হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই চোখে পড়ে নিচে জমা পানি। আটকে রয়েছে ধুলাবালুসহ আবর্জনাও। সিঁড়িতে যেদিকে চোখ যায়, সেখানে দেখা যায় পানের পিক, রোগীর রক্ত, কলার খোসা, নোংরা কাপড়, পলিথিন ইত্যাদি। পাঁচতলায় মেডিসিন (নারী) ওয়ার্ডের ব্যালকনিতে গিয়ে মনে হয়, এটা যেন আবর্জনার ভাগাড়। প্রতিটি বেডের নিচে ধুলা-ময়লা জমে রয়েছে। একই অবস্থা চার তলায় পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডেও। গতকাল শনিবার সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকদিন ধরে পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধযুক্ত টয়লেটগুলো আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। এ ছাড়া বেডের ওপরে ও নিচে শতশত তেলাপোকার উপদ্রব রোগীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাবার, কাপড়-চোপড় যেখানেই রাখা হয়, সেখানে ঢুকে পড়ে তেলাপোকা।
প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রতিটি বেডেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ত্যক্ত রোগী ও তার স্বজনরা। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কোনো সুরাহা মিলছে না।
পাভেল নামে সার্জারি ওয়ার্ডের ক্ষুব্ধ এক রোগী বলেন, ‘এইডা কি কুনো হাসপাতাল? এইহ্যানে ভালো মানুষ আইস্যাই তো রোগী অইয়্যা যাইব। দুই দিন ধইর্যা আছি, এ্যাহন পর্যন্ত হাসপাতালের ফ্লোর পরিষ্কার করতে দেহি নাই। বাথরুমে পানি নাই, ফ্যানগুলো ঠিকমতো ঘুরে না।’
একই ওয়ার্ডে পায়ে ইনফেকশন নিয়ে ভর্তি রয়েছেন শহরের দিয়ার ধানগড়া মহল্লার বাবু সেখ। তিনি বলেন, ১৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি, ডাক্তার ভালো করে দেখেন না। ইন্টার্নি ডাক্তার আর মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্টরা দেখেন। বিছানার চাঁদর নোংরা, ১৪ দিনে একবারও বদলানো হয়নি।
কথা হয় পাইকোশা গ্রামের নুরুল আমিন, ঘুড়কা বেলতলা এলাকার সজল, শান্তনা, হোসেনপুর মহল্লার জোবেদাসহ মেডিসিন ও সার্জারি ওয়ার্ডের বেশ কয়েক রোগীর সঙ্গে।
তাদের দাবি, এই হাসপাতালে এসে ভুল করেছেন। এমন নোংরা জঘন্য হাসপাতালে সুস্থ হওয়া দূরে থাক—রোগ আরও বেড়ে যাবে। প্রতিটি বেডের নিচে অসংখ্য তেলাপোকা যেন দেখার কেউ নেই। খাবার খেতে বসলে তেলাপোকাও হানা দেয়। হাসপাতালের আরএমও ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, লোকবল সংকটের কারণে হাসপাতাল পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকিকুন নাহার বলেন, ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে বর্তমানে রোগী রয়েছে ৩২১ জন। অতিরিক্ত রোগী বারান্দা ও ফ্লোরে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। এখানে আউটসোর্সিংয়ে রাজস্ব খাতে ৩৪ ও উন্নয়ন খাতে ২৯ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু গত জুন মাসে এদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে এখনো টেন্ডার হয়নি। আমরা অধিদপ্তরে লিখে পাঠিয়েছি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে হাসপাতালটি এখন নোংরা রয়েছে বলে স্বীকার করেন।