদর্শিত আয়, মানি লন্ডারিং, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ দুদকের একাধিক মামলায় স্ত্রীসহ কারাবাস করলেও বারবার ফিরে আসেন মুর্শিদের আস্তানায়।

ফরিদের ভায়রা স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে চাকরি নেন বাগেরহাটে। সেখান থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি দিয়ে স্টুয়ার্ট হিসেবে পদায়ন করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আওয়ামীপন্থি ঠিকাদারদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে রোগীদের খাবার জালিয়াতির একাধিক অভিযোগ হাবিবের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের একাধিক পরিচালক বিভিন্ন সময় হাবিবকে কারণ দর্শানো নোটিশ ও ব্যবস্থা নিতে চাইলেও ফরিদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সম্ভব হয়নি। ভায়রা ফরিদের মাধ্যমে প্রতি মাসের মাসোহারা জমা হয় মুর্শিদের কাছে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ খুলনার জেলার সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চাকরি দিয়েছেন আত্মীয় নাজমুল হোসেনকে খুলনার পোর্ট হেলথ অফিসে। ২০ গ্রেডে চাকরি নিয়ে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন অফিস সহকারী। কিন্তু বছরের পর বছর ওই অফিসে প্রধান সহকারী খালি থাকার পরও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মঞ্জুরুল মুর্শিদের আশীর্বাদে কাউকে পদায়ন করা হয় না সেখানে। নাজমুলই অফিসের সব দায়িত্ব পালন করেন। শিপিং এজেন্টদের বিভিন্ন সার্টিফিকেটের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভাগ দেয় আত্মীয় ফরিদকে। ফরিদের বোনের ছেলে রাকিবুল ইসলাম আজিমকে পিয়ন পদে চাকরি দিলেও ফরিদের আশীর্বাদে এখন তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজের অফিস সহকারী। মেডিকেল কলেজে ফরিদের এজেন্ট রাকিবুল নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছে টাকা নিয়ে নিয়োগ দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়ালেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কোনো অধ্যক্ষ।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের অন্যতম মুরিদ খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মো. সাইদ। নিজের খেয়ালখুশিমতো বদলান উপজেলা স্বাস্থ্য কমকর্তাদের।

সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যারা আগে বটিয়াঘাটায় দায়িত্বে ছিলেন, তারা কালবেলাকে বলেন, বটিয়াঘাটায় কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চাকরি করতে হলে তাকে সাইদের সঙ্গে সখ্য রেখে চলতে হয়। এর আগে ডা. অপর্ণাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ ছাড়তে হয় সাইদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে।

সেখানকার বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, আমি গত দুই বছর এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা দিয়েছি। দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। সরকারের কাছে স্বীকৃতিও পেয়েছি। এখানে একটাই প্রতিবন্ধকতা, সেটি হলো সাইদ। দুর্নীতির এমন কোনো খাত নেই, যার সঙ্গে এই সাইদ জড়িত ছিল না।

কালবেলার অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার হোগলাডাঙ্গা নিজখামার এলাকায় চারতলা বাড়ি রয়েছে সাইদের। এ ছাড়া সাতক্ষীরা শহরে টেক্সটাইল মিলস সংলগ্ন এলাকায় তিনতলা বাড়ি ও গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। অথচ নিজে খুলনা নগরীর সিঅ্যান্ডবি আবাসিক এলাকায় একটি সরকারি বাড়ি অন্যের নামে বরাদ্দ নিয়ে থাকেন।

মুর্শিদের সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাতাব। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। ২০ গ্রেডের একজন কর্মচারী থেকে হয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের একাধিক তদন্তে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় তাকে। মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে আদালতে রিট করে বারবার এই পদে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। নিজের স্ত্রীকে চাকরি দিয়ে বানিয়েছেন একই দপ্তরের প্রধান সহকারী।

কালবেলার অনুসন্ধানে দেখা যায়, সোহেলের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে ফরিদের মাধ্যমে এই বদলি করা হয়। কিন্তু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এপিপি (বার্ষিক ক্রয়) পরিকল্পনা পক্রিয়াধীন থাকায় অভিজ্ঞতাহীন নতুন লোক নিতে সময়ক্ষেপণ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় সোহেল এসে উপপরিচালককে হুমকি দিলে তার ক্ষমতা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে বেরিয়ে আসে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের এক মুর্শিদ ও তার মুরিদদের স্বাস্থ্য সিন্ডিকেটের ভয়াবহ এ চিত্র।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ মোল্যা বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি সরাসরি না করলেও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। দুদক আমার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মামলা দায়ের করেছে। আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মঞ্জুরুল মুর্শিদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে অনৈতিক সংযুক্তি অর্ডার করেছি অস্বীকার করব না। এ ছাড়া তিনি কোনো আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি শুরু

মোদিকে নিয়ে চাটুকারিতা, বিপাকে বিক্রান্ত ম্যাসি

দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুপক্ষের ৩ ঘণ্টা সংঘর্ষ, যুবক নিহত

আমরা বাণিজ্যযুদ্ধ চাই না, তবে ভয়ও পাই না : চীন

বিয়ে করতে চান মালাইকা, আছেন প্রস্তাবের অপেক্ষায়

এনসিএল টি-টোয়েন্টির ফাইনালে কে পেলেন কত টাকার পুরস্কার

যশোরে কনকা, গ্রি ও হাইকো ব্র্যান্ডের ডিসপ্লে সেন্টার উদ্বোধন

ঘুম থেকে উঠেই কফি ডেকে আনছে যেসব বিপদ

কুয়াশা আর শিশিরে হেমন্তেই শীতের হাতছানি

আসছে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ

১০

ভিটামিন ট্যাবলেট কখন ও কীভাবে খাবেন

১১

সুন্দরবনে ফুট ট্রেইলে ঘুরছে বাঘ

১২

ফ্রান্সে নতুন সরকার গঠন করলেন লেকর্নু

১৩

ক্লাসের ফাঁকে ‘চা খেতে’ গিয়ে ধরা ইবি ছাত্রলীগ নেতা

১৪

টেরিটরি ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে নিটল-নিলয় গ্রুপ

১৫

১৩ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

ওজন কমাতে সকালের শুরুটা হোক সঠিক খাবার দিয়ে

১৭

১৩ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৮

অ্যাপ্লায়েন্স বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে ওয়ালটন

১৯

সুলতান’স ডাইনে চাকরির সুযোগ, আজই আবেদন করুন

২০
X