রীতা ভৌমিক
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৬ এএম
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখবে কন্যাশিশুরা

আজ আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস
নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখবে কন্যাশিশুরা

আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস আজ। বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ রাষ্ট্রগুলো প্রতি বছর ১১ অক্টোবর পালন করে আসছে দিবসটি। এটি মেয়েদের দিন হিসেবেও পরিচিত। এ দিবসের উদ্দেশ্য মেয়েদের কণ্ঠস্বর, কাজ এবং নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেওয়া। আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘গার্লস ভিশন ফর দ্য ফিউচার’।

কন্যাশিশুরা দেখবে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। কন্যাদেরও ভবিষ্যৎ দেখার অধিকার রয়েছে। ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের চিত্র দেখলেই তা বোঝা যায়। কারণ দেশজুড়ে ছাত্রী, কন্যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন জীবন বাজি রেখে। রাজধানীর বাসাবো, বনশ্রী, নন্দীপাড়ার বিদ্যালয়গুলো পর্যালোচনা করলেই দেখা যায়, প্রায় ২৫০-এরও বেশি ছাত্রী অংশ নিয়েছিল এই গণঅভ্যুত্থানে। তাদের একটাই দাবি ছিল, ভাইদের ওপর আক্রমণ হবে, আর বোনেরা ঘরে বসে থাকবে এটা হতে পারে না। এই ভাবনা থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীরা।

এই মেয়েরা ভবিষ্যৎকে কীভাবে দেখছে। কথা হলো তাদেরই একজন তাজিন আক্তার জুঁইয়ের সঙ্গে। পূর্ব বাসাবো কদমতলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।

তাজিন আক্তার জুঁই (১৫) কালবেলাকে বলে, আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চেয়েছি, যেখানে মেয়েরা কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবে না। যে কোনো সময় রাস্তায় নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। রাতে ফুটপাতে আলোর ব্যবস্থা থাকবে। ইতিহাস-পাঠ্য বইতে সব সময়ের এবং সঠিক ইতিহাস পড়তে পারবে। ভবিষ্যতে স্বপ্ন দেখি একজন সাংবাদিক হওয়ার। একজন সাংবাদিকই পারেন পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থেকে বেরিয়ে আসতে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাসাবোর সমন্বয়ক ফাতেমা তুজ জোহরা বুশরা। গাজীপুরের টঙ্গীতে বিজিএমইএ ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বনশ্রীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৮ জুলাই বাঁ পায়ে ছররা গুলি লাগে তার।

ফাতেমা তুজ জোহরা বুশরার মতে, রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা ভবিষ্যৎকে এভাবে দেখছি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে মেয়েরা যাতে অবহেলার শিকার না হয়। তারা যদি হয়রানি, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে অপরাধী যেন শাস্তি পায়। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে। রাষ্ট্রের প্রতিটি মেয়েকে তার সুরক্ষায় মার্শাল আট শেখানোর ব্যবস্থা করা। কর্মক্ষেত্রে তারা যেন যৌন হয়রানির শিকার না হয়। মেধা দিয়ে সেরাটা দিতে পারে।

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রীই অংশ নিয়েছিল এই আন্দোলনে। তাদেরই একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রওনক জাহান।

রওনক জাহানের মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক দফায় দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কথা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনীতিতে নারীর অবস্থান পরিবর্তন হওয়া দরকার। পূর্বের সংসদগুলোতে সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ সদস্যরা নীতি নির্ধারণীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন না। এই অবস্থার পরিবর্তন করে নীতি নির্ধারণীতে নারী সংসদ সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিতেও মেয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। কারণ মেয়ে শিক্ষার্থীরা শোপিসের মতো আসন অলংকৃত করতেন। ভবিষ্যতে এই ছাত্রী নেত্রীরা যাতে নিজেদের মতামত, চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারে এই স্বপ্ন দেখি।

কন্যাশিশুদের শিক্ষা পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত হয়নি। এখনো আমাদের সমাজের মানুষ মনে করে, বিয়ের পর মেয়ের লেখাপড়ার প্রয়োজন নেই। এই চিন্তা-ভাবনা, মানসিকতা পরিবর্তন আনতে চাই। আগামীর কন্যাশিশুদের জন্য সুন্দর ও সুরক্ষিত সমাজ এবং রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যাশা করি।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, অগ্রগতির ক্ষেত্রে মেয়েদের অবস্থান ও ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকা রয়েছে। আরও এগিয়ে যেতে চাইলে জন্মের পর থেকে কন্যা, মেয়ে, নারীদের প্রতি সব বঞ্চনা, নিগ্রহ, নির্যাতনের অবসান হওয়া দরকার। কন্যাশিশুদের ওপর নির্যাতন পুরো জাতির অগ্রগতিকে ব্যাহত করে। এই বাধাগুলো না থাকলে কন্যাশিশুরা অনেক এগিয়ে যেতে পারত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্য ৫ লাখের বেশি

অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়া নিয়ে যা বললেন রাবি ভিসি

কোন বোর্ডে কতজন জিপিএ-৫ পেলেন?

ভোটার তালিকা দেখতে পারছেন না এজেন্টরা, অভিযোগ ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থীর

অনলাইনে এইচএসসির ফলাফল দ্রুত জানবেন যেভাবে

ঘষা দিলেই উঠে যাচ্ছে ‘অমোচনীয়’ কালি

কারিগরিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬১০ জন, পাসের হার কত?

ভোটগ্রহণের আগেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ

৩৪৫ প্রতিষ্ঠানে সবাই পাস

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার গুঞ্জনে মুখ খুললেন সোনাক্ষী

১০

এইচএসসি: কোন বোর্ডের ফল পেতে কীভাবে এসএমএস পাঠাবেন

১১

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৬১, জিপিএ-৫ কত?

১২

এইচএসসি পরীক্ষায় কোন বোর্ড এগিয়ে, পিছিয়ে যে বোর্ড

১৩

২০২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই অকৃতকার্য 

১৪

‘জীবনের প্রথম ভোট, খুবই ভালো লাগছে’

১৫

এইচএসসিতে জিপিএ ৫-এর সংখ্যা কমলো অর্ধেকেরও বেশি

১৬

তিন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নাম লেখালেন সাকিব

১৭

এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, কোন বোর্ডে পাসের হার কত

১৮

ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা গেছেন কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী

১৯

‘যেভাবে আমাদের প্রতি ঘৃণা, গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছে তা কষ্ট দেয়’

২০
X